Subscribe Us

প্রমথ চৌধুরী : বাংলা সাহিত্যের বীরবল

প্রমথ চৌধুরী, বাংলা সাহিত্যের বীরবল


জন্ম১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট পৈতৃক নিবাস যশোরের পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে জমিদার বংশে।

পিতাদুর্গাদাস চৌধুরী।

মাতামগ্নময়ী দেবী।

শিক্ষা জীবনতিনি কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন।

এর পর তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এফ পাশ করেন।

তারপর তিনি ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ে অনার্স সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

পরের বছর ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণি তে এম ডিগ্রী লাভ করেন।

পরে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ড যান।

কর্ম জীবনবিদেশ থেকে ব্যারিস্টার হয়ে ফিরে আসে তিনি কলকাতার হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে তিনি প্রথম তাঁর কর্মজীবনের শুরু করেন। কিন্তু তিনি বেশি দিন এই কাজের সাথে যুক্ত থাকেন নি।

পরে তিনি আইন কলেজে অধ্যাপক রূপে যোগদান করেন।

তারপর তিনি কিছু দিন জোড়াসাঁকো ঠাকুর এস্টেটে চাকরি করেন।

তারপর তিনি যোগ দেন গোপাল লাল এস্টেটের রিসিভার হিসেবে। তাঁর খামখেয়ালি স্বভাবের জন্য তিনি নানান কাজের সাথে যুক্ত থাকলেও পরে তিনি সকল কাজ থেকে বিরতি নিয়ে সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন।

দাম্পত্য সঙ্গী১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রমথ চৌধুরী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।

এই বিবাহ সূত্রে প্রমথ চৌধুরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী জামাতা।

ছদ্মনামবীরবল।

সম্পাদিত পত্রিকাসবুজপত্র (মাসিক), বিশ্বভারতী (ত্রৈমাসিক), অলকা (মাসিক)।

মৃত্যু১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের রা সেপ্টম্বর বাংলা সাহিত্যের বীরবল বর্তমান বাংলাদেশের যশোহরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

 


  • প্রমথ চৌধুরিবাঙালী জাতির বিদুষকনামেও খ্যাতিমান। তিনি তাঁর ছদ্মনাম প্রসঙ্গে বলেছেন

আমি যখন দেশের লোককে রসিকতাচ্ছলে কতকগুলি সত্য কথা শোনাতে মনস্থ করি তখন আমি না ভেবে চিন্তে বীরবলের নাম অবলম্বন করলুম

 

  • প্রমথ চৌধুরী ছিলেন ফরাসী প্রাবন্ধিক মঁতনের অনুগামী।

 

  • ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দেসাধনা পত্রিকা’ – প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রবন্ধজয়দেবপ্রকাশিত হয়।

 

  • প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ তেল-নুন লকড়িপ্রকাশিত হয় ১৯০৬ সালে।

 

  • প্রমথ চৌধুরীর লেখা প্রথম কবিতা – “সনেট১৩১৯ বঙ্গাব্দেভারতী পত্রিকা’ – প্রকাশিত হয়।

 


প্রমথ চৌধুরী রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ :

তেলনুন লকড়ি

১৯০৬

বীরবলের হালখাতা

১৯১৭

নানাকথা

১৯১৯

আমাদের শিক্ষা

১৯২০

দু - ইয়ার্কি

১৯২১

বীরবলের টিপ্পনী

১৯২১

রায়তের কথা

১৯২৬

নানা চর্চা

১৯৩২

ঘরে বাইরে

১৯৩৬

১০

প্রাচীন হিন্দুস্থান

১৯৪০

১১

বঙ্গসাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

১৯৪৪

১২

আত্মকথা

১৯৪৬

১৩

প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে হিন্দু - মুসলমান

১৯৫৩

  

প্রমথ চৌধুরী রচিত গল্পগ্রন্থ :

চার ইয়ারী কথা

১৯১৬

আহুতি

১৯১৯

নীললোহিত

১৯৩২

গল্প সংকলন

১৯৪১

 


প্রমথ চৌধুরী রচিত কাব্যগ্রন্থ :

সনেট পঞ্চাশৎ

১৯১৩

পদচারণা

১৯১৯

 

 

প্রমথ চৌধুরী রচিত সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ :

  • সাহিত্যে খেলা
  • সাহিত্যে চাবুক
  • খেয়াল পাতা
  • কাব্যে অশ্লীলতা

 

প্রমথ চৌধুরী রচিত ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধ :

  • কথার কথা
  • বঙ্গভাষা
  • সাধু ভাষা বনাম চলিত ভাষা
  • আমাদের ভাষা সংকট

 

প্রমথ চৌধুরী রচিত শিক্ষা সম্বন্ধীয় প্রবন্ধ :

