Subscribe Us

মুন্সী প্রেমচন্দ : হিন্দি ভাষার বঙ্কিমচন্দ্র

 Munsi Premchand

জীবন পঞ্জি :

প্রকৃত নাম – ধনপত রায়। পুত্রের আগমনে ধন লাভ হবে ভেবেই পিতা এই নাম রাখেন।

জন্ম – ১৮৮০ সালের ১১ ই জুলাই বেনারসের লমহী গ্রাম বা লম গ্রামে।

 পিতা – অজাইব লাল, ছিলেন পোষ্ট অফিসের এক জন কেরাণী।

মাতা – আনন্দা দেবী। প্রেমচন্দ ছিলেন তাঁদের চতুর্থ সন্তান।

পিতামহ – শাহাই রায়, ছিলেন লমহী গ্রামের পাটোয়ারী।

পত্নী – বাল্য বিধবা শিবরাণী দেবী কে তিনি বিবাহ করেন।

সন্তান – অমৃত রায়।

ছদ্মনাম – মুন্সী প্রেমচন্দ, নবাব রায়। ‘জামানা পত্রিকা’ –র সম্পাদক বন্ধু দয়ানারায়ণ নিগম –ই লেখকের ‘প্রেমচন্দ’ ছন্মনাম টি পছন্দ করেন।

শিক্ষা জীবন – কিশোর ধনপত রায় মাদ্রাসা থেকে উর্দু ও ফার্সী ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন।

পরে তিনি কুইনস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

কর্ম জীবন – ১৮৯৯ সালে স্থানীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক রূপে তাঁর কর্ম জীবনের শুরু হয়।

১৯০৮ সালে তিনি ডেপুটি ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস পদে উন্নীত হয়ে হামিরপুরে বদলি হন।

১৯২১ সালে প্রেমচন্দ সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

পত্রিকা সম্পাদনা – প্রেমচন্দ ১৯৩০ সালে ‘হংস পত্রিকা’ এবং ‘জাগরণ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন।

‘হংস পত্রিকা’ টি মূলত ছোট গল্প নির্ভর পত্রিকা।

১৯৩৪ সালে ‘জাগরণ পত্রিকা’ –র প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

মৃত্যু – মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আমাশা রোগে দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী থাকার পর ৮ ই অক্টোবর ১৯৩৬ সালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।


 

  • হিন্দি সাহিত্যে অবদানের জন্য মুন্সী প্রেমচন্দ হিন্দি ভাষার বঙ্কিমচন্দ্র নামে খ্যাত।

 

  • প্রেমচন্দ সাহিত্য জীবনের শুরু তে মূলত উর্দু তে লেখালেখি করতেন। পরে তিনি হিন্দি ভাষায় লেখালেখি শুরু করেন।

 

  • উর্দু ভাষায় লেখা প্রেমচন্দ –এর প্রথম উপন্যাস – “ইসরারে মহব্বত”

উপন্যাস টি ১৯০৩ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে বেনারসের উর্দু ‘আওয়াজ খলক’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

 

  • হিন্দি ভাষায় লেখা মুন্সী প্রেমচন্দ –এর প্রথম উপন্যাস – “প্রেমা” (১৯০৭)।

 

  • প্রেমচন্দ –এর স্বনামে প্রকাশিত প্রথম রচনা – “বড়ে ঘর কী বেটি”

 

  •   মুন্সী প্রেমচন্দ –এর রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস – “গোদান” (১৯৩৬), দরিদ্র কৃষক হরির জীবন স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গের কাহিনি নিয়ে রচিত।

 

মুন্সী প্রেমচন্দ রচিত উপন্যাস :

প্রেমা, ১৯০৭ 

 রোটি রাণী, ১৯০৭

 বরদান, ১৯১২

 সেবাসদন, ১৯১৯

 প্রেমাশ্রম, ১৯২২

 রঙ্গভূমি, ১৯২৫

 নির্মলা, ১৯২৫

 কায়াকল্প, ১৯২৬

 প্রতিজ্ঞা, ১৯২৭

১০

 গবন, ১৯৩১

১১

 কর্মভূমি, ১৯৩২

১২

 গোদান, ১৯৩৬

 

  • মুন্সী প্রেমচন্দ –এর অসমাপ্ত ও অপ্রকাশিত উপন্যাস – “মঙ্গল সূত্র”


 

মুন্সী প্রেমচন্দ রচিত ছোটগল্প :

