![]() |
• জন্ম – ২৪ শে মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে (বাংলার ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১৯ শে জৈষ্ঠ্য) ।
• পিতা – মৌলবি ফকির আহমেদ ।
• মাতা – জাহেদা খাতুন ।
• পত্নী – প্রমীলা দেবী (১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে নজরুল ইসলামের বিবাহ সম্পন্ন হয়) ।
• ছদ্মনাম – কহ্লন মিশ্র, ব্যাঙাচি, গাজী আব্বাস বিটকেল ।
এছাড়াও তিনি সাম্যবাদী কবি, বিদ্রোহী কবি, নিখিল বাংলার চারণ কবি, হাবিলদার কবি নামেও পরিচিত ছিলেন ।
• শিক্ষা জীবন – ১০ বছর বয়সে গ্রামের মক্তব থেকে তিনি প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।
তারপর তিনি মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু সাংসারিক অভাবের কারণে তাঁকে পড়া ছাড়তে হয়।
নজরুল ইসলাম পুনরায় সাত টাকা বৃত্তি নিয়ে রানীগঞ্জ মিয়ারসোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি যুদ্ধে গমন করেন ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসমাপ্ত থেকে যায় ।
• মৃত্যু – ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে আগষ্ট মাত্র ৭০ বছর বয়সে ঢাকা পোস্ট গ্রাজুয়েট হাসপাতালে তিনি দেহত্যাগ করেন ।
[ আরও পড়ুন : বস্তুপণ্যের প্রচারে প্রথম প্রদেয় পুরস্কার ]
- অন্নদাশঙ্কর রায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে বলেছেন –
“ভুল হয়ে গেছে বিলকুল
যার সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে
ভাগ হয়নি তো নজরুল ।”
- মাথরুন বিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন নজরুল ইসলাম কুমুদরঞ্জন মল্লিক কে শিক্ষক হিসাবে পান। এবং রানীগঞ্জ মিয়ারসোল রাজস্কুলে পড়াকালীন কথাসাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় কে সহপাঠী হিসাবে পান নজরুল ইসলাম ।
- ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে সওগাত পত্রিকায় নজরুল ইসলামের প্রথম গল্প - “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী” প্রকাশিত হয় ।
- বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা “মুক্তি” প্রকাশিত হয় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ।
- মোসলেম ভারত পত্রিকায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে নজরুল ইসলাম তাঁর প্রথম উপন্যাস “বাঁধনহারা” লিখতে শুরু করেন ।
নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্র – পত্রিকা
• নবযুগ – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জুলাই ।• ধুমকেতু – ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই আগস্ট ।
• লাঙল – ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে ডিসেম্বর ।
[ আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা চরিত্র (দ্বিতীয় পর্ব) ]
[ আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে পশুকেন্দ্রিক বিভিন্ন রচনা ]
কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কাব্যগ্রন্থ :
• অগ্নিবীণা ১৯২২• দোলন চাঁপা ১৯২৩
• বিষের বাঁশী ১৯২৪
• ভাঙার গান ১৯২৪
• ছায়ানট ১৯২৫
• চিত্তনামা ১৯২৫
• সাম্যবাদী ১৯২৫
• পূবের হাওয়া ১৯২৫
• সর্বহারা ১৯২৬
• ফণিমনসা ১৯২৭
• সিন্ধু হিন্দোল ১৯২৮
• সঞ্চিতা ১৯২৮
• ঝিঙে ফুল ১৯২৮
• জিঞ্জীর ১৯২৮
• চক্রবাক ১৯২৯
• সন্ধ্যা ১৯২৯
• প্রলয় শিখা ১৯৩০
• নির্ঝর ১৯৩৯
• নতুন চাঁদ ১৯৪৫
• মরুভাস্কর ১৯৫১
• সঞ্চয়ন ১৯৫৫
• মধুবালা ১৯৬০
• ঝড় ১৯৬২
• ধুমকেতু ১৯৬২
• রাঙাজবা ১৯৬৬
নজরুল ইসলাম রচিত উপন্যাস :
• বাঁধনহারা ১৯২৭• মৃত্যুক্ষুধা ১৯৩০
• কুহেলিকা ১৯৩১
• জীবনের জয়যাত্রা ১৯৩৯
নজরুল ইসলাম রচিত গল্পগ্রন্থ :
• ব্যাথার দান ১৯২২• রিক্তের বেদনা ১৯৩১
• শিউলি মালা ১৯৩১
নজরুল ইসলাম রচিত অনুবাদমূলক রচনা :
• রুবাইয়াৎ ই হাফিজ ১৯৩০• কাব্য আমপরা ১৯৩৩
• রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম ১৯৫৯
[ আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে অপ্রধান মঙ্গলকাব্য ও কবি ]
নজরুল ইসলাম রচিত সঙ্গীত গ্রন্থ :
• সুরলিপি ১৯২৭• বুলবুল ১৯২৮
• চোখের চাতক ১৯২৯
• মহুয়ার গান ১৯৩০
• চন্দ্রবিন্দু ১৯৩১
• সুরসাকী ১৯৩২
• জুলফিকার ১৯৩২
• গুলবাগিচা ১৯৩৩
• বনগীতি ১৯৩৩
• গীতি শতদল ১৯৩৪
• গানের মালা ১৯৩৪
• সুরমুকুর ১৯৩৪
নজরুল ইসলাম রচিত নাটক :
• সাপুড়ে ১৯২৯• ঝিলিমিলি ১৯৩০
• আলেয়া ১৯৩১
• বিদ্যাপতি ১৯৩৮
• পুতুলের বিয়ে ১৯৬৪
• বনের বেদে
নজরুল ইসলাম রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থ :
• রুদ্রমঙ্গল ১৯২৫• দুর্দিনের যাত্রী ১৯২৬
[ আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ]
[ আরও পড়ুন : প্রথম বাংলা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে ]
- হাবিলদার কবি করাচী তে থাকবার সময় তিনি রচনা করেন - ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’, ‘রিক্তের বেদনা’, ‘বাধনহারা’ বিভিন্ন রচনা ।
- নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ভাঙার গান’ এই ৩ টি কাব্যগ্রন্থের মূলে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন ।
- ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর ধুমকেতু পত্রিকায় “অনন্দময়ীর আগমনে” কবিতাটি প্রকাশিত হলে নজরুল ইসলাম রাজরোষে পড়েন এবং কুমিল্লায় তিনি গ্রেপ্তার হন ।
- “ধুমকেতু” কাব্যগ্রন্থের জন্যও নজরুল ইসলাম রাজদ্বারে দণ্ডিত হয়েছিলেন ।
নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত কিছু গ্রন্থ :
• বিষের বাঁশী• ভাঙার গান
• সর্বহারা
• রুদ্রমঙ্গল
• দুর্দিনের যাত্রী
• যুগবাণী
- ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে “প্রলয়ঙ্কর” এবং “নমস্কার” রচনা ২ টি ছাপা হওয়ার সময় পুলিশ প্রেসে বই ২ টি নষ্ট করে দেয় ।
- ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে “প্রলয় শিখা” কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে নজরুল ইসলাম রাজরোষে পড়ে ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন ।
- নজরুল ইসলামের “ছায়ানট”, “দোলন চাঁপা”, “সিন্ধু হিন্দোল”, “চক্রবাক” কাব্যগ্রন্থগুলির মূল সুর প্রেম ও নিসর্গ চেতনা ।
[ আরও পড়ুন : কিছু বাংলা গ্রন্থের পূর্বনাম ]
- প্রথম দিকে গান্ধীজির আন্দোলনে বিশ্বাস থাকলেও পরে তা শিথিল হয়ে পড়ে । কারণ তিনি অনুভব করেছিলেন সত্য ও অহিংসার মাধ্যমে পশু শক্তিকে রোধ করা যায় না –
“ধর্মকথা প্রেমের বাণী জানি মহান উচ্চ খুব,
কিন্তু সাপের দাঁত না ভেঙে মন্ত্র ঝাড়ে যে বেকুব !”
- হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতি সমন্বয়ের জন্য তিনি লিখেছিলেন - “শাত-ইল-আরব”, “কামাল পাশা” এবং উভয় সম্প্রদায়ের তামসিকতা দূর করে জাগরণের জন্য লিখেছিলেন - “মহররম”, “কোরবাণী”, “রক্তাম্বর ধারিণী মা”, “আগমনী” প্রভৃতি কবিতা ।
- সমকালীন যুগের যে চাহিদা নজরুল ইসলাম সেই চাহিদা কে নিজের মধ্যে সাঙ্গীকৃত করে প্রতিবাদী চেতনায় জারিত করে যে ভাবে সাধারণ মানুষের তৎকালীন মূল আকাঙ্খাগুলিকে তাঁর কাব্যে রূপায়িত করেছেন, এবং তাতেই তিনি তাঁর মৌলিকতার প্রমাণ রেখেছেন ।
- “ধুমকেতু” কবিতায় কবি নিজেকে ‘স্রষ্টার শনি মহাকাল ধুমকেতু’ রূপে নিজের পরিচয় দিয়েছেন ।
- ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি তাঁর বিখ্যাত “বিদ্রোহী” কবিতাটি লেখেন।
- নজরুল ইসলামের ২ টি নাট্য কাহিনী - “সাপুড়ে” এবং “বিদ্যাপতি” ছায়াচিত্রে রূপায়িত হয় ।
- সমকালীন যুগের বাস্তব রূপ “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতায় নানা ভাবে ব্যক্ত হয়েছে ।
- ধুমকেতু পত্রিকায় কবি লিখেছিলেন –
“এ দেশের নাড়ীতে নাড়ীতে অস্থি-মজ্জায় যে পচন ধরেছে তাতে এর একবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।”
- বুদ্ধদেব বসু তাঁর “রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরসাধক” গ্রন্থে বলেছেন –
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “বসন্ত” নাটকটি নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেন ।
- নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অনুরোধে নজরুল ইসলাম তাঁর “কাণ্ডারী হুঁশিয়ারি” কবিতাটি রচনা করেন ।
[ আরও পড়ুন : “ত্রিদিবা” এবং “মন্বন্তর” ট্রিলজি রচয়িতা সম্পর্কে ]
অগ্নিবীণা (১৯২২) –
প্রথম কাব্যগ্রন্থ । কাব্যগ্রন্থে কবিতার সংখ্যা ১২ ।
কাব্যগ্রন্থটি নজরুল ইসলাম উৎসর্গ করেন বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষকে ।
এই কাব্যগ্রন্থের শ্রেষ্ঠ কবিতা “বিদ্রোহী” । এই কবিতার নামানুসারেই কবিকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়।
“অগ্নিবীণা” নামটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান থেকে নেওয়া –
“অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে,আকাশ কাঁপে তারার আলোয় গানের ঘোরে।”
- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে নজরুল ইসলাম জগত্তারিনী স্বর্ণপদক লাভ করেন ।
- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার নজরুল ইসলাম কে পদ্মভূষণ সম্মানে সন্মানিত করেন ।
- বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলাম কে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে কবিকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি'র মর্যাদা দেওয়া হয় ।
- বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ৯ ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সন্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে ।
- ১৯৭৬ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম কে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় ।
- নজরুল ইসলাম রচিত “চল চল চল, ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল” বাংলাদেশেশের রণসংগীত হিসাবে গৃহীত হয় ।
0 Comments