আলোচনা : “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা সম্পর্কে
- জন্ম – ১১ ই ফেব্রুয়ারি ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিক্রমপুরের বিদগাঁও এ জন্মগ্রহণ করেন।
- পিতা – সীতাকান্ত হালদার ছিলেন নোয়াখালির লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী।
- মাতা – বিধুমুখী দেবী।
- শিক্ষাজীবন – তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু হয় নোয়াখালীতে।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরেজি অর্নাস সহ প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে এম.এ পাশ করেন।
- কর্মজীবন – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ল পাশ করে, এই বছরই নোয়াখালীতে তিনি ওকালতি শুরু করেন।
১৯৩০-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গোপাল হালদার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন।
১৯৪৪-৪৮ এবং ১৯৫২-৬৭ পর্যন্ত গোপাল হালদার ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
‘দেশবাণী’ পত্রিকাতেও গোপাল হালদার সাংবাদিকতা করেন।
- ছদ্মনাম – অমৃতকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়, প্রফুল্ল হালদার।
- পৈতৃক নিবাস – বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বিদগাঁও। আত্মস্মৃতি রূপনারায়ণের কূলে বইটিতে গোপাল হালদার লিখেছেন, ‘আমি জন্মেছি বিক্রমপুরে।
- মৃত্যু – ৪ ঠা অক্টোবর ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার এস.এস.কে.এম হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন।
[ আরও পড়ুন : “মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে”-র কবি সম্পর্কে ]
- গোপাল হালদারের প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় উপন্যাস “একদা” (১৯৩৯)।
- গোপাল হালদার তাঁর জনপ্রিয় “একদা” উপন্যাসটি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলে বসেই রচনা করেন।
- প্রেসিডেন্সির জেলে বসে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার রচনা করেন “অন্যদিন” উপন্যাসটি। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
- গোপাল হালদার তাঁর “আর একদিন” (১৯৫১) উপন্যাসটিও জেলে বসেই রচনা শুরু করেন।
- গোপাল হালদার রচিত “সংস্কৃতি রূপান্তর” (১৯৪১) প্রবন্ধগ্রন্থটি তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধগ্রন্থ।
- গোপাল হালদারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ “রূপনারায়ণের কূলে” ২ টি খণ্ডে (১৯৬১, ১৯৭৮) সমাপ্ত করেন।
গোপাল হালদার রচিত উপন্যাস :-
• একদা ১৯৩৯• পঞ্চাশের পথ ১৯৪৪
• তেরশো পঞ্চাশ ১৯৪৫
• ঊনপঞ্চাশী ১৯৪৬
• ভাঙন ১৯৪৭
• উজান গঙ্গা ১৯৫০
• অন্যদিন ১৯৫০
• স্রোতের দীপ ১৯৫০
• আর একদিন ১৯৫১
• ভূমিকা ১৯৫২
• নবগঙ্গা ১৯৫৩
• জোয়ারের বেলা ১৯৫৪
• ভাঙনীকূল ১৯৫৬
• ত্রিদিবা ১৯৭৮
- “একদা”(১৯৩৯), “অন্যদিন”(১৯৫০), এবং “আর একদিন”(১৯৫১) – এই তিন পর্বে গোপাল হালদারের “ত্রিদিবা”(১৯৭৮) ট্রিলজি টি সম্পূর্ণ হয়।
- “পঞ্চাশের পথ”(১৯৪৪), “ঊনপঞ্চমী”(১৯৪৬) এবং “তেরশো পঞ্চাশ”(১৯৪৬) – নিয়ে তিন পর্বে “মন্বন্তরে ত্রিলজি” প্রকাশিত হয়।
[ আরও পড়ুন : সুচিত্রা ভট্টাচার্য সম্পর্কে ]
গোপাল হালদার রচিত সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থ :-
• বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৫৩, ১৯৫৮• ইংরেজি সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৬১
• রুশ সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৫৬
গোপাল হালদার রচিত রম্যরচনা :-
• বাজে লেখা ১৯৪৩• স্বপ্ন ও সত্য ১৯৫১
• আড্ডা ১৯৫৬
• বনচাঁড়ালের কড়চা ১৯৬০
গোপাল হালদার রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ :-
• সংস্কৃতির রূপান্তর ১৯৪১• বাঙালি সংস্কৃতির রূপ ১৯৪৭
• এ যুগের যুদ্ধ ১৯৪৭
• বাঙালি সংস্কৃতি প্রসঙ্গ ১৯৫৬
• বাংলা সাহিত্য ও মানব স্বীকৃতি ১৯৫৬
• ভারতের ভাষা ১৯৬৭
• বানিজ্য জিজ্ঞাসা ১৯৬৯
• বাঙালির আশা বাঙালির ভাষা ১৯৭২
• সতীনাথ ভাদুড়ী : সাহিত্য ও সাধনা ১৯৭৮
• শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ১৯৮৫
• সংস্কৃতির বিশ্বরূপ ১৯৮৬
• বাঙলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ ১৯৮৬
• প্রসঙ্গ বিদ্যাসাগর ১৯৯১
[ আরও পড়ুন : পদাতিক কবি সম্পর্কে ]
- গোপাল হালদারের একটি মাত্র গল্প সংকলন “ধূলিকণা” প্রোগ্রেসিভ ফোরাম থেকে প্রকাশিত হয়। এই গল্প সংকলনের অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল –
কালের কোপ – ১৩২৯ বঙ্গাব্দ