বড়ে ঘর কী বেটি  

 শতরঞ্জ কী খিলাড়ী

 দুনিয়া কা সবসে অনমোল রতন

 দো বেলো কী কথা

 নরক কা মার্গ

 মন্দির ঔর মসজিদ

 সোয়া সের গেহু

 কফন

 গুল্লি ডাণ্ডা

১০

 আহুতি

১১

 মজদুর

১২

 অলগ্যোঝা

১৩

 চোরি

১৪

 ধিক্কার

১৫

 সদগতি

১৬

 জুলুস

 

মুন্সী প্রেমচন্দ রচিত প্রবন্ধ ও প্রবন্ধগ্রন্থ :

হিন্দি উর্দু ঐক্য 

 স্বরাজের সুবিধা

 পুরাতন সময় নতুন যুগ

 কাহিনী কলা

 মহাজনী সভ্যতা

 বিবিধ প্রসঙ্গ (৩ খণ্ডে সমাপ্ত)

 সাহিত্য কে উদ্দেশ্য

  কৈলাশ ত্যাগ অর তলোয়ার

 


মুন্সী প্রেমচন্দ রচিত নাটক :

সংগ্রাম, ১৯২৩  

 কর্বলা, ১৯২৪

 প্রেম কী দেবী, ১৯৩৩

 তজুর্বা

 রোহানী সাদি

 

মুন্সী প্রেমচন্দের ছোটদের জন্য রচিত রচনা :

রামচন্দ্র  

 কুত্তা কী কাহানি

 মনমোদক

 

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রেমচন্দ –এর গল্প :

গল্প 

পত্রিকা  

 বড়ে ঘর কী বাটি

জামানা, ১৯১০ 

 শতরঞ্জ কী খিলাড়ী

মাধুরী, ১৯২৪ 

নরক কা মার্গ  

চাঁদ, ১৯২৫  

পিসনহারী কা কুঁয়া 

মাধুরী, ১৯২৮ 

 জুলুস

হংস, ১৯৩০ 

 আহুতি

হংস, ১৯৩০  

 সদগতি

মানসরোবর, ১৯৩১ 

 মন্দির ঔর মসজিদ

 মাধুরী, ১৯৩৫

১০

 কফন

 জামিয়া, ১৯৩৬

 


  • ১৯০৭ সালে প্রেমচন্দ স্বনামে “সোজেওয়তন” গল্প সংগ্রহ প্রকাশিত হলে সরকারি কালেকটার তাঁর রচনা টি পুড়িয়ে দেন এবং প্রেমচন্দ কে ইংরেজ বিদ্বেষী রচনার জন্য সতর্ক করা হয়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধনপত রায় –এর পুনর্জন্ম হয় ‘প্রেমচন্দ’ ছদ্মনামে।

 

  • প্রেমচন্দ ছদ্মনামে তাঁর প্রথম গল্প সংগ্রহ – “সপ্ত সরোজ”। ১৯১৭ সালে হিন্দি এই গল্প সংগ্রহ টি প্রকাশিত হয়। এই গল্প সংগ্রহের গল্পগুলি হল -

১। বড়ে ঘর কী বেটি                  ২। সজ্জনতা কা দণ্ড

৩। পঞ্চপরমেশ্বর                      ৪। নমক কা দারোগা

৫। উপদেশ ও পরীক্ষা               ৫। সৌত

 

মুন্সী প্রেমচন্দ ও বাংলা সাহিত্য :

প্রেমচন্দ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর –এর “দিদি” গল্প টি “বড়ী বহিন” নামে এবং “যোগাযোগ” উপন্যাস টি “কুমুদিনী” নামে হিন্দিতে অনুবাদ করেন।

 

  • মুন্সী প্রেমচন্দ –এর “কফন” গল্প টি অবলম্বনে দেবাশিষ মজুমদার –এর “দানসাগর” এবং স্বপন দাস কৃত “বোধ” নাট্যরূপ স্মরণীয়।

 

  • প্রতিবাদী নারী চরিত্র নির্মানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রেমচন্দ –এর রচনার সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় –এর অভয়া এবং প্রেমচন্দ –এর কুসুম তার প্রত্যক্ষ্য উদাহরণ।

 

  • আনতোল ফাস –এর “থেইস” অবলম্বনে প্রেমচন্দ “অহংকার” এবং ঐ একই রচনা অবলম্বনে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় রচনা করেন – “নিরাঞ্জনা”

 

  • মুন্সী প্রেমচন্দ –এর মৃত্যু তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন –

“এক রত্ন পেয়েছিলে, তোমরা হারিয়ে ফেলেছ।“

 

  • প্রেমচন্দ –এর “শতরঞ্জ কী খিলাড়ী” গল্প টি বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় চিত্রায়িত করেন। গল্প টি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত।

 

