Subscribe Us

গোপাল হালদার : “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা

Duti-Trilogy-r-Rochoeta-Gopal-Haldar

আলোচনা : “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা সম্পর্কে 


  • জন্ম – ১১ ই ফেব্রুয়ারি ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিক্রমপুরের বিদগাঁও এ জন্মগ্রহণ করেন।

  • পিতা – সীতাকান্ত হালদার ছিলেন নোয়াখালির লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী।

  • মাতা – বিধুমুখী দেবী।

  • শিক্ষাজীবন – তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু হয় নোয়াখালীতে।
                   ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
                   ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরেজি অর্নাস সহ প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।
                   ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে এম.এ পাশ করেন।

  • কর্মজীবন – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ল পাশ করে, এই বছরই নোয়াখালীতে তিনি ওকালতি শুরু করেন।
          ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার ফেনী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।
          ১৯৩০-১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গোপাল হালদার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন।
          ১৯৪৪-৪৮ এবং ১৯৫২-৬৭ পর্যন্ত গোপাল হালদার ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
          ‘দেশবাণী’ পত্রিকাতেও গোপাল হালদার সাংবাদিকতা করেন।

  • ছদ্মনাম – অমৃতকন্ঠ চট্টোপাধ্যায়, প্রফুল্ল হালদার।

  • পৈতৃক নিবাস – বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বিদগাঁও। আত্মস্মৃতি রূপনারায়ণের কূলে বইটিতে গোপাল হালদার লিখেছেন, ‘আমি জন্মেছি বিক্রমপুরে।

  • মৃত্যু – ৪ ঠা অক্টোবর ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার এস.এস.কে.এম হাসপাতালে দেহত্যাগ করেন।


আরও পড়ুন : “মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে”-র কবি সম্পর্কে  ] 



  • গোপাল হালদারের প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় উপন্যাস “একদা” (১৯৩৯)।

  • গোপাল হালদার তাঁর জনপ্রিয় “একদা” উপন্যাসটি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের  ১৩ ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলে বসেই রচনা করেন।

  • প্রেসিডেন্সির জেলে বসে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার রচনা করেন “অন্যদিন” উপন্যাসটি। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

  • গোপাল হালদার তাঁর “আর একদিন” (১৯৫১) উপন্যাসটিও জেলে বসেই রচনা শুরু করেন।

  • গোপাল হালদার রচিত “সংস্কৃতি রূপান্তর” (১৯৪১) প্রবন্ধগ্রন্থটি তাঁর শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধগ্রন্থ

  • গোপাল হালদারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ “রূপনারায়ণের কূলে” ২ টি খণ্ডে (১৯৬১, ১৯৭৮) সমাপ্ত করেন।


গোপাল হালদার রচিত উপন্যাস :-

একদা ১৯৩৯

পঞ্চাশের পথ ১৯৪৪

তেরশো পঞ্চাশ ১৯৪৫

ঊনপঞ্চাশী ১৯৪৬

ভাঙন ১৯৪৭

উজান গঙ্গা ১৯৫০

অন্যদিন ১৯৫০

স্রোতের দীপ ১৯৫০

আর একদিন ১৯৫১

ভূমিকা ১৯৫২

নবগঙ্গা ১৯৫৩

জোয়ারের বেলা ১৯৫৪

ভাঙনীকূল ১৯৫৬

ত্রিদিবা ১৯৭৮



  • “একদা”(১৯৩৯), “অন্যদিন”(১৯৫০), এবং “আর একদিন”(১৯৫১) – এই তিন পর্বে গোপাল হালদারের “ত্রিদিবা”(১৯৭৮) ট্রিলজি টি সম্পূর্ণ হয়।


  • “পঞ্চাশের পথ”(১৯৪৪), “ঊনপঞ্চমী”(১৯৪৬) এবং “তেরশো পঞ্চাশ”(১৯৪৬) – নিয়ে তিন পর্বে “মন্বন্তরে ত্রিলজি” প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন : সুচিত্রা ভট্টাচার্য সম্পর্কে  ] 


গোপাল হালদার রচিত সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থ :-

বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৫৩, ১৯৫৮

ইংরেজি সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৬১

রুশ সাহিত্যের রূপরেখা ১৯৫৬


গোপাল হালদার রচিত রম্যরচনা :-

বাজে লেখা ১৯৪৩

স্বপ্ন ও সত্য ১৯৫১

আড্ডা ১৯৫৬

বনচাঁড়ালের কড়চা ১৯৬০


গোপাল হালদার রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ :-

সংস্কৃতির রূপান্তর ১৯৪১

বাঙালি সংস্কৃতির রূপ ১৯৪৭

এ যুগের যুদ্ধ ১৯৪৭

বাঙালি সংস্কৃতি প্রসঙ্গ ১৯৫৬

বাংলা সাহিত্য ও মানব স্বীকৃতি ১৯৫৬

ভারতের ভাষা ১৯৬৭

বানিজ্য জিজ্ঞাসা ১৯৬৯

বাঙালির আশা বাঙালির ভাষা ১৯৭২

সতীনাথ ভাদুড়ী : সাহিত্য ও সাধনা ১৯৭৮

শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ১৯৮৫

সংস্কৃতির বিশ্বরূপ ১৯৮৬

বাঙলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ ১৯৮৬

প্রসঙ্গ বিদ্যাসাগর ১৯৯১


আরও পড়ুন : পদাতিক কবি সম্পর্কে  ]



