Subscribe Us

ভারতচন্দ্র রায় - মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি

ভারতচন্দ্র রায়, মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি, অন্নদামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল কাব্য

ভারতচন্দ্র রায় - মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ কবি

ঈশ্বরগুপ্ত ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভারতচন্দ্র রায় –এর জীবনী নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন। তিনি ভারতচন্দ্র রায় –এর পৌত্র তারানাথ রায়ের কাছ থেকে কবি ভারতচন্দ্র রায় সম্পর্কিত নানান তথ্য এবং অনেক অপ্রকাশিত কবিতা সংগ্রহ করেন। আইসকল তথ্যগুলি ঈশ্বরগুপ্ত ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। এবং তিনি (ঈশ্বরগুপ্ত) ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের আষাঢ় মাসে বাংলা সাহিত্যে ভারতচন্দ্র রায় –এর জীবনী “কবিবর ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জীবনবৃতান্ত” নামে প্রথম প্রকাশ করেন।



জন্ম – ঈশ্বরগুপ্ত এর মতে ভারতচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অর্থাৎ ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তবে আধুনিক সমালোচকদের মতে ভারতচন্দ্র রায় ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।

জন্মস্থান – হাওড়া জেলার ভুরসুট পরগণার পেঁড়ো গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারে।

পিতা – নরেন্দ্রনারায়ণ রায়, ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত ভূমধ্যিকারী। বর্ধমানের মহারাজের সাথে বিবাদের জেরে তিনি সর্বস্বান্ত হন।

মাতা – ভবানী দেবী।

কৌলিক উপাধি – মুখ্যোপাধ্যায়।

শিক্ষা জীবন – মামার বাড়িতে আসে তাজপুর গ্রামে ভারতচন্দ্র রায় ব্যাকরণ এবং সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা লাভ করেন।

পরে হুগলী জেলার দেবানন্দ পুর গ্রামে বাঁশবেড়িয়ার বিখ্যাত রামচন্দ্র মুন্সীর কাছে ফরাসী ভাষা শেখেন। সেই সময় অর্থকারী ফরাসী ভাষা শিক্ষা লাভই জীবীকার প্রধান অবলম্বন হওয়ায় কবি ভারতচন্দ্র রায় ফরাসী ভাষা শেখেন।

কর্ম জীবন – ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতচন্দ্র রায় নবদ্বীপের মহারাজা রাজকৃষ্ণের রাজসভায় মাসিক ৪০ টাকা বেতনে সভাকবি হিসেবে নিযুক্ত হন।

দাম্পত্য জীবন – মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভারতচন্দ্র রায় সারদা গ্রামের কেশরকুনি আচার্য্যের বালিকা কন্যা কে বিবাহ করেন।

সন্তান – ৩ পুত্র, পরীক্ষিৎ, রামতনু এবং ভগবান।

উপাধি – রায়গুণাকর, যুগসন্ধির কবি, রাজসভার কবি, নাগরিক কবি।

মৃত্যু – ঈশ্বরগুপ্তের মতে ভারতচন্দ্র রায় ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে মূলাজোড় গ্রামে বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে দেহত্যাগ করেন।



  • ভারতচন্দ্র রায় মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ এবং শেষ কবি।

  • ভারতচন্দ্র রায় –এর প্রথম রচনা সত্যপীরের পাঁচালী” (১৭৩৮)।

  • ভারতচন্দ্র রায় –এর শ্রেষ্ঠ কাব্যের নাম “অন্নদামঙ্গল”।

  • ভারতচন্দ্র রায় কে বিদেশী সাহিত্যিক টমাস হার্ডির সঙ্গে তুলনা করা হয়।

  • বৈষ্ণব বেশ ধারণের জন্য কবি ভারতচন্দ্র রায় –এর নাম হয়েছিল মুনি গোঁসাই

 

ভারতচন্দ্র রায় রচিত বিভিন্ন রচনা :

১। সত্যপীরের পাঁচালী (১৭৩৮)

২। রসমঞ্জরী (১৭৪৯)

৩। নাগাষ্টক (১৭৫০)

৪। অন্নদামঙ্গল (১৭৫২)

৫। গঙ্গাষ্টক

৬। বিবিধ কবিতাবলী

৭। চণ্ডীনাটক (অসমাপ্ত নাটক)

 

ভারতচন্দ্র রায় রচিত রচনাগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা :

