Subscribe Us

অন্নদাশঙ্কর রায় : “ক্রান্তদর্শী” ঔপন্যাসিক

 

#আন্নদাশঙ্কর রায় #পথে_প্রবাস #ক্রান্তদর্শী


জীবন পঞ্জি :

জন্ম – ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই মার্চ উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে এক বাঙালি বৈষ্ণব পরিবারে।

আদি নিবাস – অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোতরং অঞ্চল (হিন্দ মোটর রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চাতে)।

ঠাকুর দা – শ্রীনাথ রায়।

পিতা – নিমাইচরণ রায়, “শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত” –এর ওড়িয়া অনুবাদ করেন। এবং তিনি ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মচারী ছিলেন।

মাতা – হেমনলিনী দেবী।

শিক্ষা জীবন – ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে পুরী জেলা স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন।

এরপর সংবাদ পত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমাতা পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস পরীক্ষায় থেকে প্রথম শ্রেণী তে প্রথম স্থান লাভ করেন।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে পাটনা কলেজে প্রথমে ইতিহাসে অনার্স নিলেও পরে তিনি ইংরেজি অনার্স সহ প্রথম শ্রেণী তে প্রথম স্থান লাভ করেন।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে আই সি এস নির্বাচন পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ইংল্যাণ্ড চলে যান।

কর্ম জীবন – ১৯২৯ সালে আন্নদাশঙ্কর রায় মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন।

১৯৩৬ সালে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৪০ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি সরকারী ক্ষেত্রে নিযুক্ত ছিলেন।

১৯৫০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন।

পরে ১৯৮৬ সালে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল ছিলেন।

ছদ্মনাম – লীলাময়।

পত্নী – মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ড –এর সাথে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। আন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে দেন লীলা রায়। তাঁর পত্নী লীলা রায়  বহু বাংলা বই বাংলা থেকে ইংররেজি তে অনুবাদ করেন।

মৃত্যু – ২০০২ সালের ২৮ শে অক্টোবর আন্নদাশঙ্কর রায় পরলোকগমন করেন।

 



  • ওড়িয়া ভাষার সাহিত্যিক হিসেবে অন্নদাশঙ্কর রায় –এর সাহিত্য জীবনের সূচনা হয়।

 

  • অন্নদাশঙ্কর রায় বাংলা ভাষায় প্রথম লিমেরিক রচনা করেন।

 

  • ছাত্রাবস্থায় তিনি ‘প্রভা’ নামে ওড়িয়া ভাষায় হাতে লেখা একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন।

 

  • কটকে পড়াশোনা করার সময় তিনি বিশ্বনাথ কর সম্পাদিত ‘উৎকল সাহিত্য’ নামে একটি ওড়িয়া পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন। এই পত্রিকায় বেনামে তাঁর ছোটগল্প “স্বপ্না”, “খেলাঘর” প্রবন্ধ এবং ৩ খণ্ডের “বাসন্তী” উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

** “বাসন্তী” উপন্যাস ওড়িয়া ভাষায় রচিত প্রথম বারোয়ারি উপন্যাস। অন্নদাশঙ্কর রায় এবং তাঁর বন্ধুবর্গ একত্রে উপন্যাস টি রচনা করেন।

 

  • মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯২০ সালে ‘প্রবাসী পত্রিকা’ –য় অন্নদাশঙ্কর রায় -এর লিও টলস্টয় রচিত “The Three Questions” –এর বাংলা অনুবাদ “তিনটি প্রশ্ন” প্রকাশিত হয়।

 

  • ১৯২২ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ওড়িয়া সাহিত্যে অন্নদাশঙ্কর রায়, কালিন্দীচরণ পানিগ্রাহী, বৈকুন্ঠনাথ পট্টনায়ক, হরিহর মহাপাত্র এবং শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই পাঁচ তরুণ ‘সবুজ গোষ্ঠী’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। এবং তাঁরা একত্রে একটি পত্রিকা সম্পাদনার সংকল্পও করেন। প্রথমে তাঁদের পত্রিকার নাম দেন – ‘অবকাশ’। পত্রিকার নামটিতে ৪ বন্ধুর নামের প্রথম অক্ষর থাকলেও বাদ পড়ে যায় হরিহর মহাপাত্রের নাম। ফলে পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ‘সাধনা’

 


  • অন্নদাশঙ্কর রায় –এর প্রথম লিখিত উপন্যাস “অসমাপিকা” (১৯৩০)।

 

