• জন্ম – ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে মার্চ অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশালে কীর্তনখোলায় বৈদ্য বংশে ।
যদিও তাঁর নিজের মতে তাঁর জন্ম শিলঙে ।
• সম্পূর্ণ নাম - উৎপলরঞ্জন দত্ত ।
• ডাকনাম – শঙ্কর ।
• পিতা – গিরিজারঞ্জন দত্ত, ছিলেন বঙ্গবাসী কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের খ্যাতিমান অধ্যাপক ।
• মাতা – শৈলবালা দেবী ।
• আদিনিবাস – বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লায় ।
• শিক্ষা জীবন – তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা শিলঙের সেন্ট এডমণ্ড স্কুলে ।
পরে কলকাতার সেন্ট লরেন্স স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন ।
১৯৪৫-৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হন ।
• মৃত্যু – বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী নাট্যব্যক্তিত্ব উৎপল দত্তের সৃষ্টিশীল জীবনের অবসান ঘটে ১৯৯৩ সালের ১৯ শে আগষ্ট ।
[ আরও পড়ুন : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ]
• উৎপল দত্তের কাছে নাটক –
“নাটক মানে সংগ্রাম, নাটক সংগ্রামের হাতিয়ার।"
• উৎপল দত্ত নিজেকে ‘প্রোপাগান্ডিস্ট’ বলতেন।
• কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে “দি অ্যামেচার শেক্সপিয়রিয়ানস” নাট্যদল গড়ে তোলেন ।
এই নাট্যদল “রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট” এবং “ম্যাকবেথ” নাটকের নির্বাচিত দৃশ্য অভিনয় করে ।
• ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে উৎপল দত্ত 'পিপলস লিটল থিয়েটার’ নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন ।
• উৎপল দত্তের লেখা প্রথম নাটক “ছায়ানট”। নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
• কলেজ পত্রিকার জন্য উৎপল দত্ত “বেটি বেলশাজার” নামে প্রথম ইংরেজি নাটক রচনা করেছিলেন।
• ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে নিকোলাই গোগোলের “ডায়মন্ড কাটস ডায়মন্ড” -এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কলেজ জীবনে উৎপল দত্তের নাট্য অভিনয়ের শুরু ।
• ইন্টারমিডিয়েট -এ কলেজ পত্রিকায় উৎপল দত্ত দুটি প্রবন্ধ রচনা করেন –
১. A Glance at Modern Russian Literature ১৯৪৬
২. বাস্তবতা ও বাংলা সাহিত্য ১৯৪৭
• উৎপল দত্ত তাঁর ৬৪ বছরের জীবনে ৮২ টি নাটক, ২১ টি যাত্রাপালা, ১৫ টি অনুবাদ নাটক রচনা করেন ।
উৎপল দত্ত রচিত নাটক :
• ছায়ানট ১৯৫৮• অঙ্গার ১৯৫৯
• ফেরারী ফৌজ ১৯৬১
• রাতের অতিথি ১৯৬৩
• মেঘ ১৯৬৩
• চৈতালি রাতের স্বপ্ন ১৯৬৪
• কল্লোল ১৯৬৫
• লৌহমানব ১৯৬৬
• এক দেহে লীন ১৯৬৬
• মা ১৯৬৭
• মানুষের অধিকার ১৯৬৮
• টোটা বা মহাবিদ্রোহ ১৯৬৮
• রাইফেল ১৯৬৮
• শোন রে মালিক ১৯৬৯
• টিনের তলোয়ার ১৯৭১
• সূর্যশিকার ১৯৭১
• ব্যারিকেড ১৯৭২
• হিমালয়ে জীবন্ত মানুষ ১৯৭৩
• দুঃস্বপ্নের নগরী ১৯৭৪
• লেনিন কোথায় ১৯৭৬
• দিন বদলের দ্বিতীয় পালা ১৯৭৭
