Subscribe Us

বুদ্ধদেব বসু : “যৌবন বসন্তের কবি”

বুদ্ধদেব বসু : “যৌবন বসন্তের কবি”

“যৌবন বসন্তের কবি” বুদ্ধদেব বসু :


জন্ম – বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লায় ১৯০৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর ।

পিতা – ভূদেব বসু, ঢাকা বারের উকিল ছিলেন ।

মাতা – বিনয়কুমারী দেবী ।

পত্নী – প্রতিভা বসু ।

মাতামহ – চিন্তাহরণ সিংহ ।

মাতামহী – স্বর্ণলতা সিংহ । কবির জন্মের ২৪ ঘন্টা পরই মা মারা গেলে মাতামহ এবং মাতামহী কবিকে প্রতিপালন করেন ।

পৈতৃক আদি নিবাস – বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রাম ।

শিক্ষা জীবন – ১৯২৫ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করে ।
১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বুদ্ধদেব বসু আই.এ পাশ করেন ।
১৯৩০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ।
১৯৩১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রথম বিভাগে পাশ করে এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন ।

কর্ম জীবন – বুদ্ধদেব বসু ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের একজন যশস্বী অধ্যাপক ।
জীবনের শেষ পর্বে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন ।

মৃত্যু – ১৮ ই মার্চ ১৯৭৪ সালে বুদ্ধদেব বসু পরলোকগমন করেন ।

আরও পড়ুন : “দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী ]


কল্লোল যুগের তরুণতম প্রতিনিধি ছিলেন – বুদ্ধদেব বসু

বুদ্ধদেব বসু  আজীবন ব্যতিক্রম হীন ভাবে প্রেমের কবি । কবি নিজ সম্পর্কে বলেছেন –
“যা কিছু শিখেছি, সব, সবই ভালোবাসার কবিতা, কথা বুনে, ছন্দ গেঁথে, শব্দ ছেনে আমি শুধু ভালোইবেসেছি সবচেয়ে তীব্র, মত্ত, সত্য করে।”

বুদ্ধদেব বসু  শার্ল বোদলেয়ারের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বুদ্ধদেব বসু অজিত দত্তকে সহপাঠী হিসাবে পান ।

১৯২১ সালে অর্থাৎ ১৩২১ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যায় নারায়ণ মাসিক পত্রিকায় বুদ্ধদেব বসু -প্রথম কবিতা - “যাত্রী” প্রকাশিত হয় ।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধদেব বসু -র  প্রথম  কাব্যগ্রন্থ - “মর্মবাণী” প্রকাশিত হয় ।

“সাড়া” বুদ্ধদেব বসু -র প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস, যেটি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।

বুদ্ধদেব বসু  সম্পাদিত পত্রিকা – প্রগতি (১৯২৭), কবিতা (১৯৩৫) ।
ত্রৈমাসিক ‘কবিতা’ পত্রিকা টি বুদ্ধদেব বসু প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেনের সহযোগিতায় সম্পাদনা করেন ।

১৯৩৮ সালে বুদ্ধদেব বসু হুমায়ূন কবিরের সাথে ত্রৈমাসিক‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন ।

পত্রিকা সম্পাদনায় বুদ্ধদেব বসু -র প্রধান ৩ সহযোগী ছিলেন – গদ্য রচনায় প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, কবিতা সম্পাদনায় অজিত দত্ত

বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (বুদ্ধদেব বসু কনিষ্ঠতম) বন্ধুত্রয়ী একত্রে দুইখানি উপন্যাস রচনা করেন –
              ১. বিসর্পিল
              ২. বনশ্রী

আরও পড়ুন : নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র সম্পর্কে ]

বুদ্ধদেব বসু রচিত কাব্যগ্রন্থ :

মর্মবাণী ১৯২৫
বন্দীর বন্দনা ১৯৩০
পৃথিবীর পথে ১৯৩৩
কঙ্কাবতী ১৯৩৭, ১৯৪৩ (দ্বিতীয় সংস্করণ)
নতুন পাতা ১৯৪০
এক পয়সায় একটি ১৯৪২
দময়ন্তী ১৯৪৩
রূপান্তর ১৯৪৪
দ্রোপদীর শাড়ি ১৯৪৮
শীতের প্রার্থনা বসন্তের উত্তর ১৯৫৫
যে আঁধার আলোর অধিক ১৯৫৮
মরচে পড়া পেরেকের গান ১৯৬৬
স্বাগত বিদায় ১৯৭১

বুদ্ধদেব বসু রচিত কাব্যনাট্য :