  • কিন্তু প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “আগুন নিয়ে খেলা” (১৯৩০)। উপন্যাস টি ভ্রমণ কাহিনির ঢঙে লেখা।

 

  • অন্নদাশঙ্কর রায় উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বিচিত্রা পত্রিকা’ –য় প্রকাশের জন্য বন্ধু কৃপানাথ মিশ্র –এর মারফত “রক্তকরবীর তিনজন” প্রবন্ধ টি পাঠান।

 

  • ‘কালিকলম পত্রিকা’ –র পক্ষ থেকে শিশির নিয়োগী এবং মুরলীধর বসু অন্নদাশঙ্কর রায় কে পত্রিকায় লেখার জন্য অহ্বান জানালে তিনি –

১। তারুন্য ধর্ম                           ২। ধর্মস্য গ্লানিঃ

৩। সৃষ্টির দিশা                          ৪। প্রচ্ছন্ন জড়বাদ

৫। একলা চল রে                       ৬। যতি ও সতী

৭। প্রতিমাভঙ্গ                          ৮। মনে মনে

৯। নব্যনীতি  - এই ৯ টি প্রবন্ধ রচনা করেন।

১৯২৮ সালে প্রথম ৭ টি প্রবন্ধ একত্রে করে তাঁর প্রথম বাংলা প্রবন্ধগ্রন্থ “তারুণ্য” নামে প্রকাশিত হয়।

 


  • শামসুর নাহার হাবিব্বুল্লাহ বাহার পরিচালিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায়  অন্নদাশঙ্কর রায় – “দাঙ্গা”, “জীবিকা”, “হিন্দু – মুসলিম” প্রভৃতি প্রবন্ধ রচনা করেন।

 

  • বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহাকাব্যিক উপন্যাস “সত্যাসত্য” অন্নদাশঙ্কর রায় ৬ টি খণ্ডে রচনা করেন। মোট ১০ বছরে তিনি উপন্যাস টি রচনা সমাপ্ত করেন। উপন্যাসের খণ্ডগুলি যথাক্রমে নীচে উল্লেখ করা হল –

১। যার যেথা দেশ ১৯৩২

২। অজ্ঞাতবাস ১৯৩৩

৩। কলঙ্কবতী ১৯৩৪

৪। দুঃখ মোচন ১৯৩৬

৫। মর্ত্যের স্বর্গ ১৯৪০

৬। অপসরণ ১৯৪২

 

অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত উপন্যাস :

অসমাপিকা

১৯৩০

আগুন নিয়ে খেলা

১৯৩০

সত্যাসত্য

১৯৩২ - ১৯৪২

পুতুল নিয়ে খেলা

১৯৩৩

না

১৯৫১

কন্যা

১৯৫৩

রত্না ও শ্রীমতি (৩ খণ্ড)

১৯৫৬, ১৯৫৮, ১৯৭২

সুখ

১৯৬১

বিশল্যকরণী

১৯৬৭

১০

তৃষার জল

১৯৬৯

১১

রাজঅতিথি

১৯৭৮

১২

ক্রান্তদর্শী (৪ খণ্ড)

১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৮৫, ১৯৮৬



অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত প্রবন্ধ :

