সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়:
উনিশ শতকের বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক
হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ছদ্মনাম কমলাকান্ত ।
১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে "সংবাদ প্রভাকর" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তাঁর
সাহিত্যচর্চা শুরু।
জন্ম – ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে জুন বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণা
জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
জন্মগ্রহণ করেন।
আদিনিবাস – হুগলী জেলার দেশমুখো গ্রাম।
পিতামহ – রামহরি চট্টোপাধ্যায়।
মাতামহ – ভবানীচরণ বিদ্যাভূষণ।
পিতা – যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
মাতা – দুর্গাসুন্দরী দেবী।
ভ্রাতাদ্বয় – শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় এবং সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষা জীবন – ৫ বছর বয়সে কুল পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে খড়ি হয়।
এরপর ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে মেদনীপুরে
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তাঁর বিদ্যালয় জীবনের সূচনা হয়।
বিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করার
পর তিনি ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে হুগলী কলেজে ভর্তি হন। হুগলী কলেজে পড়াকালীন ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে
জুনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মাসিক ৮ টাকা বৃত্তি লাভ করেন।
এরপর ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আইন
পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে।
কর্মজীবন – শিক্ষাজীবন শেষ করার পর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সরকারী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগদান করেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি ডেপুটি
কালেকটর পদে নিযুক্ত হন।
ছদ্মনাম – ১। রামচন্দ্র, ২। কমলাকান্ত, ৩। রামশর্মা, ৪। মহামর্কট,
৫। ভজরাম, ৬। দর্পনারায়ণ, ৭। পতিতুণ্ড।
দাম্পত্য
জীবন – ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১১
বছর বয়সে নারায়ণপুর গ্রামের ৫ বছর বয়সী বালিকার সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। প্রায়
১০ বছর পর ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম পত্নী মারা যান।
প্রথম পত্নী মৃত্যুর পরের
বছর ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের কন্যা রাজলক্ষ্মী
দেবীর সাথে তাঁর দ্বিতীয় বার বিবাহ হয়।
পত্রিকা
সম্পাদনা – ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন
পত্রিকা’ সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস “বিষবৃক্ষ” (১৮৭৩)।
মৃত্যু – বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ই এপ্রিল মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
উনিশ শতকের বাংলা নাটকে বিধবা বিবাহ প্রসঙ্গ |
- ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সংবাদ প্রভাকর পত্রিকা’য় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতা “পদ্য” প্রকাশিত হয়।
- ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত “ললিত তথা মানস” বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম উপন্যাস “Rajmohan’s Wife” (১৮৬৪)। উপন্যাস টি তিনি ইংরেজি ভাষায় রচনা করেন।
উপন্যাস টি কিশোরচাঁদ মিত্র সম্পাদিত ‘Indian Field’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
- বাংলা ভাষায় রচিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস “দুর্গেশনন্দিনী” (১৮৬৫)।