  • আমাদের শিক্ষা
  • বই পড়া
  • বাংলার ভবিষ্যৎ
  • শিক্ষার নব আদর্শ

 


প্রমথ চৌধুরী রচিত ইতিহাস সম্বন্ধীয় প্রবন্ধ :

  • হর্ষচরিত
  • রাজকুমার
  • বিজুলি খাঁ
  • পাঠান বৈষ্ণব

 

প্রমথ চৌধুরী রচিত সমালোচনামূলক প্রবন্ধ :

  • জয়দেব
  • চিত্রাঙ্গদা
  • ভারতচন্দ্র

 


প্রমথ চৌধুরীর উৎসর্গকৃত বিভিন্ন রচনা :

রচিত রচনা

যাঁদের উৎসর্গ করেন

বীরবলের হালখাতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নানাকথা

অতুলচন্দ্র গুপ্ত

ঘরে বাইরে

সত্যেন্দ্রনাথ বসু

পদচারণা

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

চার ইয়ারী কথা

ইন্দিরা দেবী

আহুতি

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

নীললোহিত

ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

অনুকথা সপ্তক

অমিয় চক্রবর্তী

ঘোষালের ত্রিকথা

সোমনাথ মৈত্র

 

  • প্রমথ চৌধুরী ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভারতী পত্রিকা’ –য় ‘বীরবল’ ছদ্মনামে মাসকাবারি লেখায় চলিত ভাষার সপক্ষে লিখতে শুরু করেন।

 

  • প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র পত্রিকা’ –র আত্মপ্রকাশ ঘটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে অর্থাৎ ২৫ শে বৈশাখ এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ১ বছর পর ১৯১৪ সালে (১৩২১ বঙ্গাব্দ)।

পত্রিকাটির প্রচ্ছদ এঁকে দেন নন্দলাল বসু, একটি সবুজ তালপাতা।

এই পত্রিকা প্রকাশের প্রথম দিকে নিয়মিত লিখতেন – সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

 

  • প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে প্রথম ফরাসী ছোট গল্পের আঙ্গিক রীতির পরিচয় করিয়েছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক হিসেবেও তিনি খ্যাত। রচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যে নিজস্ব ধারার সনেট

 

  • তাঁর মতে সাহিত্যের উপাদান প্রকৃতি এবং মানব জীবন। মানব জীবনের সাথে যার কোন সম্বন্ধ বা যোগ নেই তা সাহিত্য নয়।

 

  • প্রমথ চৌধুরী সম্পর্কে বুদ্ধদেব বসু কালের পুতুল” গ্রন্থে বলেছেন –

“রবীন্দ্রনাথের বয়োকনিষ্ঠ এমন কোন লেখক নেই যাঁর উপর তাঁর প্রভাব না পড়েছে, কিন্তু বয়োকনিষ্ঠ লেখকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পেরেছেন একমাত্র প্রমথ চৌধুরী”

 


“তেল – নুন লকড়ি” (১৯০৬) –

রাষ্ট্র ও সমাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ।

অজ্ঞতা এবং যুক্তিহীনতা যে মানুষের উন্নতির অন্তরায় সে বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন এই রচনায়। জাতি যে অন্ধ অনুকরণের নেশায় মত্ত হয়েছিল তা থেকে মুক্তির উপায় নির্দেশ করেছেন এই গ্রন্থে।

 

“রায়তের কথা” (১৯২৬) –

রাষ্ট্র ও সমাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ।

এই গ্রন্থের ভূমিকা লেখেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

  • প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ পাঠ করে পাঠকের মনের কথা রথীন্দ্রনাথ রায় তাঁর “বাংলা সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরী” গ্রন্থে তুলে ধরেছেন ঠিক এই ভাবে –

কথা বলাকে এখানে তিনি কথা কলায় পরিণত করেছেন”।

 

  • প্রমথ চৌধুরীর বিভিন্ন রচনায় ফুটে উঠেছে তির্যক ব্যাঙ্গ এবং সুক্ষ্ণ পরিহাস রসিকতা। এই জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গদ্য কে “ইস্পাতের ছুরি” বলেছেন (২২.৪.১৯১৩ তে রচিত ১৫ সংখ্যক পত্রে)।

 

  • হীরকদ্যুতিময় বাক্যে সমৃদ্ধ প্রমথ চৌধুরীর বিভিন্ন রচনা –

বই কিনে কেউ দেউলে হয় না। যে জাতির যত বেশি লোক যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত সভ্য”।

যতদূর পারা যায়, যে ভাষায় কথা কই সেই ভাষায় লিখতে পারলেই লেখা প্রাণ পায়”।

তথাকথিত সাধু ভাষা সম্বন্ধে আমার প্রধান আপত্তি এই যে, ওরূপ কৃত্রিম ভাষায় আর্টের কোন স্থান নেই” (সাধু ভাষা প্রসঙ্গে)।


Post a Comment

0 Comments