Subscribe Us

সৈয়দ মুজতবা আলী : “দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা

Syed-Mujtaba-Ali-Desh-Bidesh-ar-Rochoeta

“দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী :


জন্ম – ১৩ ই সেপ্টেম্বর ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আসামের করিমগঞ্জে ।

পিতা – সৈয়দ সিকান্দার আলী, ছিলেন করিমগঞ্জের রেজিস্ট্রেশন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ।

আদি নিবাস – হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রাম ।

শিক্ষা জীবন – সিলেট গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে তাঁর পড়াশোনা শুরু ।
পরে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ।
পরে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি জার্মান থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন । তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল - “The Origin of the Khozhas and their Religious Life Today”
তিনি বিধুশেখর শাস্ত্রীফরমিকির অধীনে সংস্কৃত ভাষা এবং বেদান্ত অধ্যয়ন করেন ।
ড: মার্ক কলিন্সমরিসের নিকট তিনি ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান, বগদানফের নিকট ফরাসি ও আরবি এবং তুচ্চির নিকট ইতালিয়ান লেখেন ।

কর্ম জীবন – ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আফগানিস্তানের কাবুল সরকারী মহাবিদ্যালয়ে ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষার অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন ।
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ ও কায়রো যান । তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে বরোদা কলেজে তিনি অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন ।

ছদ্মনাম – সত্যপীর
                   ওমর খৈয়াম
                  টেকচাঁদ
                  প্রিয়দর্শী
                  ইন্দ্রানী সরকার
                 রায়পিথোরা

মৃত্যু – ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ১১ ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সৈয়দ মুজতবা আলী দেহত্যাগ করেন ।

আরও পড়ুন : নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র ।


সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন বহু ভাষাবিদ । ফরাসি, জার্মানি, ইতালিয়ান, আরবী, উর্দু, হিন্দি প্রভৃতি ভাষাসহ ১৫ টি ভাষা তিনি জানতেন ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর অভিনব গদ্যরীতি ও প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য চার্লস ল্যাম্বের গদ্যরচনা কে স্মরণ করায় ।

ছাত্রজীবনে দাদা মুর্তজা আলীর সাথে হাতে লেখা পত্রিকা ‘কুইনিন’ প্রকাশিত করেন সৈয়দ মুজতবা আলী ।

সৈয়দ মুজতবা আলীপ্রথম গ্রন্থ - “দেশে - বিদেশে” ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখ থেকে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ।
গ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস - “অবিশ্বাস্য” ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় ।

তাঁর রচিত শেষ উপন্যাস - “তুলনাহীন” ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ।

সৈয়দ মুজতবা আলী  -র মজলিশি বৈঠকী রীতির গল্প, রম্যরচনা ও ভ্রমণ কাহিনীগুলো পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে ।

Syed-Mujtaba-Ali-Desh-Bidesh-ar-Rochoeta

সৈয়দ মুজতবা আলী  রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ :

দেশে বিদেশে ১৯৪৯
পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ১৯৫৬
জলে ডাঙায় ১৯৫৬
দ্বন্দ্ব মধুর ১৯৫৮
চতুরঙ্গ ১৯৬০
ভবঘুরে ও অন্যান্য ১৯৬২
বহুবিচিত্রা ১৯৬২
বড়বাবু ১৯৬৫
হাস্যমধুর ১৯৬৬
পছন্দসই ১৯৬৭
রাজা উজীর ১৯৬৯
হিটলার ১৯৭০
কত না অশ্রুজলে ১৯৭১ (স্মৃতিচারণা মূলক)
মুসাফির ১৯৭১
গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন ১৯৮১

আরও পড়ুন : আলোচনা : “স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ”-এর কবি সম্পর্কে ।


সৈয়দ মুজতবা আলী  রচিত উপন্যাস :

অবিশ্বাস্য ১৯৫৫
শবনম ১৯৬০
শহর ইয়ার ১৯৬৯
তুলনাহীন ১৯৭৪

সৈয়দ মুজতবা আলী  রচিত রম্যরচনা :

পঞ্চতন্ত্র ১৯৫২, ১৯৬৬ (২টি খণ্ড)
ময়ূরকণ্ঠী ১৯৫২
ধূপছায়া ১৯৫৭
দু'হারা ১৯৬৫

সৈয়দ মুজতবা আলী  রচিত ছোটগল্প :

চাচাকাহিনী ১৯৫২
টুনিমেম ১৯৬৩


১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “দেশে বিদেশে” গ্রন্থটিকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সেই বছরই সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ বিবেচনা করে, মুজতবা আলী কে নরসিংহ দাস পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় ।

১৯৬১ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন ।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সৈয়দ মুজতবা আলী কে মরনোত্তর একুশে পদক-এ ভূষিত করেন ।

সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে “কবিগুরু” উপাধিতে ভূষিত করেন ।

“ময়ূরকণ্ঠী” (১৯৫২) :

এই রম্যরচনার আড়ালে লেখক নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন । এই গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
শিক্ষা সংস্কার,
বিশ্বভারতী,
রামমোহন রায়,
গুরুদেব,
ফরাসী – জার্মান প্রভৃতি ।

আরও পড়ুন : আলোচনা : রবীন্দ্রনাথের পর ‘প্রথম মৌলিক কবি’ সম্পর্কে ।


“চাচাকাহিনী” (১৯৫২) :

