বিজয় গুপ্ত এবং তাঁর রচিত "পদ্মাপুরাণ" :
জন্ম – বিজয় গুপ্ত চৈতন্য পূর্ববর্তী যুগের কবি।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন অধুনা বাংলাদেশের বাখরগঞ্জ জেলার ফতেয়াবাদ মুলুকের অন্তর্গত বাঙ্গজোড়া অধীনস্থ ফুল্লশ্রী (গৈলা) গ্রামে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। তাঁর গ্রামের পূর্ব দিকে রয়েছে গণ্ডেশ্বর এবং পশ্চিম দিকে বয়ে গেছে ঘাগর নদী।
জন্ম প্রসঙ্গে বিজয় গুপ্ত স্বয়ং বলেছেন –
“সনাতন তনয় রুক্মিণী গর্ভজাত”।
পিতা – সনাতন গুপ্ত।
মাতা – রুক্মিণী দেবী।
জাতি – বৈদ্য।
পত্নী – রুক্মিণী দাশ।
শ্বশুর মহাশয় – হেরম্ব দাশগুপ্ত।
- বিজয় গুপ্ত পূর্ববঙ্গ ধারার কবি।
- বিজয় গুপ্ত ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এবং বিষ্ণুর সেবক।
- বিজয় গুপ্ত –এর রচিত কাব্যের নাম “পদ্মাপুরাণ”।
- মনসামঙ্গলের সর্বাধিক প্রচারিত কবি হিসেবে বিজয় গুপ্ত –এর খ্যাতি। বিজয় গুপ্ত –এর কাব্য পূর্ববঙ্গে সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছিল।
- বিজয় গুপ্ত –এর কাব্য টি পূর্ববঙ্গে ‘রায়নী’ নামে গীত হয়।
- বিজয় গুপ্ত তাঁর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি হুসেন শাহের সিংহাসন লাভের পর রচনা করেন।
- বিজয় গুপ্ত তাঁর “পদ্মাপুরাণ” কাব্যের প্রারম্ভে কানা হরিদত্তের কথা স্বীকার করে লিখেছেন –
“প্রথম রচিল গীত কানা হরিদত্ত”।
“পদ্মাপুরাণ” কাব্যের রচনাকাল :
বিজয় গুপ্ত –এর রচিত “পদ্মাপুরাণ” কাব্যের রচনাকাল নিয়ে সমালোচকদের মধ্যে যথেষ্ট
বিতর্ক রয়েছে। কারন নানান পুঁথিতে কাব্যের সন তারিখের তারতম্য লক্ষ করা যায়।
প্যারীমোহন দাশগুপ্ত গায়েনদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী
জেনেছিলেন, বিজয় গুপ্ত তাঁর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি রচনা করেছিলেন ১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দে।
তবে তিনি (প্যারীমোহন দাশগুপ্ত) নানান পুঁথিতে ভিন্ন ভিন্ন সন তারিখ জ্ঞাপক পরিচয় পেয়েছেন।
সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল –
১। “পদ্মাপুরাণ” কাব্যের ভূমিকায় বিজয় গুপ্ত লিখেছিলেন –
“ঋতুশশী বেদশশী পরিমিত শক।
সুলতান হোসেন শাহ নৃপতি তিলক”।।
‘অঙ্কস্য বামা গতি’ – এই সূত্র অনুযায়ী, ঋতু = ৬, শশী = ১, বেদ = ৪, শশী = ১।
অর্থাৎ ১৪১৬ শকাব্দ এবং ১৪৯৪ (১৪১৬ + ৭৮) খ্রিষ্টাব্দে বিজয় গুপ্ত “পদ্মাপুরাণ” কাব্য
টি রচনা করেন।
২।
“ঋতুশূন্য বেদশশী পরিমিত শক।
সুলতান হুসেন রাজা পৃথিবী পালক”।।
ঋতু = ৬, শূন্য = ০, বেদ = ৪, শশী = ১। ‘অঙ্কস্য বামা গতি’ – এই সূত্র অনুযায়ী ১৪০৬ শকাব্দ অর্থাৎ ১৪৮৪ (১৪০৬ + ৭৮) খ্রিষ্টাব্দ।
৩।
“ছায়াশূন্য বেদশশী পরিমিত শক।
সনাতন হুসেন শাহ নৃপতিতিলক”।।
ছায়া = ০, শূন্য = ০, বেদ = ৪, শশী = ১। ‘অঙ্কস্য বামা গতি’ – এই সূত্র অনুযায়ী
১৪০০ শকাব্দ অর্থাৎ ১৪৭৮ (১৪০০ + ৭৮) খ্রিষ্টাব্দ।
- হুসেন শাহ যেহেতু ১৪৯৩ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সুলতান হন, সেহেতু মনে করা হয় বিজয় গুপ্ত ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি রচনা করেন।
এই প্রসঙ্গে দীনেশচন্দ্র সেন বলেছেন –
