কৃত্তিবাস ওঝা বাংলা রামায়ণের আদি কবি :
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত “সেকাল” কবিতায় মহাকবি কালিদাস
প্রসঙ্গে লিখেছেন –
“হায়রে কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল
পণ্ডিতেরা বিবাদ করে লয়ে তারিখ সাল”।।
চৈতন্য পূর্ববর্তী
যুগের কবি কৃত্তিবাস ওঝা –র কবি মহিমা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কবিগুরুর উপরিউক্ত
পংক্তি টি কৃত্তিবাস ওঝা –র ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য একথা মনে হওয়া টা স্বাভাবিক।
নিম্নে বিস্তারিতভাবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
জন্মস্থান – কবি কৃত্তিবাস
ওঝা মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে রবিবার নদীয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
জন্মকাল - আচার্য
দীনেশচন্দ্র সেন “বঙ্গভাষা
ও সাহিত্য” গ্রন্থে কবি কৃত্তিবাস ওঝা –র যে আত্মপরিচয় অংশ তুলে ধরেছেন, সেখানে
কৃত্তিবাস ওঝা লিখেছেন –
“আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পূর্ণ মাঘ মাস।
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস”।।
জন্ম পরিচয়
অংশে কবি কৃত্তিবাস ওঝা জন্ম মাস এবং দিনের উল্লেখ করলেও জন্ম সালের উল্লেখ করেননি,
ফলে সমালোচকদের মধ্যে কবি কৃত্তিবাস ওঝা –র জন্মসাল নিয়ে তৈরি হয়েছে নানান বিতর্ক।
গবেষকগণ তাঁর জন্মসন ভিন্ন ভিন্ন উল্লেখ করেছেন। নিম্নে সেগুলি উল্লেখ করা হল –
১। গবেষক
সুখময় মুখোপাধ্যায়ের মতে কবি কৃত্তিবাস ওঝা ১৩৮৯
খ্রিষ্টাব্দের ৩ রা জানুয়ারি রবিবার কবির জন্মদিন বলে উল্লেখ করেছেন।
২। দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের বলেছেন –
“১৩৮৯ সনই তাঁহার জন্মাব্দ অবধারণ করা অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে করি”।
৩। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি জ্যোতিষ গণনার দ্বারা উল্লেখ
করেছেন, ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই ফেব্রুয়ারি রবিবার রাত্রিতে কবি কৃত্তিবাস জন্মগ্রহণ
করেন।
৪। গোপাল হালদার মনে করেন কবির জন্ম ১৪০৩ খ্রিষ্টাব্দে।
৫। ডঃ সুকুমার সেন এবং ভূদেব
চৌধুরী প্রমুখ ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দ কে কবি কৃত্তিবাস ওঝা –র জন্মসন বলে উল্লেখ
করেছেন।
তবে আধুনিক
গবেষকেরা ১৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দ কে কবি কৃত্তিবাস ওঝা –র জন্মসন বলেছেন।
সৈয়দ আলাওল : আরাকান রাজসভার কবি |
পিতামহ – মুরারি
ওঝা।
পিতা – বনমালী
ওঝা।
মাতা – মালিনী
দেবী।
কবি কৃত্তিবাস
তাঁর পিতা মাতার পরিচয় প্রসঙ্গে লিখেছেন –
“মালিনী নামেতে মাতা বাবা বনমালী।
ছয় ভাই উপজিল সংসারে গুণশালী”।।
![]() |
কৃত্তিবাস ওঝার বংশলতা |
পৈতৃক উপাধি – মুখোপাধ্যায়। কবির পৈতৃক
উপাধি মুখোপাধ্যায় হলেও ওঝা উপাধিতেই তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন।
শিক্ষা লাভ – কবি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পিতা এবং পিতামহের কাছ থেকেই।
১২ বছর বয়সে
উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ‘বড়গঙ্গা’ অর্থাৎ ‘পদ্মা’ পার হয়ে গৌড়ের বিখ্যাত পণ্ডিত রায়মুকুট