  • গোপাল হালদারের একটি মাত্র গল্প সংকলন “ধূলিকণা” প্রোগ্রেসিভ ফোরাম থেকে প্রকাশিত হয়। এই গল্প সংকলনের অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল –
নদীর মায়া – ১৩২৯ বঙ্গাব্দ
কালের কোপ – ১৩২৯ বঙ্গাব্দ
জয়ন্ত – ১৩২৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ
প্রথম চাকরী – ১৩৩২ বঙ্গাব্দের পৌষ
কাপড়ের পুঁটুলি – ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ
পারুল – ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন
“তারকার জন্ম”, “খেয়াডুবি”, “জেলের ফটক”, এবং “রাস্তার রাজা” – গল্পগুলির সালের উল্লেখ নেই


  • গোপাল হালদার রচিত কতকগুলি গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও তাঁর “ধূলিকণা” গল্প সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সেগুলি হল –
শেষ চিঠি – ভারতবর্ষ – আষাঢ়, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ
দুদিনের সহযাত্রী – ভারতবর্ষ – পৌষ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ
পয়লা আষাঢ় – ভারতবর্ষ – আষাঢ়, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ
বিপথে – ভারতবর্ষ – চৈত্র, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ
উপহার – পরিচয় – আশ্বিন, ১৩৭১ বঙ্গাব্দ
প্রথম অশ্রু – পরিচয় – ভাদ্র, ১৩৭২ বঙ্গাব্দ
ঘেরাও ও ধরাও – পরিচয় – আশ্বিন, ১৩৭৪ বঙ্গাব্দ
অঘটন ঘটল – পরিচয় – ভাদ্র, ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ
জিন্দাবাদ – পরিচয় – ভাদ্র_আশ্বিন, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দ।

  • এই গল্পগুলির মধ্যে “শেষ চিঠি” এবং “বিপথে” গল্প দুটি প্রফুল্ল হালদার ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়।


  • গ্রাম-সমাজকে চেনা, তার গড়নকে ভাষাতত্ত্বের আলোকে বুঝে নেওয়ার প্রচেষ্টাতেই তিনি শুরু করেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণাকর্ম। প্রকাশিত হয় -
" A Brief Phonetic Sketch of the Noakhali Dialect of South Eastern Bengal",
"Gopichand Legend",
"A Skeleton Grammar of the Noakhali Dialect of Bengal".

  • 'ভূমিকা', 'নবগঙ্গা', 'জোয়ারের বেলা', 'ভাঙন', 'স্রোতের দ্বীপ', 'উজান-গঙ্গা' – এগুলোকে একত্রে বলা যায় ভদ্রাসন পর্বের উপন্যাস। তাঁর ভদ্রাসন পর্বের উপন্যাসগুলোতে ধরা পড়েছে বাঙালি মধ্যবিত্তের জাগরণ, বিকাশ ও পরিণতির কথা। উপন্যাসগুলোতে রয়েছে ১৬০৯ থেকে ১৯৩০-৩১ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বাঙালি জীবনের নানা ছবি।

  • মন্বন্তর” ট্রিলজি প্রসঙ্গে গোপাল হালদার লেখেন, - "আমি একে সমসাময়িককালের ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসাবে উপস্থাপিত করেছি। চরিত্রসমূহ যদিও ঐতিহাসিক নয়, ঘটনা বিকৃত হতে দিইনি"।


আরও পড়ুন : রাজশেখর বসু সম্পর্কে  ]


গোপাল হালদারের প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা :-

১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে গোপাল হালদার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী স্মৃতি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

গোপাল হালদার ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে শরৎ স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে “রূপনারায়ণের কূলে” -র দ্বিতীয় খন্ডের জন্য গোপাল হালদার রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

“রুশ সাহিত্যের রূপরেখা” গ্রন্থের জন্য গোপাল হালদার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন।

১. ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

২. ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়

৩. ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

৪. ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

৫. ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
গোপাল হালদার কে সান্মানিক ডক্টরেট উপাধি তে ভূষিত করে।

  • শৈলেশ বিশ্বাস গোপাল হালদারের জীবনী ও সাহিত্য বিষয়ে গবেষণা করেছেন। শৈলেশ বিশ্বাস রচিত গ্রন্থটির নাম - “গোপাল হালদার : কথাসাহিত্য”। গ্রন্থটি ২০০১ সালে প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে “সায়েন্স ফিকশন” জাতীয় গ্রন্থ রচনার স্রষ্টা  ]


Post a Comment

0 Comments