“সত্যপীরের পাঁচালী” (১৭৩৮) -

ভারতচন্দ্র রায় রচিত প্রথম কাব্য।

ঈশ্বরগুপ্তের মতে ভারতচন্দ্র রায় কাব্য টি রামচন্দ্র মুন্সীর নির্দেশে রচনা করেন।

কাব্য টি চৌপদী ছন্দে রচিত।

তবে এই কাব্য টি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।

 

“রসমঞ্জরী” (১৭৪৯) –

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গীতিকাব্যের সার্থক দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে এই কাব্যের নাম উল্লেখ করেছেন।

ত্রয়োদশ – চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রসিদ্ধ মৈথিল কবি ভানুদত্তের কামশাস্ত্র এবং অলঙ্কার শাস্ত্র মিলিয়ে ভারতচন্দ্র রায় এই কাব্য টি রচনা করেন।

সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্রে এবং কামসূত্রে নায়ক নায়িকাদের যেসকল লক্ষণ ফুটে উঠেছে তাই অনুসরণ করে কবি ভারতচন্দ্র রায় এই প্রকীর্ণ কবিতাগুলি রচনা করেছেন।

এই কাব্যের শুরুতে কবি ভারতচন্দ্র রায় নিজেই বলেছেন –

“রসমঞ্জরী রস     ভাষায় করিতে বশ

     আজ্ঞা দিলা রসে মিশাইয়া”।

 

“নাগাষ্টক” (১৭৫০) –

মূলজোড়া গ্রামে বসবাস কালে কবি এই কাব্য টি রচনা করেন।

কাব্য টি কবি ভারতচন্দ্র রায় সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন।

এই কাব্যে কবি মূলজোড়া গ্রামের স্থানীয় জমিদার রামচন্দ্র নাগের অত্যাচারের প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেছেন।

 

“অন্নদামঙ্গল কাব্য” (১৭৫২) –

এই কাব্য টি ভারতচন্দ্র রায় –এর শ্রেষ্ঠ কাব্য।

ভারতচন্দ্র রায় –এর “অন্নদামঙ্গল কাব্য” টি ৫০০ বছর ধরে বিস্তৃত মঙ্গলকাব্য ধারার শেষ কাব্য।

এই কাব্য প্রসঙ্গে কবি ভারতচন্দ্র রায় নিজেই লিখেছেন –

“নূতন মঙ্গল আশে          ভারত সরস ভাষে

          রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আজ্ঞায়”।

কবি ভারতচন্দ্র রায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আজ্ঞায় কাব্য টি রচনা করেন। এই কাব্য রচনার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান।

এই কাব্য রচনার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কবি ভারতচন্দ্র রায় কে ‘রায়গুণাকর’ উপাধি দেন।

কবি ভারতচন্দ্র রায় তাঁর এই কাব্য কে “নূতন মঙ্গল” বলেছেন।

কবি ভারতচন্দ্র রায় এই কাব্যের তৃতীয় খণ্ডে কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে লিখেছেন –

“বেদ লয়ে ঋষি রসে ব্রহ্ম নিরূপিলা।

সেই শকে এই গীত ভারত রচিলা”।

এই শ্লোক টি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় :

বেদ = ৪, ঋষি = ৭, রস = ৬ এবং ব্রহ্ম = ১। অঙ্কস্য বামা গতি, সেই অনুসারে ১৬৭৪ শক অর্থাৎ (১৬৭৪ শক + ৭৮ বছর) = ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে কবি এই কাব্য টি রচনা করেন।

কবি ভারতচন্দ্র রায় –এর “অন্নদামঙ্গল” কাব্য টি ৩ টি খণ্ডে ৮ টি পালায় বিভক্ত। এই কাব্যের ৩ টি খণ্ড হল –

১। অন্নদামঙ্গল অর্থাৎ দেবখণ্ড।

২। কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর অর্থাৎ নরখণ্ড কেন্দ্রিক লৌকিক আখ্যান।

৩। অন্নপূর্ণামঙ্গল বা মানসিংহ অর্থাৎ মানসিংহ কেন্দ্রিক ঐতিহাসিক কাহিনী।

ভারতচন্দ্র রায় –এর “অন্নদামঙ্গল” কাব্যের প্রথম গায়ক হলেন নীলমণি সমাদ্দার

প্রথম বাংলা সচিত্র পুস্তক রূপে “অন্নদামঙ্গল” কাব্য টি প্রথম মুদ্রিত করেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে।

“অন্নদামঙ্গল” কাব্যের শাশ্বত একটি বাণী –

“আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”।

এই “অন্নদামঙ্গল” কাব্য প্রসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন –

“রাজসভার কবি রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল গান রাজকণ্ঠের মণিমালার মোট যেমন তাহার উজ্জ্বলতা, তেমনি তাহার কারুকার্য”।

এই কাব্য প্রসঙ্গে আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন –

“মুকুন্দরামের ‘চণ্ডীমঙ্গল’ –এর কাহিনীর অনুকরণেই ‘অন্নদামঙ্গল’ –এর প্রথম খণ্ড রচিত হইয়াছে”।

বাংলা যখন আলীবর্দী শাসনে, যখন বর্গী আক্রমনে বাংলা পর্যদুস্ত সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে কাব্যের শুরু।

এই কাব্যের তৃতীয় খণ্ডের কাহিনী বাংলায় মুঘল অভিযানের পটভূমিকায় রচিত।

 

“অন্নদামঙ্গল” কাব্যের প্রচলিত কয়েকটি প্রবাদ-প্রবচন :

১। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।

২। নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়।

৩। মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পাতন।

৪। যেখানে কুলীন জাতি সেখানে কোন্দল।

৫। হাভাতে যদ্যপি চায়, সাগর শুকায়ে যায়।

৬। আকের কপালে রহে আরের কপালে দহে।

৭। সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর।

৮। বাঘের বিক্রম সম মাঘের হিমানী।

৯। মিছা কথা সিঁচা জল কতক্ষণ রয়।

১০। যার কর্ম তার সাজে অন্য লোকে লাঠি বাজে।

  • অধ্যাপক শশিভূষণ দাশগুপ্ত যুগসন্ধির কবি ভারতচন্দ্র রায় প্রসঙ্গে বলেছেন –

“ভারতচন্দ্র সম্পর্কে এই ‘সন্ধিযুগের কবি’ আখ্যাটি সবদিক হইতেই অতি সুপ্রযুক্ত বলিয়া মনে হয়। মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মাঝখানে আবির্ভাব হইয়াছিল ভারতচন্দ্রের। তাঁহার কাব্য সৃষ্টিতে পরস্পর জড়িত হইয়া রহিয়াছে অস্তগামী এবং উদয়োন্মুখ এই দুই যুগেরই প্রধান লক্ষণগুলি”।

  • ভারতচন্দ্র রায় –এর রচনাশৈলী প্রসঙ্গে সমালোচক আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন –

“প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের আকপ্রান্তে জয়দেব অপরপ্রান্তে সূর্যকরোজ্জ্বল তুষার শৈলের দুই সমুন্নত স্বর্ণশৃঙ্গ – একটি উদয়াচলে অপরটি অস্তাচলে নিবদ্ধ”।

  • অধ্যাপক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতচন্দ্র রায় প্রসঙ্গে লিখেছেন –

“ভারতচন্দ্র রাইয়গুণাকর শুধু অষ্টাদশ শতাব্দীর নহে, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথম শ্রেণীর কবি”।

 

ভারতচন্দ্র রায় থেকে সংক্ষিপ্ত কিছু প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন - ভারতচন্দ্র রায় –এর “অন্নদামঙ্গল” কাব্যে নতুনত্ব কী?

  •  ভারতচন্দ্র রায় –এর “অন্নদামঙ্গল” মঙ্গলকাব্য কাঠামোয় নতুন জীবন চেতনার বার্তাবাহী। তিনি পুরাতন পাত্রে নতুন রস পরিবেশন করেছেন।

 

প্রশ্ন – ভারতচন্দ্রের সমাজ ও যুগচেতনার পরিচয় দাও।

  •  ভারতচন্দ্র ছিলেন সমাজ ও যুগসচেতন কবি। যুগধর্মের জন্যই ভারতচন্দ্রের সময়ে দেশের জনসাধারণ দেবতার মাহাত্ম্য ও কৃপার প্রতি আস্থাভাজন ছিলেন না। কবি পুরাতন কে নামমাত্র গ্রহণ করে নতুনত্বের উদ্বোধন ঘটিয়েছেন। “অন্নদামঙ্গল” কাব্য পুরাতন যুগের শেষ এবং নতুন যুগের শুরু।

 