- জীবৎকালে ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দ শেষ ২২ বছরের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৪ টি উপন্যাস রচনা করেন। তবে তাঁর রচিত বেশিরভাগ উপন্যাসই ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস:
১ |
দুর্গেশনন্দিনী |
১৮৬৫ |
২ |
কপালকুণ্ডলা |
১৮৬৬ |
৩ |
মৃণালিনী |
১৮৬৯ |
৪ |
বিষবৃক্ষ |
১৮৭৩ |
৫ |
ইন্দিরা |
১৮৭৩ |
৬ |
যুগলাঙ্গুরীয় |
১৮৭৪ |
৭ |
চন্দ্রশেখর |
১৮৭৫ |
৮ |
রজনী |
১৮৭৭ |
৯ |
কৃষ্ণকান্তের উইল |
১৮৭৮ |
১০ |
রাজসিংহ |
১৮৮২ |
১১ |
আনন্দমঠ |
১৮৮২ |
১২ |
দেবী চৌধুরানী |
১৮৮৪ |
১৩ |
রাধারানী |
১৮৮৬ |
১৪ |
সীতারাম |
১৮৮৭ |
ক্রমানুসারে উপন্যাসগুলি মনে রাখার কৌশল:
নন্দিনীর (১৮৬৫) কপাল (১৮৬৬)
খারাপ, মৃণালিনীর (১৮৬৯) বিষ (১৮৭৩) ইন্দিরা
(১৮৭৩) খেল।
অঙ্গুরী (১৮৭৪) চন্দ্রশেখর
(১৮৭৫) রজনী (১৮৭৭) কে পড়াল।
কৃষ্ণ (১৮৭৮) রাজে (১৮৮২)
সকলে আনন্দে (১৮৮২) বসবাস করত।
দেবী (১৮৮৪) রাধারানী
(১৮৮৬) সীতারামের (১৮৮৭) বন্দনা করিতেন।
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) এবং তাঁর রচিত উপন্যাস |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ত্রয়ী উপন্যাস:
১। আনন্দমঠ ১৮৮২
২। দেবী চৌধুরানী ১৮৮৪
৩। সীতারাম ১৮৮৭
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত উপন্যাসগুলি কে ৩ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নিম্নে ভাগগুলি উল্লেখ করা হল:
ক। ইতিহাসাশ্রয়ী রোমান্সধর্মী উপন্যাস –
১। দুর্গেসনন্দিনী ১৮৬৫
২। কপালকুণ্ডলা ১৮৬৬
৩। মৃণালিনী ১৮৬৯
৪। যুগলাঙ্গুরীয় ১৮৭৪
৫। চন্দ্রশেখর ১৮৭৫
৬। রাজসিংহ ১৮৮২
৭। সীতারাম ১৮৮৭
খ। দেশপ্রেমমূলক তত্ত্বাশ্রয়ী উপন্যাস –
১। আনন্দমঠ ১৮৮২
২। দেবী চৌধুরানী ১৮৮৪
গ। সামাজিক ও পারিবারিক উপন্যাস –
১। বিষবৃক্ষ ১৮৭৩
২। ইন্দিরা ১৮৭৩
৩। রজনী ১৮৭৭
৪। কৃষ্ণকান্তের উইল ১৮৭৪
৫। রাধারানী ১৮৮৬
শক্তি চট্টোপাধ্যায় (Shakti Chattopadhyay) এবং তাঁর রচিত রচনা |
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাস:
১ |
Rajmohan’s Wife |
Indian Field |
২ |
বিষবৃক্ষ (১৮৭৩) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৩ |
ইন্দিরা (১৮৭৩) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৪ |
যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৫ |
চন্দ্রশেখর (১৮৭৫) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৬ |
রজনী (১৮৭৭) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৭ |
কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা (নবম পরিচ্ছেদ পর্যন্ত পত্রিকায়
প্রকাশিত) |
৮ |
রাজসিংহ (১৮৮২) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
৯ |
আনন্দমঠ (১৮৮২) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা (সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত) |
১০ |
দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
১১ |
রাধারানী (১৮৮৬) |
বঙ্গদর্শন পত্রিকা |
১২ |
সীতারাম (১৮৮৭) |
প্রচার পত্রিকা |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উৎসর্গকৃত উপন্যাস:
১ |
দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) |
শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় |
২ |
কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬) |
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৩ |
মৃণালিনী (১৮৬৯) |
দীনবন্ধু মিত্র |
৪ |
বিষবৃক্ষ (১৮৭৩) |
জগদীশ নাথ রায় |
৫ |
চন্দ্রশেখর (১৮৭৫) |
পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৬ |
আনন্দমঠ (১৮৮২) |
দীনবন্ধু মিত্র |
৭ |
দেবী চৌধুরানী (১৮৮৪) |
যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
৮ |
সীতারাম (১৮৮৭) |
রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় |
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (Suniti Kumar Chatterjee) |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাসগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা:
