Subscribe Us

স্বর্ণকুমারী দেবী : প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক

 স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক  -  

এই ব্লগপোষ্টে প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী দেবী  -র জীবন পঞ্জি, তাঁর রচিত উপন্যাস, নাটক, গল্পগ্রন্থ, কাব্য, কবিতা, শিশু পাঠ্য ও অনান্য রচনা, তাঁর উৎসর্গকৃত রচনা এবং তাঁর রচিত উপন্যাসগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


স্বর্ণকুমারী দেবী, প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক, প্রথম বাঙালি মহিলা উপন্যাসিক


জীবন পঞ্জি -

জন্ম – কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে ১৮৫৫ সালের ২৮ শে আগষ্ট।

পিতা – মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

মাতা – সারদা সুন্দরী দেবী। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন তাঁদের চতুর্থ কন্যা। তাঁর ৩ দিদির নাম – সৌদামিনী, সুকুমারী ও শরৎকুমারী। ভ্রাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে তিনি ৫ বছরের বড়ো।

শিক্ষা জীবন – তিনি মূলত বাড়িতেই পড়া শোনা শিখেছিলেন।

স্বামী – মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৮৬৭ সালের ১৭ ই নভেম্বর ন্দীয়া জেলের এক বিখ্যাত পরিবারের সুশিক্ষিত, সমাজ সচেতন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানকীনাথ ঘোষালের সাথে তাঁর বিবাহ হয়।

সন্তান – হিরন্ময়ী দেবী, জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল, সরলা দেবী চৌধুরানী।

মৃত্যু – ১৯৩২ সালের ৩রা জুলাই ৭৭ বছর বয়সে স্বর্ণকুমারী দেবী পরলোকগমন করেন।

 

  • ১৮৫১ সালে হানা ক্যাথারিন মুলেন্স “ফুলমণি ও করুণার বৃতান্ত” প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা ঔপন্যাসিকের মর্জাদা লাভ করেছিলেন।

কিন্তু স্বর্ণকুমারী দেবীই হলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক

 

  • স্বর্ণকুমারী দেবী ঠাকুর বাড়ির ‘ভারতী পত্রিকা’ –য় ১২৯১ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩০২ বঙ্গাব্দ এবং ১৩১৫ থেকে ১৩২১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মোট ২ বার সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

 

  • ১৯২৭ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন।

 

  • মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস “দীপনির্বান” প্রকাশিত হয়।

 

স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত উপন্যাস :

 

দীপ নির্বাণ, ১৮৭৬

 

ছিন্নমুকুল, ১৮৭৯

 

মালতী ১৮৮০

 

মিবাররাজ, ১৮৮৭

 

হুগলীর ঈমামবাড়ি, ১৮৮৮

 

স্নেহলতা, ১৮৯০,১৮৯৩

 

বিদ্রোহ, ১৮৯০

 

ফুলের মালা, ১৮৯৫

 

কাহাকে, ১৮৯৮

১০

 

রাজকন্যা, ১৯১৩

১১

 

বিচিত্রা, ১৯২০

১২

 

স্বপ্নবাণী, ১৯২১

১৩

 

মিলনরাত্রি, ১৯২৫




স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত নাটক - প্রহসন :

বসন্ত উৎসব, ১৮৭৬ 

 বিবাহ উৎসব, ১৮৯২

 কৌতুকনাট্য ও বিবিধ কথা, ১৯০১

 দেবকৌতুক, ১৯০৬

 কনে বদল, ১৯০৬

পাকচক্র, ১৯১১ 

 নিবেদিতা, ১৯১৭

 যুগান্ত, ১৯১৮

 

স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত গল্পগ্রন্থ :

গল্পসল্প, ১৮৮৯ 

 নবকাহিনী, ১৮৯২

 


স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত শিশু পাঠ্য ও অনান্য রচনা :

সচিত্র বর্ণবোধ, ১৯০২ 

 বাল্যবিনোদ, ১৯০২

 আদর্শনীতি, ১৯০৪

 প্রথম পাঠ্য ব্যাকরণ, ১৯১০

 বিদায় গ্রহণ, ১৯১৫

 

স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত কাব্য – কবিতা :

গাঁথা, ১৮৮০ 

 হাসি ও অশ্রু, ১৮৯৫

 কবিতা ও গান, ১৮৯৫

 

 

স্বর্ণকুমারী দেবীর উৎসর্গকৃত রচনা : 

দীপ নির্বান

মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ছিন্নমুকুল

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

বসন্ত উৎসব

শরৎকুমারী চৌধুরানী

গাথা 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  

 পৃথিবী

পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 

মিবাররাজ  

ইন্দিরা দেবী 

 স্নেহলতা

গিরীন্দ্র মোহিনী দাসী 

 নবকাহিনী

স্বা্মী জানকীনাথ ঘোষাল 

 রাজকন্যা

প্রসাদ কুমার ও কল্যাণী  

১০

হুগলীর ইমাম বাড়ি 

স্বা্মী জানকীনাথ ঘোষাল  

১১

কাহাকে  

স্বা্মী জানকীনাথ ঘোষাল  

১২

কৌতুক নাট্য ও বিবিধ কথা 

কন্যা হিরন্ময়ী দেবী (মুখোপাধ্যায়) 