তপস্বী ও তরঙ্গিনী‌ ১৯৬৬
কালসন্ধ্যা ১৯৬৯
পুর্ণমিলন
কলকাতার ইলেক্ট্রা ও সত্যসন্ধ

বুদ্ধদেব বসু রচিত উপন্যাস :

সাড়া ১৯৩০
অর্কমন্য ১৯৩১
মন দেয়া নেয়া ১৯৩২
রডোডেনড্রন গুচ্ছ ১৯৩২
সানন্দা ১৯৩৩
যেদিন ফুটল কমল ১৯৩৩
একদা তুমি প্রিয়ে ১৯৩৪
লাল মেঘ ১৯৩৪
পরিক্রমা ১৯৩৮
কালো হাওয়া ১৯৪২
তিথি ডোর ১৯৪৯
মৌলিনাথ ১৯৫২
রাত ভোর বৃষ্টি ১৯৬৭
পাতাল থেকে আলাপ ১৯৬৭
গোলাপ কেন কালো ১৯৬৮
বিপন্ন বিস্ময় ১৯৬৯
রুম্কি ১৯৭২

আরও পড়ুন : “স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ”-এর কবি সম্পর্কে ]


বুদ্ধদেব বসু রচিত গল্পগ্রন্থ :

রেখাচিত্র ও অন্যান্য গল্প ১৯৩১
এরা ওরা এবং আরো অনেক ১৯৩২
অদৃশ্য শত্রু ১৯৩৩
প্রেমের বিচিত্র গতি ১৯৩৪
মিসেস গুপ্ত ১৯৩৪
ঘরেতে ভ্রমর এল ১৯৩৫
নতুন লেখা ১৯৩৬
ফেরিওয়ালা ও অন্যান্য গল্প ১৯৪১
খাতার শেষ পাতা ১৯৪৩
হাওয়া বদল ১৯৪৩
ভাসো আমার ভেলা ১৯৬৩
হৃদয়ের জাগরণ ১৯৬৮
প্রেমপত্র ১৯৭২

বুদ্ধদেব বসু রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ :

হঠাৎ আলোর ঝলকানি ১৯৩৫
আমি চঞ্চল হে ১৯৩৬
সমুদ্র তীর‌ ১৯৩৭
সব পেয়েছির দেশ ১৯৪১
উত্তর তিরিশ ১৯৪৫
কালের পুতুল ১৯৪৬
রবীন্দ্রনাথ : কথাসাহিত্য ১৯৫৪
স্বদেশ ও সংস্কৃতি ১৯৫৭
সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রবীন্দ্রনাথ ১৯৬৩
কবি রবীন্দ্রনাথ ১৯৬৬

বুদ্ধদেব বসু রচিত স্মৃতিচারণা মূলক রচনা :

আমার ছেলেবেলা ১৯৭৩
আমার যৌবন ১৯৭৬

বুদ্ধদেব বসু রচিত নাটক :

অনেক রকম ১৯৩২ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “চিরকুমার সভা”র মত নাট্যোপন্যাস)
অসামান্য মেয়ে ১৯৩৪
মায়া মালঞ্চ ১৯৪৪

বুদ্ধদেব বসুর অনুদিত কাব্যগ্রন্থ :

মেঘদূত ১৯৫৭
শার্ল বোদলেয়ার : তাঁর কবিতা ১৯৬১
হোণ্ডার্লিনের কবিতা ১৯৬৭

আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথের পর ‘প্রথম মৌলিক কবি’ সম্পর্কে ]


বুদ্ধদেব বসু -র মতে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আধুনিক বাংলা কবিতার মুক্তি নেই । এই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন –
“গুরুদেবের কাব্যকলা মারাত্মক রূপে প্রতারক; সেই মোহিনী মায়ার প্রকৃতি না বুঝে বাঁশি শুনে ঘর ছাড়লে ডুবতে হবে চোরাবালিতে।”

বুদ্ধদেব বসু কতৃক উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন রচনা :

"মর্মবাণী" – দাদামহাশয় কে ।
"বন্দীর বন্দনা" – অজিত কুমার দত্ত কে ।
"নতুন পাতা" – স্ত্রী প্রতিভা বসু কে ।
"দময়ন্তী" – সমর সেন এবং জীবনানন্দ দাশ কে ।
"দ্রোপদীর শাড়ি" – সৌরেন সেন কে ।

কলেজের প্রথম বর্ষের শেষে বুদ্ধদেব বসু এলেন কলকাতায় ‘কল্লোল’ পত্রিকার অফিসে। সম্মুখীন হতে হল জীবনের প্রথম সাহিত্যিক-বিতর্কের। সৌজন্যে, বুদ্ধদেবের ‘রজনী হ’লো উতলা’ গল্পটি। অভিযোগ, তা অশ্লীল এবং চোরাই!