“Rajmohan’s Wife” (১৮৬৪) –
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
রচিত প্রথম উপন্যাস।
উপন্যাস টি তিনি ইংরেজি ভাষায়
রচনা করেন।
এই উপন্যাস টি কিশোরচাঁদ মিত্র
সম্পাদিত ‘Indian Field’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত
হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং এই উপন্যাসের
বাংলা অনুবাদ শুরু করেন কিন্তু তিনি উপন্যাসটির অনুবাদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। কেবলমাত্র
৭ অধ্যায় পর্যন্ত তিনি অনুবাদ করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
নিজের “বারিবাহিণী” (১৯১৯) উপন্যাসে অনুবাদিত
অংশ টি সংযোজিত করেন। পরে বঙ্কিম শতবার্ষিক উৎসব উপলক্ষে সজনীকান্ত
দাস মহাশয় “রাজমোহনের স্ত্রী” নামে অনুবাদ
টি প্রকাশ করেন।
“দুর্গেশনন্দিনী” (১৮৬৫) –
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে সর্বাঙ্গীন সার্থক উপন্যাস সৃষ্টি করেন।
বাংলা ভাষায় রচিত এটি লেখকের
প্রথম উপন্যাস।
লেখকের এই উপন্যাসে স্কট
–এর “Ivanhoe” উপন্যাসের ছায়াপাত লক্ষ করা যায়।
কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং এই প্রসঙ্গে বলেছেন –
“দুর্গেশনন্দিনী’
লিখিবার আগে ‘আইভ্যানহো’ পড়ি নাই”।
এই উপন্যাসের সাথে ভূদেব চৌধুরী
রচিত “অঙ্গুরীয় বিনিময়” উপন্যাসের কিছু সাদৃশ্য
লক্ষণীয়।
লেখক ২৪ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৮৬২
খ্রিষ্টাব্দে এই উপন্যাস রচনা শুরু করেছিলেন, কিন্তু উপন্যাস টি সমাপ্ত করেন ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে।
লেখক এই উপন্যাস টি শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় কে উৎসর্গ করেন।
ষোড়শ শতকের শেষে ওড়িশার অধিকার
নিয়ে মোগল – পাঠান যে যুদ্ধ তারই পটভূমিতে লেখক এই উপন্যাস টি রচনা করেন।
চরিত্র – জগৎ সিংহ, মান সিংহ, বিমলা, আয়েষা, তিলোত্তমা, ওসমান
প্রমুখ।
উপন্যাসের তিলোত্তমা চরিত্রের
মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বিতীয় পত্নী ১৬ বছর বয়সী রাজলক্ষ্মী দেবীর ছায়াপাত ঘটেছে।
বিমলার পরিণাম এবং জগৎ সিংহ
– তিলোত্তমা – আয়েষার কাহিনি এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।
অনুবাদ ও অনুষঙ্গ : Guy de Maupassant |
“কপালকুণ্ডলা” (১৮৬৬) –
উপন্যাস টি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রচিত সর্বাপেক্ষা কাব্যধর্মী উপন্যাস।
উপন্যাস টি বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর
দাদা সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে উৎসর্গ করেন।
ভবভূতির রচিত “মালতীমাধব”
নাটকে রয়েছে ‘কপালকুণ্ডলা’ নামক চরিত্র, অনুমান
করা হয় লেখক এখান থেকেই উপন্যাসের নাম টি গ্রহণ করেছিলেন।
এই উপন্যাসের নাম ভবভূতির
কাছ থেকে নেওয়া হলেও ভবভূতির কপালকুণ্ডলা হিংস্র, ভীষণ প্রতিহিংসাপরায়ণ ও উদ্দাম –
বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা করুণায় বিগিলিতা, সংযতা, অচপল বিদ্যুতের মতো স্থির।
লেখক এই উপন্যাসের কাহিনি
বীজের সন্ধান করেছিলেন মেদনীপুর জেলার আধুনিক কাঁথি মহাকুমার শাসনস্থল নেগুয়ায় কর্মোপলক্ষে
অবস্থান কালে।
জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের পটভূমিকায়
লেখক এই উপন্যাস টি রচনা করেন।
এই উপন্যাসের অনেকগুলি পরিচ্ছেদের
শুরুতে ভাবের সাদৃশ্য দেখাতে গিয়ে লেখক শেক্সপীয়র, বায়রন, ওয়ার্ডওয়ার্থ, কীটস এবং লিটনের
রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
অক্ষয় কুমার
দত্তগুপ্ত এই উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন
–
“কপালকুণ্ডলা’
tale নহে, উপন্যাস নহে, উহা গদ্যরীতির কাব্যনাটক”।
লেখকের জীবদ্দশায় এই উপন্যাসের
৮ টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
এই উপন্যাসের বহুল প্রচলিত
লাইন –
“পথিক, তুমি
কি পথ হারাইয়াছ”?
“তুমি অধম তাই
বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন”?