প্রশ্ন – ‘ঈশ্বরী পাটনি চরিত্র টি ভারতচন্দ্র রায় –এর অনন্য সৃষ্টি’ – আলোচনা কর।

  •  ঈশ্বরী পাটনি চরিত্র টি ভারতচন্দ্র রায় –এর অনন্য কবিপ্রতিভার স্বাক্ষর। ঈশ্বরী পাটনির কণ্ঠে প্রথম শোনা গেল বাঙালির চিরন্তন প্রাণের কথা – “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”। দেবী অন্নদার কাছে গ্রাম্য অশিক্ষিত খেয়াপারের মাঝি ঈশ্বরী পাটনি মুক্তি, মোক্ষ, ধনদৌলত আকাঙ্ক্ষা করেনি। সুবর্ণ সেঁউতি কে হেলাভরে প্রত্যাখ্যান করে সে নিজের সন্তানের জন্য স্বাবলম্বন শক্তি প্রার্থনা করেছে। বাৎসল্য রসের রসিক সমগ্র বাঙালি জাতির মর্মোদ্ঘাটন করেছেন ভারতচন্দ্র রায় এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

 

প্রশ্ন - “রাজসভার কবি রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গল গান রাজকণ্ঠের মণিমালার মোট যেমন তাহার উজ্জ্বলতা, তেমনি তাহার কারুকার্য” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।

  •  সার্থক শিল্প প্রতিভার গুণে ভারতচন্দ্র রায় সৃষ্ট মনুষ্য চরিত্রগুলি খুবই সজীব। ছন্দ, অলঙ্কার ও প্রবাদবহুল বাগভঙ্গির সুষম প্রয়োগে কবি মৌলিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। অনুপ্রাস, যমক, উপমা, শ্লেষ, রূপক প্রভৃতি অলঙ্কারের সার্থক প্রয়োগে, ভুজঙ্গ প্রয়াত, তোটক ও তোণক প্রভৃতি ছন্দের ব্যবহার নৈপুণ্যে এবং শ্লেষকৌতুকপূর্ণ তির্যক দৃষ্টিভঙ্গির পরিস্ফুটনে, বর্ণনার পরিপাট্যে, বৈচিত্র্যে ও মাধুর্যে “অন্নদামঙ্গল” অনন্য শিল্পমণ্ডিত সৃষ্টি। তাই রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য যথার্থ।

 

প্রশ্ন - ভারতচন্দ্র রায় কে কেন ‘যুগসন্ধির কবি’ বলা হয়?

  •  ভারতচন্দ্র রায় তাঁর “অন্নদামঙ্গল” কাব্যে একদিকে মঙ্গল কাব্যের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। আবার অন্যদিকে, বিদেশী বণিকদের আগমন এবং বর্গী আক্রমনে দিশেহারা জনজীবনও তাঁর সৃষ্টি কে প্রভাবিত করেছে। নব্য ধনী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত লালসা, আড়ম্বরপ্রিয়তা এসবও নানান ভাবে, বিশেষত দেব দেবীর চরিত্র চিত্রণে কবি ভারতচন্দ্র রায় কে প্রভাবিত করেছে। দুটি যুগের বৈশিষ্ট তাঁর কাব্যে চিত্রিত হওয়ার কারণে তাঁকে ‘যুগসন্ধির কবি’ বলা হয়।

 

প্রশ্ন - ভারতচন্দ্র রায় তাঁর “অন্নদামঙ্গল” কাব্য কে কেন ‘নূতন মঙ্গল’ বলেছেন?

  •  মঙ্গল কাব্যের প্রথা মেনে কবি একদিকে যেমন তাঁর কাব্যে দেবদেবীর বন্দনা, স্বপ্নাদেশ, সৃষ্টিতত্ত্ব কে স্থান দিয়েছেন, তেমনই অন্যদিকে নগর জীবন, তার পালটে যাওয়া মূল্যবোধেরও নিপুণ ভাষ্যকার তিনি। মঙ্গলকাব্যের ক্রূর দেবীদের ত্যাগ করে শান্ত অন্নদা এসেছেন তাঁর কাব্যে – এটাও যুগের প্রয়োজনে। ধর্মের চেয়ে সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা গুরুত্ব পেয়েছে, হয়েছে সচেতন শিল্প নির্মান। তাই “অন্নদামঙ্গল” আক্ষরিকভাবে “নূতনমঙ্গল”।

 

প্রশ্ন - ভারতচন্দ্র রায় রচিত মঙ্গলকাব্যের নাম কী? কার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি কাব্য টি রচনা করেন?

  •  ভারতচন্দ্র রায় রচিত কাব্যের নাম “অন্নদামঙ্গল”।

নবদ্বীপের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় কবি কাব্য টি রচনা করেন। এই কাব্য রচনার জন্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভারতচন্দ্র রায় কে ‘রায়গুণাকর’ উপাধি দেন।


 আরও পড়ুন :


To join our FB Page - CLICK HERE.

Post a Comment

1 Comments

  1. খুব সুন্দর উপস্থাপনা।

    ReplyDelete