• পিতৃদত্ত নাম – গান্ধর্ব নারায়ণ ।
• পিতা – কালাচাঁদ মিত্র ।
• স্ত্রী – অন্নদা সুন্দরী দেবী ।
• পুত্র – ললিতচন্দ্র মিত্র ।
• আদি বাসস্থান – ২৪ পরগনা জেলার বেলেনী গ্রাম ।
• শিক্ষা জীবন – প্রথমে তিনি জেমস লঙের অবৈতনিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন ।
পরে হেয়ার স্কুল থেকে (পূর্ব নাম – কালু টোলা ব্রাঞ্চ স্কুল) ভর্তি হন । ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন ।
সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করে, প্রেসিডেন্সি কলেজে (পূর্ব নাম হিন্দু কলেজ) ভর্তি হন ।
১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে উচ্চতর পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন এবং ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি সিনিয়র বৃত্তি লাভ করেন ।
কলেজের সকল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ।
• কর্ম জীবন – ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে পাটনায় পোষ্ট মাস্টার পদে ১৫০ টাকা বেতনে নিযুক্ত হন ।
• মৃত্যু – ১ লা নভেম্বর ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন ।
আরও পড়ুন :
• সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দীনবন্ধু মিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন –
“দীনবন্ধু অনেক সময়েই শিক্ষিত ভাস্কর বা চিত্রকরের ন্যায় জীবিত আদর্শ সন্মুখে রাখিয়া চরিত্রগুলি গড়িতেন । সামাজিক বৃক্ষে বানর সমারূঢ় দেখিলেন অমনি তুলে ধরিয়া তাহার লেজসুদ্ধ আঁকিয়া দিতেন।”
• দীনবন্ধু মিত্র ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের ভাবশিষ্য ছিলেন । ঈশ্বর গুপ্তের প্রেরণায় সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় কবিতা চর্চার মধ্য দিয়ে প্রথম সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন দীনবন্ধু মিত্র ।
• দীনবন্ধু মিত্র রচিত প্রথম নাটক “নীলদর্পণ” ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ।
• ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে লুসাই যুদ্ধের সময় দীনবন্ধু মিত্র ইংরেজদের বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করেন । ফলে তাঁর সার্বিক কাজের সাফল্য বিচার করে ইংরেজ সরকার তাঁকে রায়বাহাদুর উপাধি দান করে ।
আরও পড়ুন : “স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ”-এর কবি সম্পর্কে।
আরও পড়ুন : রবীন্দ্রনাথের পর ‘প্রথম মৌলিক কবি’ সম্পর্কে ।
দীনবন্ধু মিত্র রচিত নাটক :
• নীলদর্পণ ১৮৬০• নবীন তপস্বিনী ১৮৬৩
• লীলাবতী ১৮৬৭
• কমলে কামিনী ১৮৭৩
দীনবন্ধু মিত্র রচিত প্রহসন :
• বিয়ে পাগলা বুড়ো ১৮৬৬• সধবার একাদশী ১৮৬৬
• জামাইবারিক ১৮৭২
দীনবন্ধু মিত্র রচিত কাব্যগ্রন্থ :
• সুরধনী কাব্য ১৮৭১, ১৮৭৬ (২ টি খণ্ড)• দ্বাদশ কবিতা ১৮৭২
• “যমালয়ে জীবন্ত মানুষ” উপন্যাস টি বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১২৭৯ বঙ্গাব্দে কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
• “পোড়া মহেশ্বর” গল্পটি মধ্যস্থ পত্রিকায় ১২৭৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ।
• দীনবন্ধু মিত্রের “সধবার একাদশী” প্রহসনে নাট্যকার গিরিশ চন্দ্র ঘোষ নিমচাঁদ চরিত্রে অভিনয় করেন।