চরিত্র – কপালকুণ্ডলা, নবকুমার, কাপালিক, মতিবিবি, শ্যামাসুন্দরী
প্রমুখ।
“মৃণালিনী” (১৮৬৯) –
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
তাঁর এই উপন্যাস টি তাঁর বন্ধু দীনবন্ধু মিত্র কে
উৎসর্গ করেন।
উপন্যাসে সপ্তদশ শতকের অশ্বারোহীর
বঙ্গবিজয়ের কাহিনীর মধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মৃণালিনী – হেমচন্দ্রে প্রেমকাহিনী। সাথে
সাথে উপন্যাসে লক্ষণ সেনের কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে।
চরিত্র – মৃণালিনী, হেমচন্দ্র, পশুপতি, মনোরমা প্রমুখ।
কৃত্তিবাস ওঝা বাংলা রামায়ণের আদি কবি |
“বিষবৃক্ষ” (১৮৭৩) –
এটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস।
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর এই উপন্যাস
টি জগদীশ নাথ রায় কে উৎসর্গ করেন।
উপন্যাস টি ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়। এটিই ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য়
প্রকাশিত বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস।
১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে
এই উপন্যাসের ৮ টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
এই উপন্যাস টি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর কে বিশেষভাবে ভাবিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই
উপন্যাস সম্পর্কে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যায় ‘প্রবাসী
পত্রিকা’য় লিখেছিলেন –
“বঙ্গদর্শনে’
যে জিনিসটা সেদিন বাঙলাদেশের ঘরে ঘরে সকলের মনকে নাড়া দিয়েছিল, সে হচ্ছে ‘বিষবৃক্ষ”।
“বিষবৃক্ষ” উপন্যাসের সাথে
১৩০০ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘সাধনা পত্রিকা’য়
প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “মধ্যবর্তিনী” গল্পের
সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এই উপন্যাসের কাহিনিতে রেভারেণ্ড লাল বেহারী দে বিরোচিত “চন্দ্রমুখীর উপাখ্যান” (১৮৫৮) –এর সুস্পষ্ট ছায়াবহ।
মিরিয়ার এস
নাইট ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে “The Poison Tree” নামে এই উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ করেন।
গিরিশচন্দ্র
ঘোষ এবং অতুলকৃষ্ণ
মিত্র এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন। অতুলকৃষ্ণ মিত্রের
দেওয়া নাট্যরূপ টি ‘এমারেণ্ড থিয়েটারে’
প্রথম অভিনীত হয়।
চরিত্র – নগেন্দ্রনাথ, সূর্যমুখী, কুন্দনন্দিনী, কমলিনী, দেবেন্দ্র,
হীরা প্রমুখ।
“ইন্দিরা” (১৮৭৩) –
উপস্থাপন রীতিতে উপন্যাস টি
ডায়েরী অর্থাৎ আত্মকথন জাতীয়।
উপন্যাসের নায়িকা ইন্দিরার
মুখেই কাহিনি বিবৃত হয়েছে।
তবে এই উপন্যাসটিকে আকারে
ছোট এবং প্রকারে এক বড় গল্প বলা যেতে পারে।
চরিত্র – ইন্দিরা, সুভাষিণী, উপেন্দ্র প্রমুখ।
“চন্দ্রশেখর” (১৮৭৫) –
উপন্যাস টি প্রথম ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর এই উপন্যাস
টি অনুজ পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে উৎসর্গ করেন।
উপন্যাসে নবাবী (মীরকাশিম)
আমলের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
উপন্যাসটিতে মীরকাশিম ও ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বন্দ্বের পটভূমিতে কাল্পনিক প্রেম কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছে।
এই উপন্যাস টি সর্বাপেক্ষা
কম গ্রাহক আকর্ষন করেছিল। ১৪ বছরের মধ্যে এই উপন্যাসের মাত্র ২ টি সংস্করণ শেষ হয়।
চরিত্র – চন্দ্রশেখর, শৈবালিনী, প্রতাপ, মীরকাশিম প্রমুখ।
জগদীশচন্দ্র বসু - ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী |
“রজনী” (১৮৭৭) –
উপন্যাস টি ৩২ টি পরিচ্ছেদে
বিভক্ত।