• অরণ্যের ঘুম ভাঙছে ১৯৭৮
• তিতুমীর ১৯৭৮
• চক্রান্ত ১৯৭৯
• স্তালিন – ১৯৩৪ ১৯৭৯
• কালো হাত ১৯৭৯
• সাদা পোশাক ১৯৭৯
• দাঁড়াও পথিকবর ১৯৮০
• কুঠার ১৯৮০
• অসমাপ্ত সংলাপ ১৯৮৩
• আজকের সাজাহান ১৯৮৫
• মুমূর্ষ বাংলা ১৯৮৫
• অগ্নিশয্যা ১৯৮৮
• হমে দেখনা হ্যায় ১৯৮৯
• নীল সাদা লাল ১৯৮৯
• একলা চলো রে ১৯৮৯
• লাল দুর্গ ১৯৯০
• জনতার আফিম ১৯৯১
উৎপল দত্ত রচিত যাত্রাপালা :
• নীল রক্ত ১৯৭২• জালিয়ানওয়ালাবাগ ১৯৭২
• দিল্লী চলো ১৯৭৩
• সন্ন্যাসীর তরবারি ১৯৭৪
• বৈশাখী মেঘ ১৯৭৮
• তুরুপের তাস ১৯৮০
• স্বাধীনতার ফাঁকি ১৯৮৩
• সীমান্ত ১৯৮৪
উৎপল দত্তের অনুবাদমূলক নাটক :
• বিচারের বাণী (জন গল্সওয়ার্দির The Silver Box অবলম্বনে)• চাঁদির কৌটা (প্রেমচন্দের হিন্দি অনুবাদের তথ্য ঋণ স্বীকার)
• মধুচক্র (জর্জ বার্নার্ড শ -র Mrs. Warren's Profession অবলম্বনে)
• হিম্মৎবাঈ (বারটোল্ট ব্রেখট এর Die Mutterund her Kinder অবলম্বনে)
• প্রফেসর মামলক (জার্মান ফ্রিডরিশ ভোলফের Professor Mumlock অবলম্বনে)
• সূর্যশিকার (ব্রেখটের “গ্যালিলেওর জীবন” এবং পিটার শ্যাফারের The Royal Hunt of the Sun অবলম্বনে)
• সমাধান (ব্রেখটের “ডি মাসনামে” নাটকের অনুবাদ)
[ আরও পড়ুন : “পথের পাঁচালী” -র রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ]
উৎপল দত্ত রচিত নাট্য বিষয়ক গ্রন্থ :
• চায়ের ধোঁয়া ১৯৬৪• শেক্সপিয়ারের সমাজচেতনা ১৯৭২
• গিরিশ মানস ১৯৮৩
• থিয়েটার কে জনগনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য উৎপল দত্ত ‘প্রসেনিয়াম’ এবং ‘এপিক থিয়েটার’ নামে দুটি থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা করেন ।
• উৎপল দত্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “বিসর্জন” নাটক পরিচালনা করেন এবং গোবিন্দমানিক্য চরিত্রে অভিনয় ও করেন ।
• উৎপল দত্ত মধুসূদন দত্তের জীবন নিয়ে রচনা করেন “দাঁড়াও পথিকবর”।
• উৎপল দত্ত রচিত “ব্যারিকেড”, “দুঃস্বপ্নের নগরী” এবং “এবার রাজার পালা” রাজনৈতিক ত্রয়ী রূপে চিহ্নিত ।
“অঙ্গার” :
• নাটকটির প্রথম নাম ছিল “কালো হীরে” ।• নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে মিনার্ভা থিয়েটারে ।
• আসানসোলের শেলডন কোলিয়ারির শ্রমিকদের সংগ্রামময় জীবন, মালিকদের নির্মম শোষণ ও অত্যাচার এবং শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, বিক্ষোভ কে কেন্দ্র করে এই নাটকটি রচিত ।
• এই নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর “ঝিলিমিলি” দিনলিপি তে লেখেন –
“অঙ্গার’ দেখে এলাম। এই ধরনের নাটক বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না। অন্য ভাষায় আছে নাকি? নাট্যমঞ্চের সাজসরঞ্জাম যাকে Production ও Stage Craft বলে, চমৎকার। শেষ দৃশ্যটি অপূর্ব।”
“কল্লোল” :
• যুদ্ধজাহাজ খাইবার এবং ১৯৪৬ এর নৌবিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে রচিত।• এই নাটক দেখে জাতীয় কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং এই নাটকটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