• দীনবন্ধু মিত্র কে কেন্দ্র করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “দীনবন্ধু মিত্রের কবিত্ব” প্রবন্ধটি রচনা করেন।
দীনবন্ধু মিত্রের উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন রচনা :
• নীলদর্পণ – নীলকর সাহেবদের উদ্দেশ্যে।• নবীন তপস্বিনী – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
• সুরধনি কাব্য – মহেন্দ্রলাল সরকার।
• দ্বাদশ কবিতা – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
• জামাই বারিক – রাসবিহারী বসু।
• কমলে কামিনী – যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর।
আরও পড়ুন : বস্তুপণ্যের প্রচারে প্রথম প্রদেয় পুরস্কার ।
“নীলদর্পণ” (১৮৬০) :
• ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম নাটক ।• “নীলদর্পণ” প্রথম বাংলা নাটক যেটি প্রথম ইংরেজি ভাষায় অনুদিত হয় ।
• নাটকটি অনামে প্রকাশিত হয় । সেখানে লেখা হয়েছিল নীলকর বিষধর দংশন কাতর প্রজানিকর ক্ষেমঙ্করণে কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতং নামে শ্রী রামচন্দ্র ভৌমিকের বাংলা প্রেসে (ঢাকার প্রথম ছাপাখানা) মুদ্রিত হয় ।
• মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে “Nil Darpan” বা “The Indigo Planting Mirror” – A Native নামে অনুবাদ করেন । প্রকাশক হিসাবে লঙ সাহেবের নাম ছিল ।
• বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় “নীলদর্পণ” নাটকটি কে মার্কিন মহিলা ঔপন্যাসিক স্টো প্রণীত “Uncle Tom's Cabin” (১৮৫২) -এর সাথে তুলনা করেছেন ।
• ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই ডিসেম্বর জাতীয় রঙ্গালয়ে নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় ।
• পাঁচ অঙ্কে স্বয়ং সম্পূর্ণ নাটক এটি ।
• ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে জেমস কারলঙ মোল্লাহাটি কানসারণে আসেন । এবং এই কুটিরের অত্যাচারের ঘটনা নিয়েই দীনবন্ধু মিত্র নাটকটি রচনা করেন ।
• এই নাটকে উড সাহেবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি । তাঁর নিখুঁত অভিনয়ের জন্য দর্শক আসনে বসে থাকা বিদ্যাসাগর বুঝতেই পারেননি, যে এটি অভিনয় হচ্ছে । তাই তিনি (বিদ্যাসাগর) ইংরেজদের উপর রাগে ও ঘৃণায় নিজের পায়ের জুতো খুলে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করেন । অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি মহাশয় বুঝতে পারলেন তিনি চরিত্রের সাথে এক হয়ে যেতে পেরেছেন । তাই তিনি সেই জুতো মাথায় নিয়ে বলেছিলেন –
“আমার অভিনয় জীবন সার্থক হল আজ । এটাই আমার জীবনের সেরা উপহার।”
• চরিত্র – নবীনমাধব, তোরাপ, ক্ষেত্রমণি, সাধুচরণ, বিন্দুমাধব প্রমুখ ।
আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা চরিত্র(দ্বিতীয় পর্ব) ।
“নবীন তপস্বিনী” (১৮৬৩) :
• রোমান্টিক নাটক এটি ।• এই নাটকের জলধর চরিত্র টি শেক্সপিয়ারের “Merry Wives of Windsor” -এর ফলস্টাফের অনুকরণে অঙ্কিত ।
• চরিত্র – জলধর, বিজয়, মল্লিকা, কামিনী প্রমুখ ।
“বিয়ে পাগলা বুড়ো” (১৮৬৬) :
• মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ” প্রহসনের ছাপ বর্তমান ।• প্রহসনটি দুই অঙ্কে সমাপ্ত ।