এই গল্পগ্রন্থে চাচা হলেন লেখক স্বয়ং । এবং তিনি অধিকাংশ গল্পের কথকও বটে ।
হিন্দুস্থান হৌসে বসে মুজতবা আলী গ্রন্থটি রচনা করেন ।
এই গল্পগ্রন্থে ১১ টি গল্প রয়েছে । সেগুলি হল –
১. স্বয়ংবরা,
২. কর্নেল,
৩. মা – জননী,
৪. তীর্থহীনা,
৫. বেলতলাতে দু – দুবার,
৬. কাফে দি জেনি,
৭. বিধবা বিবাহ,
৮. রাক্ষসী,
৯. পাদটীকা,
১০. পুনশ্চ এবং
১১. বেঁচে থাকো ।

‘কর্নেল’ গল্প টি “চাচাকাহিনী”র শ্রেষ্ঠ গল্প
‘বেলতলাতে দু'দুবার’ গল্পে নাৎসীবাদের নগ্ন রূপ চিত্রিত হয়েছে ।
এই রচনা সম্পর্কে হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিশ্বভারতী পত্রিকায় লিখেছিলেন –
“চাচাকাহিনী’ তে সৈয়দ মুজতবা আলী আশ্চর্য রকম মনোহারী গল্প জমিয়েছেন । এই জাতীয় রচনার ক্ষেত্রে তিনিই আদর্শ ব্যক্তি । বাক্ চাতুর্যে এবং শিল্প চাতুর্যের এমন অপূর্ব সমন্বয় সচরাচর দেখা যায় না।”


পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা (১৯৫৬) :

পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয় । এই ঘটনার প্রতিবাদে লেখক প্রবন্ধটি রচনা করে প্রতিবাদ জানান
প্রবন্ধটি একটি বিতর্কিত ও দীর্ঘ প্রবন্ধ ।

আরও পড়ুন : বস্তুপণ্যের প্রচারে প্রথম প্রদেয় পুরস্কার ।


“ধূপছায়া” (১৯৫৭) :

মজলিশি ভঙ্গিতে রচিত এই গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
ভাষার জমা খরচ,
বাঙালী দেয়ালি,
শিক্ষা প্রসঙ্গে,
রসগোল্লা,
বাঁশবনে প্রভৃতি ।


“চতুরঙ্গ” (১৯৬০) :

লেখকের চিন্তাশীলতা এবং মানবধর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে এই প্রবন্ধগ্রন্থে ।
এই প্রবন্ধগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
হরিনাথ দে স্মরণে,
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস,
রবি পুরাণ,
দিল্লী স্থাপত্য প্রভৃতি ।


“শবনম” (১৯৬০) :

এটি তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস
উপন্যাসটি পাঠক মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে ।
কাবুলের পটভূমিতে উপন্যাস টি রচিত । কাবুলের অভ্যুত্থানের কথায় এই উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে ।


“ভবঘুরে ও অন্যান্য” (১৯৬২) :

বৈঠকি মেজাজে রচিত এই প্রবন্ধগ্রন্থের – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতন, ক্ষিতিমোহন সেন, ডি. এইচ. লরেন্স কে নিয়ে রচিত হয়েছে নানান রচনা ।
এই গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
বঙ্গের বাইরে বাঙালি,
নিরলংকার,
বাংলাদেশ প্রভৃতি রচনা ।

আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা চরিত্র(দ্বিতীয় পর্ব) ।


“দু’হারা” (১৯৬২) :

এই রম্যরচনার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
অদৃষ্টের রঙ্গরস,
প্রেমের প্রথমভাগ,
আধুনিকের আত্মহত্যা,
মদ্যপন্থা ওরফে মধ্য পন্থা প্রভৃতি ।


“বড়বাবু” (১৯৬৫) :

এই প্রবন্ধগ্রন্থের বড়বাবু হলেন – দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই প্রবন্ধগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল –
রবীন্দ্রনাথ,
নেতাজী,
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি ।


“কত না অশ্রুজলে” (১৯৭১) :

এই গ্রন্থে স্মৃতিচারণার সূত্রে কয়েকটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী । সেগুলি হল –
বনে ভূত না মনে ভূত,
ব্রেনড্রেন,
দ্বন্দ্ব পুরাণ,
আন ফ্রাঙ্ক প্রভৃতি ।
প্রবন্ধগুলি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার স্পর্শে রমণীয়তা লাভ করেছে ।

আরও পড়ুন : প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে ।


“তুলনাহীন” (১৯৭৪) :

মুজতবা আলীর শেষ উপন্যাস
বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের সময় লেখকের আত্মীয় স্বজনরাও পাক নির্যাতনের শিকার হন । তাদের কথা স্মরণে রেখে লেখক উপন্যাসটি রচনা করেন ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে উপন্যাস টি রচিত । উপন্যাসটি তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ।

“গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন” (১৯৮১) :

প্রবন্ধগ্রন্থটি রবীন্দ্র অনুধ্যানের উল্লেখযোগ্য স্মারক ।
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর শান্তিনিকেতন সম্বন্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় যে সমস্ত প্রবন্ধ লিখেছিলেন, তারই সংকলন হল এই প্রবন্ধগ্রন্থটি ।

সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষারীতির আলোচনা প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশী বলেছিলেন –
“বাংলা কবিতায় আরবী – ফার্সী শব্দের যথার্থ ব্যবহার করে এবং ভাবের উদ্দামতায় কাজী নজরুল যেমন নতুন দিক নির্দেশ করেছেন, তেমনি বাংলা গদ্যে মজলিশী রীতির পথ নির্দেশ করে নতুন শব্দাবলী ব্যবহার করে মুজতবা আলী নতুন গদ্যশৈলী সৃষ্টি করেছেন – যা আমি পারিনি । ….. নতুন পথ নির্দেশক হিসাবে মুজতবাই শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গদ্য লেখক।”

আরও পড়ুন :  “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা সম্পর্কে ।



পোস্টটি আপনার সামান্যতম উপকারে এলে, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন । ধন্যবাদ....

Post a Comment

0 Comments