• এই নাটকের জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।
• বাজারি সংবাদ পত্রগুলো এই নাটকের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেও আলোকচিত্র শিল্পী তাপস সেন এর পোস্টার - “কল্লোল চলছে চলবে” ক্রমশ এক আন্দোলনের চেহারা নেয়। শ্রী সত্যজিৎ রায় স্বয়ং এর নেতৃত্ব দেন।
“প্রোফেসর মামলক” :
• ইহুদী নিধনের নির্মম ঘটনাবলী এর উপজীব্য।“অজেয় ভিয়েতনাম” :
• মার্কিন আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে রচনা করেন।“ক্রুশবিদ্ধ কুবা” :
• কুবার তরোয়ানা শহরে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইস্টারে চে ফিদেলপন্থী অভ্যুত্থানের এক রুদ্ধশ্বাস বিবরণ রয়েছে এই নাটকে।“ঠিকানা” :
• ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মুক্তি সংগ্রামের কাহিনী রয়েছে এই নাটকে।“যুদ্ধং দেহি” :
• এই রূপক নাটকে রয়েছে তীব্র ব্যঙ্গের কষাঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের মূল কারণ নির্দেশ এবং যুদ্ধ ব্যবসায় রাষ্ট্রনেতাদের কদর্য মুনাফা বৃত্তির স্বরূপ উদঘাটন।“সমাজতান্ত্রিক চাল” :
• চুঁচুড়া কোর্টের সামনে কৃষক জমায়েতে খাদ্য আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত।“স্পেশাল ট্রেন” :
• হিন্দ মোটর কোম্পানির হরতাল এবং শ্রমিক সংগ্রামের পটভূমিতে নাটকটি রচিত।[ আরও পড়ুন : নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ ]
উৎপল দত্ত রচিত যে নাটকগুলো মিনার্ভা থিয়েটারে অভিনীত হয়:
• তিতাস একটি নদীর নাম ১৯৬৩• কল্লোল ১৯৬৫
• প্রফেসর মামলক ১৯৬৫
• অজেয় ভিয়েতনাম ১৯৬৬
• দিন বদলের পালা ১৯৬৭
• তীর ১৯৬৭
• মানুষের অধিকার ১৯৬৭
• ফেরারী ফৌজ ১৯৬৯
• লেনিনের ডাক ১৯৬৯
[ আরও পড়ুন : “যৌবন বসন্তের কবি” বুদ্ধদেব বসু ]
উৎপল দত্ত অভিনীত ও পরিচালিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র:
• মাইকেল মধুসূদন ১৯৫০• বিদ্যাসাগর ১৯৫০
• কীর্তিগড় ১৯৫৬
• মহাকবি গিরিশচন্দ্র ১৯৫৬
• কুহক ১৯৫৮
• উত্তরমেঘ ১৯৬০
• পঙ্কতিলক ১৯৬১
• সাক্ষী ১৯৬২
• কাঁচের স্বর্গ ১৯৬২
• শেষ অঙ্ক ১৯৬৩
• মোমের আলো ১৯৬৪
• মহাশ্বেতা ১৯৬৭
• চৌরঙ্গী ১৯৬৮
• বিবাহ বিভ্রাট ১৯৬৯
• কলঙ্কিত নায়ক ১৯৭০
• বৈশাখী মেঘ ১৯৮১
• মা ১৯৮২
• উৎপল দত্ত তাঁর “টিনের তলোয়ার” নাটকের বেণীমাধব চরিত্রে বলেছেন - “আমি শিক্ষক। আমি স্রষ্টা। আমি তাল তাল মাটি নিয়ে জীবন্ত প্রতিমা গড়ি। আমি একদিক থেকে ব্রহ্মার সমান। আমিই দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।”
[ আরও পড়ুন : “দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী ]
পোস্টটি আপনার সামান্যতম উপকারে এলে, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন । ধন্যবাদ....
contact@banglasahitto.in
fb.me/banglasahitto.in
twitter.com/banglasahitto
t.me/banglasahitto
0 Comments