ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত |
• জন্ম – ১৮১১ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই মার্চ চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁচড়াপাড়া গ্রামে এক সাধারণ বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
• পিতা – হরিনারায়ণ গুপ্ত।
• মাতা – শ্রীমতি দেবী।
• পিতামহ – গোপীনাথ গুপ্ত।
• প্রপিতামহ – নিধিরাম গুপ্ত ছিলেন একজন সুবিখ্যাত কবিরাজ ।
• স্ত্রী – দুর্গামনি দেবী রেবা।
[ আরও পড়ুন : বাংলার বায়রন সম্পর্কে ]
• ছদ্মনাম / উপাধি – ভ্রমণকারী বন্ধু । তিনি ‘গুপ্ত কবি’ নামে সমাধিক পরিচিত ছিলেন ।
• শিক্ষাজীবন – মাত্র ১০ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগের পর তিনি জোড়াসাঁকোয় মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন ।
শৈশবে লেখা পড়ায় অমনোযোগী হওয়ার কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি দূর এগোয়নি।
• কর্মজীবন – ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ২৮ শে জানুয়ারি যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুর এবং প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশের প্রেরণায় ঈশ্বর গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সম্পাদনায় নিযুক্ত হন ।
১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘সংবাদ রত্নাবলী’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন ।
১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক ‘পাষণ্ড’ পত্রিকার সাথে সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন ।
• মৃত্যু – ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪ শে জানুয়ারি যুগ সন্ধিক্ষণে কারী কবি পরলোকগমন করেন ।
• সঞ্জীব কুমার বসু তাঁর “ঈশ্বরগুপ্ত ও বাংলা সাহিত্য” গ্রন্থে ঈশ্বর গুপ্তকে ‘যুগ সন্ধিক্ষণের কবি’ বলেছেন ।
[ আরও পড়ুন : “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা সম্পর্কে ]
• সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ঈশ্বর গুপ্ত সম্পর্কে বলেছেন –
“একদিকে তিনি ছিলেন The last of the Ancients আর অন্যদিকে তেমনি ছিলেন The first of the Moderns”.
• সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঈশ্বর গুপ্ত সম্পর্কে বলেছেন –
“ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গে তৎকালীন সমাজের নানা অনাচার ও বিশৃঙ্খলাকে তিনি পরিহাসের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন । এই রঙ্গ ব্যঙ্গে উতরোল কবিতা গুলিতেই তাঁর প্রতিভা যথার্থ বিকাশের পথ খুঁজে পেয়েছে” ।
• ঈশ্বর গুপ্তের কবিতায় তৎকালীন সময়কার বাঙালি চিত্তেরই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ।
• ঈশ্বর গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’(১৮৩১), ‘সংবাদ রত্নাবলী’(১৮৩২), ‘সাপ্তাহিক পাষণ্ড’(১৮৪৬) এবং ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’(১৮৪৭) – এই চারটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ।
• ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার মাসিক সংস্করণে ঈশ্বর গুপ্ত – রামনিধি গুপ্ত, রামপ্রসাদ সেন, গোঁজলা গুঁই, রাম বসু, হরু ঠাকুর প্রমুখ প্রাচীন কবি ও তাঁদের অপ্রকাশিত রচনা সম্পর্কে আলোচনা করেন ।
[ আরও পড়ুন : কিছু বাংলা গ্রন্থের পূর্বনাম ]
ঈশ্বর গুপ্ত রচিত গ্রন্থসমূহ :
• কবিবর রামপ্রসাদ সেনের “কালীকীর্তন” ১৮৩৩• কবিবর ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জীবনবৃত্তান্ত ১৮৫৫
• প্রবোধ প্রভাকর ১৮৫৮
তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থ :
• হিতপ্রভাকর ১৮৬১• বোধেন্দু বিকাশ ১৮৬৩
• ভ্রমণকারী বন্ধুর পত্র ১৮৬৩
• সত্যনারায়ণ পাঁচালী
• কবিতাবলী ১৮৮৫ (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত)
• ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর সম্পাদক রূপে ঈশ্বর গুপ্ত পরবর্তী কবিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, মনোমোহন বসু প্রমুখ সাহিত্যিক ঈশ্বর গুপ্তকে গুরু হিসেবে গ্রহণ করেছেন ।
[আরও পড়ুন : “মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে”-র কবি সম্পর্কে ]
• রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কাঞ্চী কাবেরী”, হেমচন্দ্রের “চিন্তাতরঙ্গিনী” ও “বীরবাহু” কাব্যে গুপ্ত কবির প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।
• কৌলীন্য প্রথাকে বিদ্রূপ করে ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন –
“পোকাধরা শোঁকা ভার কুলের আচার ।
এ দেশের কুলধর্ম করগো সংহার ।।”
• ফিরিঙ্গি শিক্ষায় শিক্ষিত উদ্ধত বাঙালি মেয়েদের প্রতি তাঁর বিদ্রূপ –
“যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে
কেতাব হাতে নিচ্ছে তবে
তখন এ.বি শিখে বিবি সেজে
বিলাতি বোল কবেই কবে ।”
• বিলাতি মহিলা সম্পর্কে ঈশ্বর গুপ্তের উক্তি –
“বিড়ালাক্ষী বিধুমুখী মুখে গন্ধ ছুটে,
আহা তায় রোজ রোজ কত ‘রোজ’ ফুটে ।”
• খ্রিষ্টানি রেওয়াজ ও তাদের অনুসারীদের প্রতি তাঁর ব্যঙ্গ -
“ধন্য রে বোতলবাসী ধন্য লাল জল
ধন্য ধন্য বিলেতের সভ্যতা সকল ॥
দিশি কৃষ্ণ মানিনেক’ ঋষিকৃষ্ণ জয়
মেরি দাতা মেরিসুত বেরি গুডবয় ॥”
• ইংরেজি শেখা মেয়েদের তিনি ব্যঙ্গ করেছেন এভাবে -
“আগে মেয়েগুলো ছিল ভাল ব্রতধর্ম কর্তো সবে।
একা বেথুন এসে শেষ করেছে আর কি তাদের তেমন পাবে ॥”
[ আরও পড়ুন : আলোচনা : বাংলার মপাসাঁ সম্পর্কিত ]
• প্রথম দিকে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা করে এ বিষয়ে নানা ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করলেও পরে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থন, ধর্মসভার বিরোধিতা, দেশের বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং দরিদ্র জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে উদার মনোভাবের পরিচয় দেন।
• ঈশ্বর গুপ্তের সারাজীবন মোটেই সুখের হয়নি৷
‘ঈশ্বরগুপ্ত, সাংবাদিক কবি ও গদ্যশিল্পী’তে ড. রেণুপদ ঘোষ লিখেছেন -
“তাঁর সেই ব্যর্থ দাম্পত্যজীবনের দুঃখ বা গ্লানির মত অসুস্থতা থেকে ‘সংবাদ প্রভাকর’-ই ঈশ্বর গুপ্তকে মুক্তির নাসিংহোমের নির্ভুল ঠিকানা দিতে পেরেছিল৷”[ আরও পড়ুন : কথোপকথনের কবি সম্পর্কিত ]
পোস্টটি আপনার সামান্যতম উপকারে এলে, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন । ধন্যবাদ....
0 Comments