🔹 চৈতন্য মহাপ্রভুই প্রথম মানুষ, যাঁকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগে জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে। চৈতন্যদেব মধ্যযুগের অন্ধকারে আর্বিভূত অমৃতময় পুরুষ। তিনি মানব না মহামানব, না সাক্ষাৎ দেবতা! বৈষ্ণবদের কাছে চৈতন্য মহাপ্রভু হলেন কৃষ্ণের অবতার, কলির কৃষ্ণ।
🔹 চৈতন্যদেবর জীবৎকালে চৈতন্য চর্চা করেছেন শ্রী অদ্বৈতাচার্য। চৈতন্যদেবকে তিনি নবরূপী নারায়ন বলেছেন।
🔹 বাংলা ভাষার প্রথম চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ বৃন্দাবন দাস রচিত “চৈতন্যভাগবত”।
অবশ্য কোন কোন সমালোচক বলেছেন, চৈতন্যদেবের পার্ষদ বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়ের লেখা “শ্রীগৌরলীলামৃত” বাংলা ভাষার প্রথম চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ। বিমানবিহারী মজুমদারের মতে - পণ্ডিতেরা জানিয়েছেন, বংশীবদন চট্টোপাধ্যায় “শ্রীগৌরলীলামৃত” রচনা করেন ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দের অল্প পরে। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন - আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ।
“চৈতন্যভাগবত” রচয়িতা : বৃন্দাবন দাস
🔹 জন্ম 👉 ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়া জেলার নবদ্বীপে ব্রাহ্মণ পরিবারে।
🔹 পিতা 👉 বৈকুণ্ঠ দাস।
🔹 মাতা 👉 নারায়ণী দেবী।
🔹 গুরু 👉 নিত্যানন্দ।
🔹 রচিত গ্রন্থ 👉 “চৈতন্যভাগবত”, ১৫৪৮ খ্রিষ্টাব্দে রচিত (বিমানবিহারি মজুমদারের মতে)।
🔹 মৃত্যু 👉 ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে।
🔹 তাঁর রচিত “চৈতন্যভাগবত” গ্রন্থটি ৩ টি খণ্ডে রচিত।
প্রথম খণ্ডে - ১৫ টি,
দ্বিতীয় খণ্ডে - ২৬ টি এবং
তৃতীয় খণ্ডে - ১০ টি অধ্যায়,
অর্থাৎ ৩ টি খণ্ডে মোট ৫১ টি অধ্যায় বর্তমান।
🔹 “চৈতন্যভাগবত” -এর ছত্র সংখ্যা প্রায় ২৫,০০০।
🔹 “চৈতন্যভাগবত” গ্রন্থের ৩ টি খণ্ডের মধ্যে অদিখণ্ড অর্থাৎ প্রথম খণ্ডটি শ্রেষ্ঠ।
🔹 দিক্ষাগুরু নিত্যানন্দের প্রেরণায় কবি “চৈতন্যভাগবত” গ্রন্থটি রচনা করেন।
আরও পড়ুন - আলোচনা : বাংলা সাহিত্যে এলিজি বা শোকপ্রকাশক কবিতা।
🔹 প্রথমে “চৈতন্যভাগবত” গ্রন্থটির নাম ছিল “চৈতন্যমঙ্গল”। এই তথ্য আমরা পাই “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে।
🔹 বৃন্দাবন দাস গুরু নিত্যানন্দের কাছে চৈতন্য জীবনীর অধিকাংশ উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন।
🔹 কাব্য পরিকল্পনায় বৃন্দাবন দাস মুরারি গুপ্তের “কড়চা” দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
🔹 কৃষ্ণদাস কবিরাজ বৃন্দাবন দাসকে ‘ব্যাস’ -এর সাথে তুলনা করে বলেছেন - “চৈতন্য চরিতে ব্যাস বৃন্দাবন দাস”।
🔹 কবি কর্ণপুর বৃন্দাবন দাসকে ‘বেদব্যাস’ বলেছেন।
🔹 চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ লেখার জন্য বৃন্দাবন দাস বৈষ্ণব সমাজে ‘চৈতন্যলীলার ব্যাস’ বলে সন্মানিত হয়েছেন।
🔹 বৃন্দাবন দাস চৈতন্য মহাপ্রভুকে কৃষ্ণের অবতার এবং গুরু নিত্যানন্দকে বলরামের অবতার বলে মনে করছেন।
🔹 বৃন্দাবন দাসের অন্ত খণ্ডটি অসম্পূর্ণ। এই অন্ত খণ্ডের অসম্পূর্ণতা পরবর্তীকালে কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর “চৈতন্যচরিতামৃত” গ্রন্থে পূর্ণ করেছেন।
আরও পড়ুন - আলোচনা : বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ ট্রিলজি লেখিকা।
“চৈতন্যভাগবত” কাব্যে :
🔹 চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রথম পত্নী - লক্ষ্মীপ্রিয়া।
🔹 জন্ম 👉 ১৪৮৯ খ্রিষ্টাব্দে।
🔹 পিতা 👉 বল্লভ আচার্য।
🔹 বিবাহ 👉 চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে বিবাহ হয় ১৫০১-১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে।
🔹 মৃত্যু 👉 ১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ পদের কনিষ্ঠা অঙ্গুলিতে সর্পাঘাতে।
🔹 “চৈতন্যভাগবতে” বৃন্দাবন দাস ৪২ টি শ্লোকে লক্ষ্মীপ্রিয়ার সাথে চৈতন্য দেবের বিবাহের বর্ণনা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন - বাংলা সাহিত্যে “সায়েন্স ফিকশন” জাতীয় গ্রন্থ রচনার স্রষ্টা।
🔹 চৈতন্য মহাপ্রভুর দ্বিতীয় পত্নী 👉 বিষ্ণুপ্রিয়া।
🔹 পিতা 👉 মহাবংশজাত রাজপণ্ডিত সনাতন।
🔹 বিবাহের ঘটক 👉 কাশীনাথ পণ্ডিত।
🔹 বিবাহ 👉 চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে বিষ্ণুপ্রিয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয় ১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দে।
2 Comments
তথ্যবহুল পোস্ট
ReplyDeleteThank You......
ReplyDelete