“বিজয় গুপ্ত পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে হুসেন শাহের রাজত্বকালে বিদ্যমান ছিলেন”।
- তবে সমালোচক সুখময় মুখোপাধ্যায় মনে করেন বিজয় গুপ্ত ১৪৮৪-৮৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি রচনা করেন।
- প্যারীমোহন দাশগুপ্ত উদ্যোগী হয়ে ১৩০৩ বঙ্গাব্দে সর্বপ্রথম বরিশাল
থেকে বিজয় গুপ্ত –এর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি প্রকাশ করেন।
এরপর ১৩০৮ বঙ্গাব্দে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
- বর্তমান সময়ে বিজয় গুপ্ত –এর পুঁথি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। সম্প্রতি এর একটি প্রামাণিক সংস্করণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশ করা হয়।
- বিজয় গুপ্ত –এর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি ২১ টি পালায় বিভক্ত। প্রত্যেক টি পালা কতকগুলি কবিতার সমন্বয়ে গঠিত। ২১ টি পালায় মোট ৩৪৩ টি কবিতা বর্তমান –
- বিজয় গুপ্ত –এর কাব্যের নরখণ্ড মূলত সাধারণ মানুষেরই কাহিনি। দেবতার ভূমিকাও এখানে সাধারণ মানুষের মতো। লখিন্দরের মৃত্যু দৃশ্য সাধারণ গৃহস্থ ঘরের বাস্তব দৃশ্য –
“বার্তা পাইয়া সনকা আসিল লড় দিয়া।
আহা পুত্র বলি ভূমে পড়ে আছাড় খাইয়া।।
তুমি পুত্র পাইয়া আমি করিলাম বড় আশ।
অভাগার আশা বিধি করিলা নৈরাশ”।।
- মনসামঙ্গল কাব্য মূলত করুণ রসের একর। বিজয় গুপ্ত তাঁর “পদ্মাপুরাণ” কাব্যে করুণ রস প্রকাশে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। পতিহারা বেহুলার ক্রন্দন পাঠকদের ব্যাথিত করে তোলে –
“কান্দে সুন্দরী বেউলা বাসরে করে রোল।
লখাইর সন্তাপে বেউলা বালিসে দিল কোল”।।
- চরিত্র চিত্রণের দিক দিয়েও বিজয় গুপ্ত –এর কৃতিত্ব যথেষ্ট। শিব, চণ্ডী, মনসা সাধারণ মানব মানবীর মতো। চণ্ডী ও পদ্মার কোন্দল ‘কলহ পটিয়সী’ বাঙালি গৃহিণীদের ছবিকেই প্রকাশ করেছে। এই কাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র চাঁদ সদাগর। অনমনীয় পৌরুষ্যের অধিকারী চাঁদ সদাগর মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য সাধারণ চরিত্র। তবে কবি বিজয় গুপ্ত চাঁদ সদাগর চরিত্রে আনুপূর্বিক সামগ্রিকতা বজায় রাখতে পারেননি।
- বিজয় গুপ্ত –এর চাঁদ সদাগর চরিত্র প্রসঙ্গে আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন –
“বিজয় গুপ্তের এই পরিকল্পনাটির মধ্যে চাঁদ সদাগরের আকাশস্পর্শী পুরুষকারের চিত্রটি একেবারে ধূলিসাৎ হইয়া গিয়াছে”।
- ভূদেব চৌধুরীও বলেছেন –
“বিজয় গুপ্তের চন্দ্রধর বিচিত্র, কিন্তু সমগ্র নয়”।
- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই ত্রুটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ
করেছেন –
“দেবীর মহিমা প্রচারের জন্য বিজয় গুপ্ত চাঁদের চরিত্রটির পরিণতি নষ্ট করিয়া কাব্যের ভরাডুবি করিয়াছেন”।
- বিজয় গুপ্ত –এর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য প্রসঙ্গে সমালোচক আশুতোষ ভট্টাচার্য বলেছেন –
“একদিকে মনসার হৃদয়হীনতা ও অন্যদিকে সনকার একান্ত মানবিক স্নেহশীলতা এই উভয়ের ভিতর দিয়া অগ্রসর হইয়া বিজয়গুপ্তের কাহিনি উচ্চাঙ্গের কাব্যরস সৃষ্টিতে সার্থক হইয়াছে। বিজয় গুপ্ত দেবতার মাহাত্ম্য রচনা করেন নাই, মানবেরই মঙ্গলগান গাহিয়াছেন” (“বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস”)।