  • ১৯৩৪ সালে প্রেমচন্দ –এর “মজদুর” গল্প টিও চলচিত্রায়িত হয়।




  • মুন্সী প্রীমচন্দ –এর ছোট গল্পগুলি ভাষান্তর করেন অধ্যাপক সৌরেন দত্ত। তিনি যে সকল গল্পগুলি ভাষান্তর করেন সেগুলি হল – 

 

মূল গল্প 

ভাষান্তরিত গল্প  

জুলুস 

মিছিল 

 নরক কা মার্গ

নরকের পথ 

 স্বর্গ কা দেবী

স্বর্গের দেবী 

 আখরী খেল

শেষ অজুহাত 

 গুল্লী ডাণ্ডা

ডাংগুলি 

 জীবন কা শাপ

জীবনের অভিশাপ 

 সচ্চাই কা দণ্ড

সততার শাস্তি 

 জুর্মানা

জরিমানা 

 জোনাকি কা রোশনাই

জোনাকির আলো 

১০

 সোহাগ কা শাড়ি

বিয়ের শাড়ি 

১১

পেয়ার কী হোলী  

প্রেমের হোলি  

১২

গৃহদাহ  

গৃহদাহ 

১৩

দো ভাই  

দুই ভাই  

১৪

 স্বপন

স্বপ্ন 

১৫

 হেঁয়ালি

প্রহেলিকা  

১৬

 কুতসা

 কুৎসা

১৭

 দুশমন

দেশদ্রোহী 

১৮

 ছন্মবেশী

 ছন্মবেশী 






প্রেমচন্দ রচিত উপন্যাসগুলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :

  • প্রেমা (১৯০৭) :

উপন্যাস টি তাঁরই লেখা “হমখুরমা ওয় হম সওয়ার” উপন্যাস –এর হিন্দি অনুবাদ।

১৯০৭ সালে এলাহাবাদের ইণ্ডিয়ান প্রেস থেকে গ্রন্থাকারে উপন্যাস টি প্রকাশিত হয়।

এলাহাবাদ ট্রেনিং কলেজে থাকার সময় প্রেমচন্দ এই উপন্যাস টি রচনা করেন।

এই উপন্যাস টি প্রেমচন্দ ‘বাবু নবাব রায় বেনারসী’ ছদ্মনামে রচনা করেন। প্রেমচন্দ –এর কাকা তাঁকে আদর করে নবাব রায় নামে ডাকতেন।

উপন্যাস টি বিধবা বিবাহের প্রেক্ষাপটে রচিত।

চরিত্র – অমৃত রায়, প্রেমা, বাল্য বন্ধু দাননাথ, পূর্ণা, প্রাণনাথ, রামকেলি।

  

  • বরদান (১৯১২) :

 প্রেমচন্দ রচিত এই উপন্যাস টি একটি সুখপাঠ্য উপন্যাস।

এই উপন্যাস টি “জলওয়ায়ে ইসরে” শীর্ষক উর্দু উপন্যাসের হিন্দি রূপান্তর।

উপন্যাস টি ২৬ টি পরিচ্ছদে সম্পূর্ণ। প্রত্যেক টি পরিচ্ছদের আলাদা আলাদা শিরোনাম রয়েছে।

চরিত্র – প্রতাপচন্দ্র, ব্রজরাণী, কমলা চরণ, সুবামা (সুওয়ামা)।

  

  • সেবাসদন (১৯১৯) :

 এই উপন্যাস টি তাঁরই উর্দুতে লেখা “বাজার এ হুস্ন” অবলম্বনে রচনা করেন।

মোট ৫৭ টি অধ্যায় কিংবা পরিচ্ছদে প্রেমচন্দ এই উপন্যাস টি রচনা করেন।

এই উপন্যাস টি বেশ্যা বৃত্তির সমস্যা ও সমাধানের প্রেক্ষাপটে রচিত।

চরিত্র – দারোগা কৃষ্ণ চন্দ্র, সুমন, ডোলি, পদম সিংহ, সুভদ্রা, শান্তা।

  

  • গোদান (১৯৩৬) :

এটি প্রেমচন্দ –এর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস

উপন্যাস টি ভারতীয় কৃষক জীবনের মহাকাব্য।

ঋণের বোঝা কীভাবে চাষির জীবনে নাভিশ্বাস তোলে তারই মর্মস্পর্শী বিবরণ রয়েছে। উপন্যাসে ফুটে উঠেছে সামন্ত প্রভু ও বণিক শ্রেণীর শোষণের চিত্র।

চরিত্র – হরি, ভোলা, হীরা, ঝিঙ্গরি সিংহ, ঝুমিয়া, মাতাদিন।


আরও  পড়ুন -

Post a Comment

0 Comments