তারুণ্য

১৯২৮

আমরা

১৯৩৭

জীবন শিল্পী

১৯৪১

ইশারা

১৯৪৩

বিনুর বই

১৯৪৪

জীয়ন কাঠি

১৯৪৯

দেশ কাল পাত্র

১৯৪৯

প্রত্যয়

১৯৫১

নতুন করে বাঁচা

১৯৫৩

১০

আধুনিকতা

১৯৫৩

১১

সাহিত্যে সংকট

১৯৫৫

১২

কণ্ঠস্বর

১৯৫৬

১৩

অপ্রমাদ

১৯৬০

১৪

দেখা

১৯৬১

১৫

রবীন্দ্রনাথ

১৯৬২

১৬

খোলা মন ও খোলা দরজা

১৯৬৭

১৭

গান্ধী

১৯৭০

১৮

প্রাণ রক্ষা ও বংশ রক্ষার অধিকার

১৯৭০

১৯

শুভোদয়

১৯৭২

২০

বাংলার রেনেসাস

১৯৭৪

২১

শিক্ষার সংকট

১৯৭৬

২২

কাঁদো, প্রিয় দেশ

১৯৭৬

২৩

প্রেম ও বন্ধুতা

১৯৭৬

২৪

লালন ও তাঁর গান

১৯৭৮

২৫

চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য

১৯৭৮

২৬

সাতকাহন

১৯৭৯

২৭

স্বাধীনতার পূর্বাভাষ

১৯৮০

২৮

সেতুবন্ধন

১৯৯৬

২৯

নব্বই পেরিয়ে

১৯৯৬

৩০

জীবন যৌবন

১৯৯৯

৩১

রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী ও সবুজপত্র

১৯৯৯

৩২

নতুন করে ভাবা

১৯৯৯

৩৩

সাহিত্য সংকট ও অনান্য

২০০০

৩৪

আমার কাছের মানুষ

২০০১

৩৫

আমার ভালোবাসার দেশ

২০০১

 


অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত বিখ্যাত ছড়ার বই :

উড়কি ধানের মুরকি

১৯৪২

রাঙা ধানের খই

১৯৫০

ডালিম গাছে মৌ

১৯৫৮

আতা গাছে তোতা

১৯৭৪

হৈ রে বাবুল হৈ

১৯৭৭

ক্ষীর নদীর কূলে

১৯৮০

হট্টমালার দেশ

১৯৮০

রাঙা মাথায় চিরুনি

১৯৮৫

বিন্নি ধানের খই

১৯৮৯

১০

কলকাতার পাঁচালী

১৯৯২

১১

সাত ভাই চম্পা

১৯৯৪

১২

যাদু এ তো বড় রঙ্গ

১৯৯৪

১৩

খেয়াল খুশির ছড়া

১৯৯৭

১৪

দোল দোল দুলুনি

১৯৯৮


 

অন্নদাশঙ্কর রায় রচিত গল্প সংকলন :

প্রকৃতির পরিহাস

১৯৩৪

দুকান কাটা

১৯৪৪

হাসন সখী

১৯৪৫

মনপবন

১৯৪৬

যৌবন জ্বালা

১৯৫০

কামিনী কাঞ্চন

১৯৫৪

রূপের দায়

১৯৫৮

গল্প

১৯৬০

কথা

১৯৭১

১০

কাহিনী

১৯৮০

 


 অন্নদাশঙ্কর রায় –এর প্রাপ্ত পুরস্কার ও সন্মাননা :

১। ১৯৬২ সালে তিনি “জাপানে” ভ্রমণ সাহিত্যের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

২। ১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অন্নদাশঙ্কর রায় কে জগত্তারিণী পদক –এ সন্মানিত করেন।

৩। ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯৪ সালে মোট ২ বার তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

৪। ১৯৯৫ সালে তিনি শিরোমণি পুরস্কার লাভ করেন।

৫। ২০০০ সালে তিনি বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

৬। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অন্নদাশঙ্কর রায় কে দেশিকোত্তম সন্মানে সন্মানিত করে।

৭। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অন্নদাশঙ্কর রায় কে সন্মাসূচক ডি লিট প্রদান করে।

৮। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার লাভ করেন।

 

  • অন্নদাশঙ্কর রায় –এর জনপ্রিয় “খোকা ও খুকু” (১৯৪৭) কবিতায় সুর দিয়েছেন বিখ্যাত সুরকার সলীল চৌধুরী

 

  • দেশ ভাগের যন্ত্রণা তির্যকভাবে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কবিতায় –

“তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকির উপর রাগ করো

তোমরা যে সব ধেরে খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো।“

 

  • তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কীর্তি “পথে প্রবাসে” নামক ভ্রমণ কাহিনি ‘বিচিত্রা পত্রিকা’ –য় প্রকাশিত হয়।

এই ভ্রমণ কাহিনি পাঠ করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং লেখক কে তাঁর রচনাটির ইংরেজি অনুবাদ করতে বলেছিলেন।

 

  • অন্নদাশঙ্কর রায় প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে ‘সবুজ পত্র’ পত্রিকার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী কে অনুসরণ করেছেন এবং এই কথা তিনি নিজেই স্বীকার করে লিখেছেন –

“প্রবন্ধ লেখার আর্ট আমি ‘সবুজ পত্র’ সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী মহাশয়ের কাছে শিখি।“

 

“ভুল হয়ে গেছে বিলকুল

আর সব ভাগ হয়ে গেছে,

ভাগ হয়নিকো নজরুল।"



আরও পড়ুন - 


Post a Comment

2 Comments