জন্ম – পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে মালাধর
বসু বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার অন্তর্গত আধুনা মেমারি রেল স্টেশনের কাছে কুলীন গ্রামে
জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা – ভগীরথ বসু।
মাতা – ইন্দুমতী দেবী।
বংশ – কায়স্থ।
পুত্র – সত্যরাজ খান, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর
অন্যতম পর্ষদ ছিলেন (“সত্যরাজ খান হয় হৃদয় নন্দন”)।
উপাধি – গুণরাজ খানঁ।
তবে এই উপাধি কে দিয়েছিলেন সেই বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কেননা মালাধর বসুর কাব্য রচনা কালে দুইজন গৌড়েশ্বর ছিলেন। যথা – ১। রুকনুদ্দিন বরবক শাহ এবং ২। শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ। রুকনুদ্দিন বরবক শাহ কবির কাব্য রচনার প্রথম দিকে গৌড়েশ্বর ছিলেন অন্যদিকে কাব্য রচনার শেষ দিকে গৌড়েশ্বর ছিলেন শামসুদ্দিন ইউসুফ শাহ। কবি মালাধর বসু তাঁর কাব্য রচনার প্রথম থেকেই তাঁর প্রাপ্ত উপাধির কথা স্বীকার করে এসেছেন –
“গুণ নাই, অধম মুই, নাহি কোন জ্ঞান।
গৌড়েশ্বর দিল নাম গুণরাজ খান।“
উল্লিখিত পদে গৌড়েশ্বর হলেন
- রুকনুদ্দিন বরবক শাহ এবং তিনিই কবি কে
‘গুণরাজ খান’ উপাধি টি দিয়েছিলেন।
কর্ম জীবন – তিনি গৌড়ের সুলতান রুকনুদ্দিন বরবক শাহ –এর উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন।
- মালাধর বসু পঞ্চদশ শতকের কবি।
- মালাধর বসু “ভাগবত” –এর দশম ও একাদশ স্কন্দের অনুবাদ করেন। দশম স্কন্দ তিনি পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং একাদশ স্কন্দে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণ কাহিনির কিছু অংশ গ্রহণ করেন।
- মালাধর বসু রচিত কাব্যটির নাম – “শ্রীকৃষ্ণবিজয়”।
কাব্য টি “গোবিন্দবিজয়”, “গোবিন্দমঙ্গল” এবং “শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল”
নামেও পরিচিত।
- “শ্রীকৃষ্ণবিজয়” কাব্যগ্রন্থটির রচনাকাল পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ। গ্রন্থটির রচনাকাল সম্পর্কিত ২ টি ছত্র পাওয়া যায় –
“তেরশ পাঁচনই শকে গ্রন্থ আরম্ভন।
চতুর্দশ দুই শকে হৈল সমাপন।।“
অর্থাৎ কবি কাব্য রচনা শুরু করেন ১৪৭৩ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৯৫
শক + ৭৮) এবং রচনা সমাপ্ত করেন ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে (১৪০২ শক + ৭৮)। কাব্য টি রচনা করতে
সময় লাগে মোট ৭ বছর।
- কাব্যের গ্রন্থোৎপত্তি সম্পর্কে কবি বলেছেন –
“কায়স্থ কুলেতে জন্ম কুলীন গ্রামে বাস।
স্বপ্নে আদেশ দিলেন প্রভু ব্যাস।।
তার আজ্ঞামতে গ্রন্থ করিনু রচন।
বদন ভরিয়ে হরি বল সর্বজন।।"
অনুবাদ ও অনুষঙ্গ : টি এস এলিয়ট |
- মালাধর বসু ব্যাস দেবের কাছে স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাব্যটি রচনা করেন। বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রথম ভাগবত।
- মালাধর বসু ভাগবত বহির্ভূত – বিষ্ণুপুরাণ ও হরিবংশের কাহিনি আনুসারে বৃন্দাবন লীলা, রাস লীলা, দান লীলা ও নৌকা লীলা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
- কবি মালাধর বসু ভাগবত –এর হুবহু অনুবাদ করেন নি, করেছেন ভাবানুবাদ।
- মালাধর বসুর কাব্য টি ৩ খণ্ডে বিভক্ত। যথা –
১। কৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলা
২। মথুরা লীলা
৩। দ্বারকা লীলা
- রুকনুদ্দিন বরবক শাহ –এর
পৃষ্ঠপোষকতায় মালাধর বসু কাব্য টি রচনা করেন।
- মালাধর বসু গৌড়ের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন বলেই জয়ানন্দ – “চৈতন্যমঙ্গল” গ্রন্থে তাঁকে গুণরাজ ছত্রী বলে উল্লেখ করেছেন।
- কাব্যের নামকরণে ‘বিজয়’ শব্দটি কবি ‘বিক্রম / গৌরব’ অর্থে ব্যবহার করেছেন।
- কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের ২২ টি অবতারের বর্ণনা রয়েছে। কাব্যের আঙ্গীক রস – বীররস। কবি লোক নিস্তার অভিপ্রায়ে কাব্যটি রচনা করেন।
- কাব্যের দেবী বন্দনা অংশে প্রথমে রাধা কৃষ্ণের বন্দনা করা হয়েছে।
- ভাগবতপুরাণ –ই সর্বপ্রথম ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়।
- কেদারনাথ রায় –এর সম্পাদনায়
মালাধর বসুর “শ্রীকৃষ্ণবিজয়” কাব্য টি প্রথম মুদ্রিতাকারে
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
- খগেন্দ্রনাথ মিত্র –এর
সম্পাদনায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাব্য টি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
- ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কাব্য টি ঢাকা থেকে নন্দলাল বিদ্যাসাগর –এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
- মালাধর বসুর নামে যে সকল গ্রন্থের পুঁথি পাওয়া গিয়েছে সেগুলি হল –
১। রামচরিত্র
২। লক্ষীচরিত্র
৩। শ্রীধর্মইতিহাস
৪। অষ্টলোকপাল কথা
তবে “লক্ষীচরিত্র” যে গুণরাজ খাঁ রচনা করেন, তাঁর প্রকৃত নাম – শিবানন্দ কর।
- কেদারনাথ ভক্তিবিনোদ প্রথম কবির জন্মস্থান কুলীনগ্রামে গিয়ে কবির জীবন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।
0 Comments