আচার্য চূড়ামণি বৃহস্পতি মিশ্রের গৃহে শিক্ষা লাভের জন্য যান। তাঁর আত্মবিবরণী অংশে
এর উল্লেখ রয়েছে –
“এগারো নিবড়ে যখন বারোতে প্রবেশ।
হেন কালে পড়িতে গেলাম উত্তর দেশ।।
বৃহস্পতিবার ঊষা পোহালে শুক্রবার।
পাঠের নিমিত্ত গেলাম বড় গঙ্গা পার”।।
এরপর তিনি
আচার্য দিবাকরের কাছে শিক্ষা লাভ করেন।
পৃষ্ঠপোষক রাজা – কবি কৃত্তিবাস এই প্রসঙ্গেও তাঁর গ্রন্থে পৃষ্ঠপোষক রাজার নাম উল্লেখ করেননি।
ফলে পৃষ্ঠপোষক রাজা সম্পর্কেও সমালোচকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন।
১। সুখময় মুখোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র
মজুমদার প্রমুখ পণ্ডিতেরা পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসেবে গৌড়েশ্বর রুকনুদ্দিন বারবাক শাহ –এর নামোল্লেখ করেছেন। রুকনুদ্দিন
বারবাক শাহ ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৪৭৬ পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন।
২। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশচন্দ্র
সেন প্রমুখরা রাজা গণেশের নাম উল্লেখ করেছেন
পৃষ্ঠপোষক রাজা হিসেবে।
৩। পৃষ্ঠপোষক
রাজা হিসেবে কংসনারায়ণ –এর নাম উল্লেখ করেছেন ডঃ সুকুমার সেন।
সতীনাথ ভাদুড়ী - প্রথম ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্রাপক |
কবি কৃত্তিবাস রচিত গ্রন্থ -
কবি কৃত্তিবাসের
রচিত গ্রন্থের নাম “শ্রীরাম পাঁচালী”। তবে গ্রন্থ
টি বাল্মীকি রচিত সংস্কৃত “রামায়ণ” –এর আক্ষরিক অনুবাদ নয়, ভাবানুবাদ। কবি গৌড়েশ্বরের
নির্দেশে “শ্রীরাম পাঁচালী” গ্রন্থ টি রচনা করেন।
খণ্ড বিভাগ –
কবি কৃত্তিবাস
৭ খণ্ডে তাঁর “শ্রীরাম পাঁচালী” গ্রন্থ টি রচনা করেন। খণ্ডগুলি হল –
১। আদি খণ্ড
২। অযোধ্যা
খণ্ড
৩। আরণ্য
খণ্ড
৪। কিষ্কিন্ধ্যা
খণ্ড
৫। সুন্দরা
খণ্ড
৬। লঙ্কা
খণ্ড এবং
৭। উত্তরা
খণ্ড।
কাহিনি সংগ্রহ –
কবি কৃত্তিবাস
কেবল বাল্মীকি রচিত “রামায়ণ” থেকেই উপাদান গ্রহণ করেননি, এই প্রসঙ্গে কবি কৃত্তিবাসের
স্বীকারোক্তি –
১। “এসব গাহিল গীত জৈমিনি ভারতে।
সম্প্রতি যে গাই তাহা বাল্মীকির মতে”।।
২। “নাহিক এসব কথা বাল্মিকি রচনে।
বিস্তারিত লিখিত অদ্ভুত রামায়ণে”।।
বাল্মীকি রচিত “রামায়ণ” ছাড়াও কবি কৃত্তিবাস “জৈমিনি ভারত”, “অদ্ভুত রামায়ণ”, “দেবী ভাগবত”, “মার্কণ্ডেয় পুরাণ”, “পদ্মাপুরাণ” প্রভৃতি বিখ্যাত মহাকাব্য, পুরাণ এবং তত্ত্বগ্রন্থ থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ |
কবি কৃত্তিবাস বাল্মীকির যে সমস্ত
কাহিনি পরিত্যাগ করেছেন –
১। অম্বরীশ
যজ্ঞ।
২। কার্তিকের
জন্ম।
৩। বিশ্বামিত্র
কথা।
৪। বশিষ্ঠ–বিশ্বামিত্র
বিরোধ।
৫। রামচন্দ্র
কর্তৃক আদিত্য হৃদয় স্তব পাঠ।
কবি কৃত্তিবাস যে কাহিনিগুলি তাঁর
গ্রন্থে সংযোজন করেছেন –
১। গণেশের
জন্ম।
২। বীরবাহুর
যুদ্ধ।
৩। দশরথের
রাজ্যে শনির দৃষ্টি।
৪। হনুমান
কর্তৃক সূর্যকে কক্ষতলে ধারণ।
৫। সৌদাস–দিলীপ
– রঘুর কাহিনি।
৬। সম্বরাসুর
বধ।
৭। কৈকেয়ীর
বরলাভ।
৮। গণকের
ছদ্মবেশে হনুমান কর্তৃক মন্দোদরীর কাছ থেকে রাবণের মৃত্যুবান হরণ।
৯। তরণীসেন–মহীরাবণ–অহিরাবণ
কাহিনি।
১০। মুমূর্ষু