জয়ন্ত – ১৩২৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ
প্রথম চাকরী – ১৩৩২ বঙ্গাব্দের পৌষ
কাপড়ের পুঁটুলি – ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ
পারুল – ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন
“তারকার জন্ম”, “খেয়াডুবি”, “জেলের ফটক”, এবং “রাস্তার রাজা” – গল্পগুলির সালের উল্লেখ নেই।
- গোপাল হালদার রচিত কতকগুলি গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তাঁর “ধূলিকণা” গল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেগুলি হল –
• দুদিনের সহযাত্রী – ভারতবর্ষ – পৌষ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ
• পয়লা আষাঢ় – ভারতবর্ষ – আষাঢ়, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ
• বিপথে – ভারতবর্ষ – চৈত্র, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ
• উপহার – পরিচয় – আশ্বিন, ১৩৭১ বঙ্গাব্দ
• প্রথম অশ্রু – পরিচয় – ভাদ্র, ১৩৭২ বঙ্গাব্দ
• ঘেরাও ও ধরাও – পরিচয় – আশ্বিন, ১৩৭৪ বঙ্গাব্দ
• অঘটন ঘটল – পরিচয় – ভাদ্র, ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ
• জিন্দাবাদ – পরিচয় – ভাদ্র_আশ্বিন, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দ।
- এই গল্পগুলির মধ্যে “শেষ চিঠি” এবং “বিপথে” গল্প দুটি প্রফুল্ল হালদার ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়।
- গ্রাম-সমাজকে চেনা, তার গড়নকে ভাষাতত্ত্বের আলোকে বুঝে নেওয়ার প্রচেষ্টাতেই তিনি শুরু করেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণাকর্ম। প্রকাশিত হয় -
"Gopichand Legend",
"A Skeleton Grammar of the Noakhali Dialect of Bengal".
- 'ভূমিকা', 'নবগঙ্গা', 'জোয়ারের বেলা', 'ভাঙন', 'স্রোতের দ্বীপ', 'উজান-গঙ্গা' – এগুলোকে একত্রে বলা যায় ভদ্রাসন পর্বের উপন্যাস। তাঁর ভদ্রাসন পর্বের উপন্যাসগুলোতে ধরা পড়েছে বাঙালি মধ্যবিত্তের জাগরণ, বিকাশ ও পরিণতির কথা। উপন্যাসগুলোতে রয়েছে ১৬০৯ থেকে ১৯৩০-৩১ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বাঙালি জীবনের নানা ছবি।
- “মন্বন্তর” ট্রিলজি প্রসঙ্গে গোপাল হালদার লেখেন, - "আমি একে সমসাময়িককালের ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসাবে উপস্থাপিত করেছি। চরিত্রসমূহ যদিও ঐতিহাসিক নয়, ঘটনা বিকৃত হতে দিইনি"।
[ আরও পড়ুন : রাজশেখর বসু সম্পর্কে ]
গোপাল হালদারের প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা :-
• ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী স্মৃতি স্বর্ণপদক লাভ করেন।
• গোপাল হালদার ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎ স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
• ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে “রূপনারায়ণের কূলে” -র দ্বিতীয় খন্ডের জন্য গোপাল হালদার রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
• “রুশ সাহিত্যের রূপরেখা” গ্রন্থের জন্য গোপাল হালদার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন।
• ১. ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
২. ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
৩. ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
৪. ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
৫. ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় –
গোপাল হালদার কে সান্মানিক ডক্টরেট উপাধি তে ভূষিত করে।
• গোপাল হালদার ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎ স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।
• ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে “রূপনারায়ণের কূলে” -র দ্বিতীয় খন্ডের জন্য গোপাল হালদার রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
• “রুশ সাহিত্যের রূপরেখা” গ্রন্থের জন্য গোপাল হালদার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন।
• ১. ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
২. ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
৩. ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
৪. ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
৫. ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় –
গোপাল হালদার কে সান্মানিক ডক্টরেট উপাধি তে ভূষিত করে।
- শৈলেশ বিশ্বাস গোপাল হালদারের জীবনী ও সাহিত্য বিষয়ে গবেষণা করেছেন। শৈলেশ বিশ্বাস রচিত গ্রন্থটির নাম - “গোপাল হালদার : কথাসাহিত্য”। গ্রন্থটি ২০০১ সালে প্রকাশিত হয়।
0 Comments