একনজরে “পদ্মাপুরাণ” কাব্য :
১। বিজয় গুপ্ত প্রথম পালার সপ্তম সংখ্যক কবিতায় দেবী মনসার জন্ম বৃতান্ত দিয়েছেন।
ভগবান ব্রহ্মা তাঁর নাম দেন ‘বিষহরি’। এবং জগৎকারু মুনির সাথে দেবী মনসার বিবাহ হয়।
২। স্বর্গের অভিশপ্ত দেবতা অনিরুদ্ধ মর্তে আসে লখীন্দর রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
৩। স্বর্গের অভিশপ্ত দেবী ঊষা মর্তে আসে বেহুলা রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
৪। লখীন্দরের পিতা – চাঁদ সদাগর এবং মাতা – সনকা।
৫। চাঁদ সদাগর ছিলেন চম্পক নগরের অধিবাসী।
৬। লখীন্দরের শ্বশুর বাড়ি – উজানি নগর।
৭। বেহুলার পিতা – সায় বেন, মাতা – অমলা।
৮। চাঁদ সদাগর মহাদেব শিবের কাছ থেকে মহাজ্ঞান লাভ করেছিলেন।
৯। মনসা শঙ্খচিল ছদ্মবেশে চাঁদ সদাগরের মহাজ্ঞান হরণ করে পালান।
১০। দেবী মনসা চাঁদ সদাগরের মহাজ্ঞান হরণ করলে তা পনরায় চাঁদ সদাগর কে ফিরিয়ে
দেয় ধন্বন্তরি।
১১। দেবী মনসা হনুমানের সাহায্যে চাঁদ সদাগরের নাখরা বন ধ্বংস করেছিলেন।
১২। সাঁতালি পর্বতে নির্মিত লোহার বাসর ঘরের ঈশান কোণে ছিদ্র ছিল।
১৩। ত্রিবেণী তে নেতর সঙ্গে বেহুলার সাক্ষাৎ হয়েছিল।
১৪। লখীন্দরের পুনর্জীবন লাভের পর যোগিনী বেশে বেহুলা নিছনি নগরে প্রবেশ করেন।
১৫। লখীন্দরের পুনর্জীবন লাভের পর বাহুলা-লখীন্দর চম্পক নগরে গিয়েছিল ডোম-ডোমনী
বেশে।
১৬। বিজয় গুপ্ত –এর “পদ্মাপুরাণ” বরিশাল থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়।
১৭। “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি প্রথম প্রকাশিত ১৩০৩ বঙ্গাব্দে।
১৮। প্যারীমোহন দাশগুপ্তের উদ্যোগে বিজয় গুপ্ত –এর “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি প্রথম
প্রকাশিত হয়।
১৯। “এক রথে পদ্মা দুর্গা অন্তরীক্ষে স্থিত।
দুইজনে দেখে চান্দ একই মুরতি”।। - কবি বিজয় গুপ্ত
তাঁর কাব্যে পদ্মা এবং দুর্গা কে অভিন্ন রূপে চিত্রিত করেছেন।
সংক্ষিপ্ত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন – কোন সময় বিজয় গুপ্ত তাঁর কাব্য টি রচনা করেন? তখন বাংলায় রাজা কে ছিলেন?
- বিজয় গুপ্ত ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর কাব্য রচনা করেন।
সেই সময় বাংলার রাজা ছিলেন হুসেন শাহ।
প্রশ্ন – বিজয় গুপ্ত যে আত্মপরিচয় দিয়েছেন টা লিখুন।
- বিজয় গুপ্ত তাঁর আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে শুধু লিখেছেন – “সনাতন তনয় রুক্মিণী গর্ভজাত”। অর্থাৎ তাঁর পিতা ছিলেন সনাতন গুপ্ত, আর মা রুক্মিণী দেবী।
প্রশ্ন – বিজয় গুপ্ত তাঁর কাব্যে যে কালজ্ঞাপক শ্লোকটি লিখেছেন সেটি উল্লেখ করুণ। শ্লোকতি থেকে কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে কী জানা যায়?
- কাব্যের ভূমিকায় বিজয় গুপ্ত লিখেছেন –
“ঋতুশশী বেদশশী পরিমিত শক।
সুলতান হোসেন শাহ নৃপতি তিলক”।।
এখান থেকে বোঝা যায়, ‘অঙ্কস্য বামা গতি’ – এই সূত্র অনুযায়ী, ঋতু = ৬, শশী
= ১, বেদ = ৪, শশী = ১। অর্থাৎ ১৪১৬ শকাব্দ এবং ১৪৯৪ (১৪১৬ + ৭৮) খ্রিষ্টাব্দে বিজয়
গুপ্ত “পদ্মাপুরাণ” কাব্য টি রচনা করেন।
প্রশ্ন – বিজয় গুপ্ত কোন ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন?
- পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসারে বিজয় গুপ্ত বৈষ্ণব ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে কবি যে মনসারও ভক্ত ছিলেন তা বোঝা যায় নিজের গ্রামে দেবী মনসার মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠার ঘটনায়।
প্রশ্ন – “বিজয় গুপ্ত দেবতার মাহাত্ম্য রচনা করেন নাই, মানবেরই মঙ্গলগান গাহিয়াছেন”। - কে কোথায় এই মন্তব্য করেছেন?
- আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর “বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস” গ্রন্থে প্রশ্নোক্ত মন্তব্য টি করেছেন।
প্রশ্ন – ‘মনসা’র চরিত্রাঙ্কনে বিজয় গুপ্ত –এর কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
- প্রচণ্ড হিংসা এবং নির্মন ক্রুরতার এক দাবদাহ চরিত্র মনসা। একটি দেবী চরিত্র কে এরূপ নির্জলা অসদ্গুণের অধিকারী করে তোলার পেছনে কবি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণগুলি মনসার চরিত্রের মধ্য দিয়ে পরিস্ফুট করেছেন। নিজ জীবনের অপরিসীম নৈরাশ্যবোধ থেকেই মনসা বিবেক বুদ্ধিহীন নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন। বাস্তব চরিত্র হিসেবে চরিত্র টি পাঠকের সহানুভূতি আকর্ষণ করে।
প্রশ্ন – ‘বেহুলা’ চরিত্র চিত্রণে বিজয় গুপ্ত –এর কৃতিত্বের পরিচয় দাও।
- হৃদয়ের সমস্ত সহানুভূতি উজার করে দিয়ে সমস্ত মাধুর্য ও পবিত্রতা ঢেলে দিয়ে কবি বেহুলা চরিত্র টি সৃষ্টি করেছেন। বেহুলার সৌন্দর্য বর্ণনা শিল্প সৌকর্যে রমণীয়, সতীত্বে, পবিত্রতায়, মাধুর্যে ও রঙ্গরসে বেহুলা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। বেহুলার সুদৃঢ় চরিত্র, কর্তব্যবোধ ও পতিব্রত্য বর্ণনায় বিজয় গুপ্ত কোন ত্রুটি রাখেননি।
প্রশ্ন – ‘বিজয় গুপ্তের হাতে চাঁদের চরিত্র বিহুস্থলে ক্ষুণ্ণ হয়েছে’ – উক্তিটির টাৎপর্য লেখো।
- চাঁদ সদাগর চরিত্র সৃষ্টিতে বিজয় গুপ্ত আনুপূর্বিক সামগ্রিকতা বা সংহতি রাখতে পারেননি। মনসার বিরুদ্ধাচারণ ও সর্ব প্রকার বিপদের মুখে চাঁদ সদাগর সংকল্পের দৃঢ়তা রাখতে ব্যর্থ। কবির প্রকৃতি ছিল বিশ্লেষণাত্মক। তিনি কাহিনি গ্রন্থনে ও চরিত্র সৃষ্টিতে সামগ্রিকতা সৃষ্টির কৌশল জানতেন না। সমালোচকের মতে, ঐক্য অপেক্ষা বৈচিত্র এবং সংহতি অপেক্ষা স্বয়ং সম্পূর্ণ সৃষ্টির প্রতি প্রবণতা থাকায় চাঁদ সদাগর চরিত্রে ভারসাম্যের অভাব ঘটেছে। তাঁর (চাঁদ সদাগর) পৌরুষ বীর্য ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
প্রশ্ন – বিজয় গুপ্তের কাব্যরস প্রকৃতি বিচার করো।
- বিজয় গুপ্তের কাব্যে অঙ্গীরস বা প্রধান রসের (করুণ) সঙ্গে পরিপূরক হিসেবে হাস্যরসেরও অবতারণা ঘটেছে। কবিধর্মে নয়, যুগধর্ম ও জনরুচির আনুগত্য স্বীকার করে তিনি হাস্যরসাত্মক বর্ণনার অবতারণা ঘটিয়েছেন। Wit এবং Fun –এর প্রকাশ ঘটেছে বেশি। করুণ রস অপেক্ষা হাস্যকৌতুক সৃষ্টিতে বিজয় গুপ্তের কৃতিত্ব সমধিক।
প্রশ্ন – বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যের বৈশিষ্ট লেখো।
- বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান। কাহিনি চয়ন, চরিত্র চিত্রণ ও সমাজ জীবনের প্রতিবিম্বনে বিজয় গুপ্ত দেবমাহাত্ম্য কে অবাস্তব কল্পনা রাজ্যের বিষয়বস্তু করে তোলেননি। তীক্ষ্ণ সমাজ চেতনা ও প্রগাঢ় বাস্তব জীবনবোধ তাঁর কাব্যের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
আরও পড়ুন :
To join our FB Page - CLICK HERE.
0 Comments