উপন্যাস টি উইল্কি কলিন্সের
“Women in White” গ্রন্থের অনুসরণে লেখা।
লেখক লিটনের “Last Days of
Pompei” নাটকের অন্ধ ফুলওয়ালি নিদিয়া চরিত্র অবলম্বনে এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র
রজনী কে সৃষ্টি করেছেন।
বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং এই উপন্যাস
সম্পর্কে বলেছেন –
“ইহাকে নূতন
গ্রন্থও বলা যাইতে পারে”।
চরিত্র – রজনী, লবঙ্গ, শচীন্দ্র, অমরনাথ প্রমুখ।
“কৃষ্ণকান্তের উইল” (১৮৭৮) –
এটি একটি সামাজিক উপন্যাস।
বিধবা বিবাহ কে কেন্দ্র করে
লেখক এই উপন্যাস টি রচনা করেছেন।
এই উপন্যাসের প্রথম ৯ টি পরিচ্ছেদ
১২৮২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’র চতুর্থ খণ্ডে
প্রকাশিত হয়।
এই উপন্যাসের রোহিণী চরিত্রের
পরিণতি নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কঠোর সমালোচনা করেছেন।
এই উপন্যাস প্রসঙ্গে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন –
“কৃষ্ণকান্তের
উইল’ বঙ্গসাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ দান”।
চরিত্র – রোহিণী, ভ্রমর, কৃষ্ণকান্ত, গোবিন্দলাল প্রমুখ।
“রাজসিংহ” (১৮৮২) –
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
একমাত্র বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস।
প্রথম প্রকাশের সময় এই উপন্যাস
টি ৪ টি খণ্ডে সমাপ্ত হলেও চতুর্থ খণ্ডে উপন্যাস টি ৮ টি খণ্ডে সমাপ্ত হয়। এবং এই উপন্যাসের
চতুর্থ সংস্করণ টি আমরা পড়ি।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের চতুর্থ
সংস্করণের ভূমিকায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং
লিখেছিলেন –
“আমি পূর্বে
কখনও ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখি নাই। ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘চন্দ্রশেখর’ বা ‘সীতারাম’কে ঐতিহাসিক
উপন্যাস বলা যাইতে পারে না। এই প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিলাম”।
চরিত্র – রাজসিংহ, জেবউন্নিসা, নির্মল কুমারী, চঞ্চল কুমারী,
দরিয়া বিবি প্রমুখ।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ |
“আনন্দমঠ” (১৮৮২) –
৭৬ –এর মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী
বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের ২ ঘটনা অবলম্বনে রচনা করেন।
উপন্যাস টি প্রথম সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর এই উপন্যাস
টি বন্ধু দীনবন্ধু মিত্র কে উৎসর্গ করেন।
এই উপন্যাসের বিশিষ্ট সম্পদ
‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত।
এই উপন্যাসে মোট ১১ টি গান
রয়েছে।
চরিত্র – ভবানন্দ, সুকুমারী, মহেন্দ্র সিংহ, কল্যাণী প্রমুখ।
“দেবী চৌধুরানী” (১৮৮৪) –
উপন্যাস টি লেখক যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে উৎসর্গ করেন।
উপন্যাস টি প্রথম সঞ্জীবচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের প্রথম ২ খণ্ড পত্রিকায়
প্রকাশিত হলেও তৃতীয় খণ্ড গ্রন্থাকারে একত্রে প্রকাশিত হয়।
"দেবী চৌধুরানী" উপন্যাসটিকে "আনন্দমঠ" উপন্যাসের উত্তরকাণ্ড বলা যায়।
এই উপন্যাসের ৩ টি খণ্ডের
প্রথম খণ্ডে ১৬ টি, দ্বিতীয় খণ্ডে ১২ টি এবং তৃতীয় খণ্ডে ১৪ টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত।
সমালোচক জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন –
“দেবী চৌধুরানী’ই
বঙ্কিমের একমাত্র উপন্যাস যেখানে সমাজ নীতির পরিবর্তে সমাজ সত্তার আকার বা গঠনটিকে
আমরা দেখতে পাই। সমাজের ধারক – বাহক কারা তাদের মোটিভ বা ইনটেনশন কি তা শরৎচন্দ্রের
পূর্বে আমাদের কাছে স্পষ্ট আকার নেয়নি। বঙ্কিম সমাজশক্তির যথেচ্ছাচারের নমুনা প্রসঙ্গে
তাদের কিছুটা দৃশ্যায়িত করেছেন”।