রাবণের কাছে রামচন্দ্রের রাজনীতি শিক্ষা।
১১। লব–কুশের
যুদ্ধ।
১২। রাবন
বধের জন্য রামচন্দ্র কর্তৃক দেবী চণ্ডিকার অকাল বোধন এবং নীলপদ্মের কাহিনি।
১৩। দস্যু
রত্নাকর উদ্ধার ইত্যাদি।
অনুবাদ ও অনুষঙ্গ : Anton Pavlovich Chekhov |
“শ্রীরাম পাঁচালী”র প্রকাশকাল –
উইলিয়াম কেরীর
প্রচেষ্টায় ১৮০২-০৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন থেকে প্রথম “কীর্তিবাস রামায়ণ” নামে কবি কৃত্তিবাস –এর রচিত রামায়ণ
মুদ্রিত হতে শুরু হয়। এইখানে কবি কৃত্তিবাস –এর নাম লেখা হয় ‘কীর্তিবাস’।
শ্রীরামপুর
মিশন থেকে ১৮৩০ থেকে ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কবির বাসস্থান ফুলিয়া শান্তিপুরের ভাষায়
জয়গোপাল তর্কালঙ্কার নতুন করে কবি কৃত্তিবাসের রচিত রামায়ণ প্রকাশ করেন।
মূলরস –
কৃত্তিবাসী রামায়ণের মূলরস বা অঙ্গীরস
করুণরস।
কবি তাঁর
রচিত রামায়ণ কে ‘লাচাড়ি’ (নাচ, গান, ছন্দ, অভিনয়ের
মাধ্যমে পরিবেশিত হয়) ছন্দের পুরাণ বলেছেন।
- কবি কৃত্তিবাস তাঁর গ্রন্থে সর্বদা নিজেকে ‘পণ্ডিত’ বলে প্রচার করেছেন –
“কৃত্তিবাস পণ্ডিত মুরারি ওঝার নাতি।
যাঁর স্কন্দে বিরাজ করেন সরস্বতী”।।
- কবি কৃত্তিবাস তাঁর কাব্য মধ্যে ৩ বিষয়ে একেবারেই নীরব থেকেছেন। সেগুলি হল –
১। তাঁর জন্ম
সাল,
২। কাব্য
রচনার তারিখ এবং
৩। কোন গৌড়েশ্বরের
কাছ থেকে তিনি সংবর্ধনা ও কাব্য রচনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের মৌলিকতা –
বাল্মিকি
রামায়ণ ও অন্যান্য গন্থ থেকে কাহিনি সংগ্রহ করে কবি যেভাবে “শ্রীরাম পাঁচালী” রচনা
করেছেন, তা আকপ্রকার তাঁর মৌলিক রচনা বলা চলে। কবি মৌলিক প্রতিভায় গ্রন্থে সংযুক্ত
করেছেন নানান আখ্যান। উপস্থাপন করেছেন বাঙালী জীবনের নানান দিক। সংস্কৃত ভাষা গহ্বর
থেকে উওদ্ধার করে শ্রীরামকথা কে বাঙালীর প্রাণের সামগ্রী করে তুলেছেন কবি।
- আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কবি কৃত্তিবাস ওঝার “শ্রীরাম পাঁচালী” প্রসঙ্গে বলেছেন –
“কৃত্তিবাস জানিতেন যে, যাহাদের জন্য তিনি কাব্য লিখিয়াছেন তাহারা কি চান, কতটুকু বা কতটা অভিলাষিতা? কিরূপ আলেখ্য তাহাদের নয়ন রঞ্জন হইবে? কবিত্বের সার্থকতায় এই মূল মন্ত্রে তিনি দীক্ষিত হইয়া তবে কাব্য লিখিতে বসিয়াছিলেন, সর্বদা এই মন্ত্র স্মরণপূর্বক কাব্য লিখিয়াছেন, তাই তাঁহার কাব্য এত জমিয়াছে”।
কৃত্তিবাসের রচিত রামায়ণের জনপ্রিয়তা
কারণ –
১। বাঙালীর
অন্তরের কথা বাঙালীর আবেগের কথা কৃত্তিবাস সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তাঁর কাব্যে ফুটিয়ে
তুলেছেন।
২। বাঙালীর
পারিবারিক জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না কবি কৃত্তিবাস আন্তরিকতার সাথে তাঁর কাব্যে
পরিবেশন করেছেন।
৩। করুণরসের
প্রতি সর্বদায় বাঙালীর আকর্ষন। কবি কৃত্তিবাস –এর রামায়ণে রামের বনবাস থেকে সীতার পাতাল
প্রবেশ পর্যন্ত সর্বদায় করুণ রসের উজ্জ্বল প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।
৪। কবি কৃত্তিবাস
তাঁর কাব্যের অলঙ্কারগুলি বাংলার লোকজীবন থেকে সংগ্রহ করেছেন, ফলে কাব্য টি হয়ে উঠেছে
বাঙ্গালীর প্রাণের কাব্য।
৫। বাঙালী
