Subscribe Us

মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত নাটক

Madhusudan Dutta

মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত নাটক :


ঊনিশ শতকে  বাংলা সাহিত্যে অনেক ধারা প্রচলিত হয়, তাদের মধ্যে একটি ধারা হল নাট্যসাহিত্য। বাংলা সাহিত্যে যারা ভালো নাটক লিখেছিলেন তাদের মধ্যে মধুসূদন দত্তের নাম প্রথম উঠে আসে। নাট্য সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব আকস্মিক।

জন্ম  বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি।

জন্মপরিচিতি সম্পর্কে মধুসূদন দত্ত নিজেই লিখেছেন 

দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!

যশোরে সাগরদাঁড়ি কবতক্ষ তীরে

জন্মভূমিজন্মদাতা দত্ত মহামতী

রাজনারায়ণ নামেজননী জাহ্নবী

পিতা  রাজনারায়ণ দত্তছিলেন আইন ব্যবসায়ী এবং যশোরের খ্যাতিনামা জমিদার। ফরাসী ভাষায় অসাধারণ দক্ষতার জন্য তিনি ‘মুন্সী রাজনারায়ণ’ নামে পরিচিত ছিলেন।

মাতা  জাহ্নবী দেবী।

শিক্ষা জীবন  বাল্যকালে মায়ের তত্ত্বাবধানে গ্রামের পাঠশালায় তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়।

 বছর বয়সে কলকাতায় এলে তিনি খিদিরপুর গ্রামের স্কুলে ভর্তি হন এবং এই বিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং ল্যাটিন ভাষার সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে।

১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হিন্দু কলেজের জুনিয়ার বিভাগে ভর্তি হন।

তারপর তিনি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু কলেজের উচ্চতর বিভাগে ভর্তি হন এবং এই সময় তিনি ভূদেব মুখোপাধ্যায়গৌরদাস বসাক প্রমুখদের সহপাঠী হিসেবে পান। এই কলেজে দ্বিতীয় বিভাগে পড়ার সময় ‘স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক’ প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে শিবপুর বিশপস্ কলেজে ভর্তি হন এবং আখানে  বছর শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি সংস্কৃতগ্রিক  ল্যাটিন ভাষায় পণ্ডিত হয়ে উঠেন।

কর্মজীবন  ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে চেন্নাই গিয়ে তিনি শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত হন এবং সাথে সাথে বিভিন্ন ইংরেজি পত্র পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।

তারপর তিনি ‘Spectator’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক রূপে কাজ করেন।

১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে তিনি পুলিশ আদালতে চাকরি নেন।

১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদেশ (ইংল্যান্ডথেকে স্বদেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিযুক্ত হন।

দাম্পত্য জীবন  কবির দুই পত্নী। প্রথম পত্নী ইংরেজ কন্যা রেবকা ম্যাকটেভিয়াস। প্রথম পত্নীর সাথে কবির বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন। কবির দ্বিতীয় পত্নী এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া।

মৃত্যু - ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জুন কলকাতার জেনারেল হসপিটালে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুর পূর্বে মধুকবি নিজ হাতে সমাধি লিপি লিখে রেখে যান 

দাঁড়াও পথিক বড়জন্ম যদি তব

বঙ্গে তিষ্ঠ ক্ষণকাল সমাধিস্থলে।

জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি

বিরামমহীর কোলে মহানিদ্রাকৃত

দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন

 



  • ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে 'বেলগাছিয়া নাট্যশালায়' রামনারায়ণ তর্করত্নের "রত্নাবলী" নাটকের অভিনয় দেখে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তাই তিনি আক্ষেপ করে লিখেছিলেন -
    '' অলীক কুনাট্য রঙ্গে   মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে
                   নিরখিয়া প্রানে নাহি সয়''
এই মর্ম যন্ত্রণায় বাংলা নাট্য সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব।

  • মাদ্রাজে থাকাকালীন মধুসূদন দত্ত "RIZIA" নামে একটি নাটক লিখেছিলেন, কিন্তু নাটক টি প্রকাশিত হয়নি। এর পর বাংলা নাটক লেখেন। বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে তাঁর নাটক গুলিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয় - ১) পৌরাণিক নাটক, ২) ঐতিহাসিক নাটক এবং ৩) প্রহসন।

মধুসূদন দত্ত রচিত পৌরাণিক নাটক :

১. শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯)
২. পদ্মাবতী (১৮৬০)

মধুসূদন দত্ত রচিত ঐতিহাসিক নাটক :

১. কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)
২. মায়াকানন (১৮৭৪)

মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন‌ :

১. একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০)
২. বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬১)

মধুসূদন দত্ত রচিত অসমাপ্ত নাটক :

১. বিষ না ধনুর্গুন (১৮৭১)
২. সুভদ্রা


তাঁর রচিত নাটকগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা :

শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯)

মধুসূদন দত্তের প্রথম নাটক। 
এটি একটি পৌরাণিক নাটক। 
১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে নাটক টি রচনা শুরু করলেও প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে।
মহাভারতের আদি পর্বের শর্মিষ্ঠা-যযাতি-দেবযানী আখ্যান এই নাটকের মূল উৎস। এই তিন চরিত্রের প্রনয় দ্বন্দ্বই নাটকের মূল বিষয়। এই নাটকে মধুসূদন শেক্সপিয়রের রীতি অনুসরণ করেছেন। 
৩ সেপ্টেম্বর ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে 'বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে' নাটক টি অভিনীত হয়।


পদ্মাবতী (১৮৬০) :

এটি তাঁর দ্বিতীয় নাটক। "শর্মিষ্ঠা" নাটকের ভুল ত্রুটি সংশোধন করার জন্য মধুসূদন "পদ্মাবতী" নাটক রচনা করেন।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে নাটক টি প্রকাশিত। 
নাটকটি গ্রীক পুরাণে প্রসিদ্ধ গল্প “Apple of Discord” অবলম্বনে রচিত। নাটকে সুন্দরী নারীর ঈর্ষা দেখানো হয়েছে। 
এই নাটকে কলি নামক চরিত্রের মুখে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই নাটকটি অভিনীত হয়নি।


কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) :

এই নাটক টি মধুসূদন দত্তের শ্রেষ্ঠ নাটক।
এটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক ঐতিহাসিক ট্র‍্যাজেডি নাটক।
নাটক টি রচনা সম্পূর্ণ হয় ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ সেপ্টম্বর, প্রকাশিত হয় ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে।
কর্ণেল টডের 'Annals and Antiquities of Rajasthan ' গ্রন্থের একটি করুণ আখ্যানকে নাটকের বিষয় করে তোলা হয়েছে। রানা ভীম সিংহের কন্যা কৃষ্ণকুমারীর রূপে গুনে মুগ্ধ হয়ে রাজা মানসিংহ ও জয়সিংহ বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব অগ্রাহ্য হলে রাজ্য ধূলিসাৎ করার হুমকি দেয়। পিতা ও রাজ্যকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণকুমারীর আত্মবিসর্জন দেন। 
নাটকটি পাঁচ অংক বিশিষ্ট। 
নাটকটি উৎসর্গ করেন কেশবচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়কে।
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮ ফেব্রুয়ারি 'শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি' তে নাটক টি প্রথম অভিনীত হয়। পরে 'জোড়াসাঁকো নাট্যমঞ্চ' ও 'ন্যাশনাল থিয়েটারে' অভিনীত হয়।


মায়াকানন (১৮৭৪) :

মধুসূদন দত্তের শেষ নাটক।
প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। জীবিতকালে নাটক টি মুদ্রিত হয় নি। 
রোগশয্যায় থাকাকালীন তিনি এই নাটক টি রচনা করেন।
পৌরাণিক যুগের পটভূমিতে নাটক টি তিনি রচনা করেন। নাটকের আখ্যানভাগ কাল্পনিক।
নাটকটি ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ই এপ্রিল বেঙ্গল থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়।


মধুসূদন দত্ত রচিত নাটকগুলির চরিত্র :

. “শর্মিষ্ঠা” - দেবযানী, শর্মিষ্ঠা, যযাতি প্রমুখ।

২. "পদ্মাবতী” - শচী, রতি, মুরজা, পদ্মাবতী, ইন্দ্রনীল প্রমুখ।

৩. “কৃষ্ণকুমারী” - কৃষ্ণকুমারী, ভীম সিংহ, বলেন্দ্র সিংহ, সত্য দাস, অহল্যা প্রমুখ।

৪. “মায়াকানন” - অজয়, মদন, ইন্দুমতী, শশীকলা, সুভদ্রা প্রমুখ।

৫. “একেই কি বলে সভ্যতা” - নবকুমার, কালিনাথ, হরকামিনী, কমলা প্রমুখ।

৬. “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ” - ভক্তপ্রসাদ, গদাধর, হানিফ গাজি, ফতেমা পঞ্চানন প্রমুখ।


  • মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন ২ টি খুব জনপ্রিয় হলেও 'বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে' অভিনীত হয়নি।
  • “একেই কি বলে সভ্যতা” প্রহসন টি 'শোভাবাজার থিয়োট্রিক্যাল সোসাইটি' তে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।

Post a Comment

5 Comments

  1. ধন্যবাদ ����

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ স্যার🙏

    ReplyDelete
  3. অনুবাদ ও অনুষঙ্গের উপর কিছু পোস্ট করুন.. বিশেষত আন্তর্জাতিক সাহিত্য বিষয়ক...

    ReplyDelete
  4. ধন্যবাদ

    ReplyDelete