চরিত্র – প্রফুল্ল, ভবানী পাঠক, ব্রজেশ্বর, হরবল্লভ রায়, ফুলমনি,
কৃষ্ণ গোবিন্দ দাস প্রমুখ।
বাংলা সাহিত্যে উৎসর্গকৃত রচনা (তৃতীয় পর্ব) |
এক নজরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়:
বাংলা
সাহিত্যে সর্বাঙ্গীন সার্থক উপন্যাস সৃষ্টি হয় ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়ের “দুর্গেশনন্দিনী” উপন্যাসের
মাধ্যমে।
তাঁর ১ম উপন্যাস - "Rajmohan's
wife" (১৮৬৪)।
বাংলা ভাষায় বঙ্কিমচন্দ্রের ১ম উপন্যাস
- "দুর্গেশনন্দিনী" (১৮৬৫)।
তাঁর শেষ উপন্যাস - "সীতারাম"
(১৮৮৭)।
বঙ্কিমচন্দ্রের বিধবাবিবাহ কেন্দ্রিক
উপন্যাস - "বিষবৃক্ষ', 'কৃষ্ণকান্তের
উইল'।
তিনি 'বঙ্গদর্শন'(১৮৭২)
মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
তাঁর
একমাত্র বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস
- 'রাজসিংহ'।
তাঁর 'রজনী' উপন্যাসটি উইলকি কলিন্স - এর ' Women in
white' অবলম্বনে রচিত।
রজনী চরিত্রটি লিটন -এর 'Last day's
of Pompeii' -এর অন্ধ
ফুলওয়ালী নিদিয়া চরিত্র
অবলম্বনে সৃষ্ট।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর 'ঘরে-বাইরে' উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র -এর 'রজনী' উপন্যাসের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ৩ দশককে বঙ্কিম যুগ বলা হয়।
১৮৮৪ - উপন্যাসোপম ব্যাঙ্গাত্মক
রচনা “মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত” - এ সেকালের জমিদার প্রথার সমালোচনা
করেছেন ।
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে বলেছেন - “বঙ্কিম বঙ্গসাহিত্যে প্রভাতের সূর্যোদয়
বিকাশ করলেন”।
“ললিত তথা মানস” তাঁর লেখা কাব্য। এই থেকে বোঝা যায় যে তিনি কাব্য রচনার দিকেও ঝুুঁকে ছিলেন।
আত্মকথন রীতিতে তাঁর রচিত একমাত্র উপন্যাস “ইন্দিরা”।
“ইন্দিরা” এবং “রাধারানী” রচনা ২টিতে উপন্যাসের পূর্ণ লক্ষন প্রকাশ পাইনি, তাই এদের ইংরেজীতে Novelette বলা হয়।
“বঙ্গদর্শন পত্রিকায়” প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস “বিষবৃক্ষ”(১৮৭৩)। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিত কালেই উপন্যাসটির ৮ম সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর “বিষবৃক্ষ” সম্পর্কে
বলেছিলেন - “বঙ্গদর্শনে’ যে
জিনিসটা সেদিন বাঙলাদেশের ঘরে ঘরে সকলের মনকে নাড়া দিয়েছিল, সে
হচ্ছে ‘বিষবৃক্ষ”।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ঘরে বাইরে”উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের “রজনী” উপন্যাসের উপন্যাসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
“আনন্দমঠ” ৭৬ এর মন্বন্তর ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বাংলার
ইতিহাসে যুগসন্ধিক্ষণের ২ ঘটনা অবলম্বনে উপন্যাসটি রচিত।
প্রমথ চৌধুরী : বাংলা সাহিত্যের বীরবল |
“আনন্দমঠ” উপন্যাসের বিশিষ্ট
সম্পদ - “বন্দে মাতরম” সঙ্গীত।
তাঁর “চন্দ্রশেখর” উপন্যাসটি সর্বাপেক্ষা কম গ্রাহক আকর্ষণ করেছিল।
“কপালকুণ্ডলা” তাঁর সর্বাপেক্ষা কাব্যধর্মী উপন্যাস।
3 Comments
slst ar syllabus dhore post korle aro valo hoto.... Ami subhas Mukhopaddhay somporke jante chai tai post korle khub valo hoy....aponader ai sob post khub sahajjo kore.
ReplyDelete9-10 বিশেষ করে নবম ও দশম শ্রেণির জ।
ReplyDeleteসেই চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি, যতটা সম্ভব এস.এল.এস.টি -র সিলেবাস ধরে পোস্ট করার... আপনার অনুরোধে “সুভাষ মুখোপাধ্যায়” সম্পর্কিত পোস্টটি ব্লগ সাইটে পোস্ট করা হয়েছে... আপনার সুচিন্তিত মতামত আমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 💐💐💐... পাশে থাকুন, সাথে থাকুন...
ReplyDelete