বিতর্কে ঘি ঢালল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, ‘আধুনিক সাহিত্য আমার চোখে পড়ে না। দৈবাৎ কখনো যেটুকু দেখি, দেখতে পাই, হঠাৎ কলমের আব্রু ঘুচে গেছে। আমি সেটাকে সুশ্রী বলি এমন ভুল করো না।

অশ্লীলতা-বিতর্ক বুদ্ধদেব বসুর ‘সাড়া’ উপন্যাসটিও বিদ্ধ। অভিযোগ আদালত, পুলিশ পর্যন্ত গড়াল। এর তীব্র প্রতিবাদে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখল:
 "...উপন্যাসের নর-নারীরা কিভাবে প্রেম নিবেদন বা হৃদয় বিনিময় করিবে, তাহার ‘হুদ্দা’ যদি পুলিশ-নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহা হইলে বাঙলা সাহিত্যের অতি শোচনীয় দুর্দিন সমাগত হইয়াছে বুঝিতে হইবে।"

প্রতিভা বসুর আগেও  বুদ্ধদেব বসুর জীবনে একটি  ভাল-লাগার গল্প আছে। ঢাকার পুরানা পল্টনের ‘একটি সদ্যযৌবনা প্রতিবেশিনীকে’ মনে-মনে ভালবেসেছিলেন বুদ্ধদেব। সে ভাল-লাগায় বাক্যালাপ ছিল না, ছিল ‘শুধু রাস্তার এপারে-ওপারে চোখের দেখা’। পরে "কঙ্কাবতী"-র দু’-একটি কবিতায় আর "ইচ্ছাপূরণকারী" একাঙ্ক নাটক ‘একটি মেয়ের জন্য’-য় সেই প্রতিবেশিনীকে বাঁচিয়ে রাখলেন বুদ্ধদেব।

আরও পড়ুন : বস্তুপণ্যের প্রচারে প্রথম প্রদেয় পুরস্কার ]


নিতান্তই কিশোর বয়সে লেখা বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপলব্ধি করেছিলেন –
“কেবল কবিত্ব শক্তিমাত্র নয়, এর মধ্যে কবিতার প্রতিভা রয়েছে, একদিন প্রকাশ পাবে।”


বুদ্ধদেব বসুর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা :

১৯৬৭ সালে “তপস্বী ও তরঙ্গিনী” কাব্যনাট্যের জন্য বুদ্ধদেব বসু সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন ।
১৯৭০ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ উপাধিতে সম্মানিত হন ।
১৯৭৪ সালে “স্বাগত বিদায়” কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি মরনোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন ।

“মর্মবাণী” (১৯২৫) :

১৭ বছর বয়সে বুদ্ধদেব বসুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ।
এই কাব্যের “অরূপ”, “জীবনদেবতা” প্রভৃতি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ করা যায় ।
কাব্যগ্রন্থের প্রকাশক ছিলেন – গঙ্গাচরণ দাস ।

“বন্দীর বন্দনা” (১৯৩০) :

বুদ্ধদেব বসুর কবি প্রতিভার সার্থক বিকাশ ঘটে তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে ।
অধ্যাপক সুকুমার সেনের মতে এই কাব্যগ্রন্থের নামকরণের ব্যাপারে কবি নজরুল ইসলামের কাছে ঋণী ।
এই কাব্যের প্রথম কবিতা - “শাপভ্রষ্ট”, কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে ১০ টি কবিতার মধ্যে ৯ টি কবিতায় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত ।
এই কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা‌ প্রগতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
এই কাব্যগ্রন্থের বিখ্যাত কবিতা – “বন্দীর বন্দনা” ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ৯ ই আশ্বিন রচনা করেন ।
“বন্দীর বন্দনা” পাঠ করে উৎসাহিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন –
“এই রচনাগুলি জলভরা ঘন মেঘের মতো যার ভিতর সূর্যের আলোর রক্তরশ্মি বিচ্ছুরিত।”

“কঙ্কাবতী” (১৯৩৭) :

কাব্যগ্রন্থ টি প্রথম প্রকাশিত হয় কবিতা ভবন থেকে এবং পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশিত হয় নাভানা থেকে ।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা - ‘কাল’ এবং শেষ কবিতা - ‘শেষের রাত্রি’ ।
কাব্যগ্রন্থের “রূপকথা” কবিতার শুরুতে জেমস ক্লারেন্স মগঁন -এর “I see thee ever in my dreams” পংক্তির উল্লেখ রয়েছে ।

আরও পড়ুন : প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে ]



পোস্টটি আপনার সামান্যতম উপকারে এলে, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ....

যোগাযোগ

Post a Comment

0 Comments