Subscribe Us

কৃষ্ণদাস কবিরাজ - শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনীকার

কৃষ্ণদাস কবিরাজ, শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনীকার, কৃষ্ণদাস কবিরাজ - শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনীকার

কৃষ্ণদাস কবিরাজ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান কৃতবিদ্য কবি। বৈষ্ণবীয় ধর্মাদর্শে দীক্ষিত হয়েও তিনি নীরস তত্ত্বদর্শন কে কবিতার রসাশ্রিত করে তুলেছেন। তাঁর কাব্যে গীতমূর্চ্ছনা না থাকলেও দূরহ জটিল তত্ত্বকথা একান্ত সহজ সরল ও ঋজু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষ্ণদাস কবিরাজ –এর কাব্য বৈষ্ণব দর্শন কে উপলব্ধি করার দর্পন স্বরূপ। নিম্নে কৃষ্ণদাস কবিরাজ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

 


জন্ম – সম্ভ্রান্ত বৈদ্য বংশে বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে ঝামটপুর গ্রামে।

কবির জন্মসাল নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে –

১। সতীশচন্দ্র রায় এবং জগবন্ধু ভদ্র –এর মতে কবি কৃষ্ণদাসের জন্মসাল ১৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দ।

২। বিমানবিহারী মজুমদার মনে করেন ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা – ভগীরথ।

মাতা – সানন্দা দেবী।

ভ্রাতা – শ্যামদাস।

গুরু – কৃষ্ণদাস কবিরাজের দীক্ষাগুরু বা মন্ত্রগুরু ছিলেন নিত্যানন্দ।

তবে কবি শিক্ষাগুরু বলে উল্লেখ করেছেন বৃন্দাবনের প্রধান ৬ বৈষ্ণব গুরুদের। অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাগুরুরা হলেন – সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী, জীব গোস্বামী, রঘুনাথ ভট্ট, রঘুনাথ দাস ও গোপাল ভট্ট।

গ্রন্থারম্ভে কৃষ্ণদাস কবিরাজ দীক্ষাগুরু নিত্যানন্দ সম্পর্কে বলেছেন –

“নিত্যানন্দরায় প্রভুর স্বরূপপ্রকাশ

তাঁর পাদপদ্ম বন্দোঁ যাঁর মুঞি দাস।”

উপাধি - কবি ভূপতি ( রঘুনাথ দাস কর্তৃক প্রাপ্ত)।

জাতি – বৈদ্য।

মৃত্যু – জগবন্ধু ভদ্রের মতে কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ ১৫০৪ শকাব্দে অর্থাৎ ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে পরলোকগমন করেন।

 

কৃষ্ণদাস কবিরাজ হলেন শ্রেষ্ঠ চৈতন্যজীবনীকার। তাঁর রচিত চৈতন্যজীবনী কাব্যগ্রন্থের নাম “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত”।

কবি কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্যের ভণিতায় নিজেকে “রূপ গোসাঞির ভৃত্য” বলেছেন।


আরও পড়ুন : একই বা প্রায় একই নামের ভিন্ন রচনা ।

 

কৃষ্ণদাস কবিরাজের রচিত কাব্যগ্রন্থ -

কৃষ্ণদাস কবিরাজ মোট ৩ টি গ্রন্থ রচনা করেন। ২ টি সংস্কৃত ভাষায় এবং ১ টি বাংলা ভাষায়। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল –

১। সারঙ্গরঙ্গদা (কৃষ্ণকর্ণামৃতের টীকা)

২। গোবিন্দলীলামৃত (২৩ সর্গে রচিত মহাকাব্য)

৩। শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত

 

“শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্য প্রসঙ্গে আলোচনা -

কাব্যের রচনাকাল – এই কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে কৃষ্ণদাস কবিরাজের জন্মসালের মতই মতবিরোধ রয়েছে।

১। সুকুমার সেনের মতে কৃষ্ণদাস করিরাজ কাব্য টি ১৫৬০ থেকে ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচনা করেন।

২। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন ১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দের পর কৃষ্ণদাস করিরাজ এই কাব্য রচনায় হস্তক্ষেপ করেন। কাব্য টি রচনা সমাপ্ত হয় সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে।

৩। ডঃ বিমানবিহারী মজুমদার জানিয়েছেন এই কাব্য ১৬১২ থেকে ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লেখা সমাপ্ত হয়। তাঁর মতে কবি কৃষ্ণদাস করিরাজ ১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে কাব্য টি রচনা শুরু করেন।

“শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্যটিকে ‘গৌড়িয় বৈষ্ণব দর্শনের রসভাস্য’ বলা হয়।

“শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ চৈতন্য জীবনী কাব্য

“শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্যটি মোট ৩ টি লীলা এবং ৬২ টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। কবি এই কাব্যে ‘খণ্ড’ শব্দটি ব্যবহারের পরিবর্তে ‘লীলা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। ৩ টি লীলা হল –

ক। আদিলীলা – ১৭ টি পরিচ্ছেদ

খ। মধ্যলীলা – ২৫ টি পরিচ্ছেদ এবং

গ। অন্ত্যলীলা – ২০ টি পরিচ্ছেদ অর্থাৎ মোট ৬২ টি পরিচ্ছেদ বর্তমান।

“শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্য টি ১১,৫২৬ টি শ্লোকে সমন্বিত। এর মধ্যে প্রায় ৪,০০০ শ্লোক সংস্কৃতি শ্লোকের উদ্ধৃতি।

ডঃ সুকুমার সেন “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্য প্রসঙ্গে বলেছেন –

“চৈতন্যচরিতামৃত’ প্রচার হইবার পর হইতেই ইহা ভাগবত ও গীতা ছাড়া প্রায় সমস্ত বৈষ্ণব শাস্ত্র ও সিদ্ধান্তগ্রন্থ কে অপ্রয়োজনীয় করিয়া দিয়াছে। মিষ্টিক বৈষ্ণব সাধকদের কাছে তাহা ‘চৈতন্যচরিতামৃত’-ই একমাত্র শাস্ত্র”।

 

অধ্যাপক সঞ্জীব চৌধুরী “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্যের অনুবাদের ভূমিকায় একটি মূল্যবান মন্তব্য করেছেন –

“Chaitanya Charitamrita, like the Bible, Koran and the Geeta, is a work of world-wide importance, and the study of this book is bound to open to the earnest readers of all lands and faiths deepest secrets of Divine Love”.

 

সপ্তদশ শতাব্দী তে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী সংস্কৃত ভাষায় “শ্রী শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” কাব্যের টীকা রচনা করেন।


আরও  পড়ুন -


To join our FB Page - CLICK HERE.

Post a Comment

0 Comments