জীবনের চিরন্তন যে প্রবৃত্তি পিতা-মাতা কে ভক্তি, স্বামী প্রেম, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা,
ভ্রাতৃপ্রেম কৃত্তিবাসের রামায়ণে স্বাভাবিকভাবে ফুটে উঠেছে।
৬। পয়ার ও
ত্রিপদী ছন্দের স্বচ্ছ প্রবাহ বাঙালী পাঠককে স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষন করেছে।
কৃত্তিবাসের রচিত রামায়ণে বাঙালীয়ানা –
কৃত্তিবাসের
রামায়ণের ছত্রে ছত্রে বাঙালী জীবনের ছবি প্রতিফলিত
হয়েছে। বাঙালী জীবনের চালচিত্র সঠিকভাবে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য কৃত্তিবাসের রামায়ণ আজও
সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে। কৃত্তিবাসের সীতা তেজস্বী ক্ষত্রিয় নারী নন – বাঙালী গৃহবধূ
মাত্র। ঋষি পত্নীরা সীতার কাছে রামের পরিচয় জানতে চাইলে, সীতা বাঙালী বধূর মতোন লজ্জায়
মুখ নীচু করেন –
“লাজে অধোমুখী সীতা না বলেন আর।
ইঙ্গিতে বুঝান স্বামী ইনি যে আমার”।।
কৃত্তিবাসী
রামের বীরত্ব, প্রেম, মনুষ্যত্ব সবই বাঙালী চরিত্রের মতোই। সীতা কা হারিয়ে রামচন্দ্র
তাই সাধারণ বাঙালীর মতোই বিলাপ করেন। ‘সীতার বনবাস’ অংশে দেবর লক্ষ্ণণের সঙ্গে সীতার
সম্ভাষণ তার মধ্যে বাঙালির দেবর ও ভ্রাতৃজায়ার সঙ্গে রসিকতা চিত্রিত হয়েছে। এই পরিহাস
বাঙালী পরিবারের বৌদি – দেবরের রঙ্গকৌতুক। প্রসঙ্গত বলাই যায় কৃত্তিবাসের রামায়ণ মহাকাব্য
হয়নি, হয়েছে বাঙালীর সুখ-দুঃখের সাথী, পাঁচালী কাব্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী |
কৃত্তিবাসের রামায়ণ মহাকাব্য না
পাঁচালী –
মধ্যযুগের প্রায় সমস্ত কাব্যই পাঁচালির ঢঙে
লেখা। মহাকাব্যের ধারণা সে যুগে ছিল না। তা ছাড়া পশ্চিম ও ভারতীয় অলংকার শাস্ত্রের
নিয়ম অনুসরণ করে কাহিনি, চরিত্র, রসের ঐক্য ও রচনার উৎকর্ষ যদি বিচার করা যায়, তাহলে
এই কাব্যকে যথার্থ মহাকাব্যও বলা যায় কিনা সন্দেহ। “শ্রীরাম পাঁচালী” নামের মধ্যেই
পাঁচালিধর্মিতা বর্তমান। পাঁচালির মতোই এই কাব্যে যেমন রয়েছে আখ্যান, তেমনই গানের সুরও
বর্তমান। আবার পয়ার ছন্দের সার্থক ব্যবহারে যেমন কাব্য টি আবৃত্তি যোগ্য হয়ে উঠেছে
ঠিক তেমনভাবেই অজস্র নাটকীয়তা ছড়িয়ে রয়েছে এই কাব্যে। অথচ আধুনিক কালের অনেক পণ্ডিত
কৃত্তিবাসের রামায়ণকে মহাকাব্য বলার পক্ষপাতী। সুতরাং, এটি একটি অমীমাংসিত বিতর্কিত
বিষয়।
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কৃত্তিবাস ওঝা রচিত “শ্রীরাম পাঁচালী” সম্পর্কে বলেছেন
–
“এই বাংলা মহাকাব্যে কবি বাল্মীকির সময়ের আদর্শ রক্ষিত হয় নাই। ইহার মধ্যে প্রাচীন বাঙালী সমাজই আপনাকে ব্যক্ত করিয়াছে”।
- হারাধন দত্ত ভক্তনিধি প্রথম কৃত্তিবাসের আত্মবিবরনী প্রকাশ করেন।
- হ্যালহেড তাঁর “A Grammar of the Bengali Language”
গ্রন্থে কৃত্তিবাসের রামায়ণ থেকে উদাহরণ নিয়েছেন।
সবশেষে কৃত্তিবাস
ওঝা সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত –এর উক্তি দিয়েই
এই আলোচনার ইতি করা যেতে পারে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত কবি কৃত্তিবাস সম্পর্কে বলেছেন
–
“কৃত্তিবাস কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলঙ্গকার”।
0 Comments