১৩

কনে বদল 

পুত্র জ্যোৎস্নানাথ  

১৪

নিবেদিতা  

সুনীতি দেবী 

১৫

যুগান্ত  

পুত্র জ্যোৎস্নানাথ   

১৬

বিচিত্রা  

কন্যা হিরন্ময়ী দেবী (মুখোপাধ্যায়)  

১৭

দিব্যকমল  

স্বর্গতা মা সারদা দেবী  



  • স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন – “পৃথিবী” ১৮৮২ (২৭ টি প্রবন্ধ বর্তমান)।

 

  • স্বর্ণকুমারী দেবীর কবিতা রচনায় বিহারীলাল চক্রবর্তী অক্ষয় চন্দ্র চৌধুরী –র প্রভাব লক্ষ করা যায়।

 

  • স্বর্ণকুমারী দেবীর “গাঁথা” কাব্যে যে চারটি কবিতা সংকলিত আছে তা অক্ষয় চন্দ্র চৌধুরী –র অনুসরণে লেখা এবং ছন্দে অনুসরণ করেন বিহারীলাল চক্রবর্তী কে।

 

"দীপ নির্বাণ" (১৮৭৬) :

স্বর্ণকুমারী দেবীর রচিত প্রথম উপন্যাস (ইতিহাসাশ্রয়ী)।

পৃথ্বিরাজ – সংযুক্তার কাহিনী, চিতোর রাজের পারিবারিক ইতিহাস, মহম্মদ ঘোরীর দিল্লী আক্রমন এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

উপন্যাস টি তিনি মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে উৎসর্গ করেছিলেন।

উপন্যাস প্রকাশ কালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংল্যাণ্ডে ছিলেন। উপন্যাস টি তাঁকে উৎসর্গ করার দরুণ উপন্যাসের একটি কপি তাঁর কাছে পাঠানো হয়। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ভেবেছিলেন তাঁর ছোটভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছদ্মনামে উপন্যাস টি রচনা করেছেন। তাই তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর কে অভিনন্দন জানিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন –

“জ্যোতির জ্যোতি কি প্রচ্ছন্ন থাকিতে পারে?

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি যে উপন্যাস টি একজন মহিলা রচনা করেছেন।

 

       

"ছিন্নমুকুল" (১৮৭৯) :

স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম পারিবারিক উপন্যাস এটি।

উপন্যাস টি ১২৮৫ বঙ্গাব্দ থেকে ১২৮৬ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে ‘ভারতী পত্রিকা’ –য় প্রকাশিত হয়।

প্রবোধ ও হিরণ কুমার এবং নীরজা ও কনক এই চার জন নারী – পুরুষের ব্যর্থ প্রেমের স্বরূপ এই উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে।

 

"মিবাররাজ" (১৮৮৭) :

স্বর্ণকুমারী দেবী কর্ণেল টডের “Annal and Antiquities of Rajasthan” –এর রাজপুতানা ইতিহাস পড়ার পর তিনি এই উপন্যাস টি রচনা করেন।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু তে রয়েছে রাজপুতদের বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের কাহিনী। আছাড়া ও ভীল জাতীর রাজভক্তি, বিশ্বাস প্রবনতা, চিরাচরিত প্রথার প্রতি আনুগত্য এই ক্ষুদ্র উপন্যাস টি তে খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।

 

"স্নেহলতা" (১৮৯০, ১৮৯৩) :

উপন্যাস টি প্রথমে “পালিতা” নামে প্রকাশিত হয়।

পরে “স্নেহলতা” নামে ‘ভারতী পত্রিকা’ –য় ১২৯৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যা থেকে ১২৯৮ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়।

নায়িকা হতভাগিনী বিধবা স্নেহলতার আত্মত্যাগই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। এছাড়াও এই উপন্যাসে কৌলীণ্য প্রথার তীব্র সমালোচনা করা হয়।

এই উপন্যাস টি স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখা বৃহৎ উপন্যাস। উপন্যাস টি ২ টি খণ্ডে বিভক্ত।

 

       

"কাহাকে" (১৮৯৮) :

শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন –

“এটি লেখিকার সর্বোৎকৃষ্ট উপন্যাস"।

এই উপন্যাস টি লেখিকা স্বয়ং “An Unfinished Song” নামে অনুবাদ করেছিলেন।

পরে ১৯১০ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর ভাইঝি শোভনা দেবী “The Whom” নামে কলকাতা থেকে ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন।

এই উপন্যাস প্রসঙ্গে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন –

“এই উপন্যাসে আধুনিক শিক্ষিতা নারীর মনোবিশ্লেষণে স্বর্ণকুমারীর নিপুন দক্ষ”
(বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, নবম খণ্ড, ২০০২, পৃষ্ঠা – ১৪৩)।


Post a Comment

0 Comments