• বিবাহ বাতিকগ্রস্থ এক বৃদ্ধের নকল বিয়ের আয়োজন করে স্কুলের অকালপক্ক ছেলেরা কীভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করেছিল তারই এক কৌতুক কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ।
• চরিত্র – রাজীবলোচন, ভূবনমোহন, নাসিরাম, সুশীল প্রমুখ ।
“সধবার একাদশী” (১৯৬৬) :
• এটি দীনবন্ধু মিত্র রচিত শ্রেষ্ঠ প্রহসন ।• এই প্রহসনেও মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রভাব যথেষ্ট লক্ষনীয় ।
• ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সপ্তমী তে অ্যামেচার থিয়েটারে প্রথম এই প্রহসনটি মঞ্চস্থ হয় ।
• এই প্রহসনে সেযুগের কলকাতার অর্ধশিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের লাম্পট্যতা ও চরিত্র ভ্রষ্টতার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ।
• চরিত্র – অটল, কেনারাম, নিমচাঁদ, রামমানিক্য, কুমুদিনী, কাঞ্চন প্রমুখ ।
• এই প্রহসন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড: সুশীল কুমার দে লিখেছেন –
“সধবার একাদশী’তে দীনবন্ধু কেবল সে যুগের মাতাল আঁকেন নাই, সকল যুগের মানুষ আঁকিয়াছেন।”
আরও পড়ুন : বাংলা সাহিত্যে পশুকেন্দ্রিক বিভিন্ন রচনা ।
“লীলাবতী” (১৮৬৭) :
• মিলনাত্মক নাটক এটি ।• এই নাটকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দীনবন্ধু মিত্র মহাকবি কালিদাসের “রঘুবংশ” থেকে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করে বলেছেন –
“অপরিমিত আয়াস – সহকারে লীলাবতী নাটক প্রকটন করিয়াছি।”
• চরিত্র – ললিত, নদের চাঁদ, হেমচাঁদ, লীলাবতী, রাজলক্ষ্মী প্রমুখ ।
“জামাই বারিক” (১৮৭২) :
• এই প্রহসনে ধনী পরিবারের ঘরজামাই পোষার প্রথাকে হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে ।• চরিত্র – অভয় কুমার (জামাই চরিত্রে), কামিনী, বাংলা, পদ্মলোচন, বিন্দুবাসিনী প্রমুখ।
“কমলে কামিনী” (১৮৭৩) :
• দীনবন্ধু মিত্র রচিত শেষ নাটক এটি ।• ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ডাক বিভাগের কর্মী হয়ে দীনবন্ধু মিত্র মণিপুর ও কাছাড় পরিভ্রমণ করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার ফসল এই নাটকটি ।
• নাটকের সুরবালা চরিত্রে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিমলা চরিত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায় ।
• চরিত্র – গান্ধারী, বিষ্ণুপ্রিয়া, সুশীলা, বীরভূষণ, সমরকেতু, মকরকেতন প্রমুখ ।
“সুরধনী কাব্য” (১৮৭১, ১৮৭৬) :
• কাব্যটি দুটি খণ্ডে বিভক্ত ।• হিমালয় থেকে গঙ্গা দেবীর সাগর সঙ্গমে যাত্রার ছন্দোবদ্ধ বর্ণনা রয়েছে । এছাড়াও এই কাব্যে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জনপদ এবং বঙ্গদেশে ও সমকালীন কলকাতার বিশিষ্ট স্থান ও স্মরণীয় ব্যক্তিদের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে ।
• দীনবন্ধু মিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেছিলেন –
“বঙ্গে রঙ্গালয় স্থাপনের জন্য মহাশয় কর্মক্ষেত্রে আসিয়াছিলেন । মহাশয়ের নাটক যদি না থাকিত, এই সকল যুবক মিলিয়া ন্যাশনাল থিয়েটার স্থাপন করিতে সাহস করিত না । সেই নিমিত্ত আপনাকে রঙ্গালয় স্রষ্টা বলিয়া নমস্কার করি।”
পোস্টটি আপনার সামান্যতম উপকারে এলে, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন । ধন্যবাদ....
0 Comments