জীবন পঞ্জি :
জন্ম – ১৮৬৩ সালের ১৯ শে জুলাই কৃষ্ণনগরে প্রসিদ্ধ দেওয়ান বংশে।
পিতা – কার্তিকেয় চন্দ্র রায়, ছিলেন “ক্ষিতিশ বাংলাবলী চরিত”, “আত্মজীবন চরিত” –এর রচয়িতা। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল বিদ্যাসাগর, দীনবন্ধু মিত্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের।
মাতা – প্রসন্নময়ী দেবী, ছিলেন অদ্বৈতাচার্যের বংশধর।
শিক্ষা জীবন – কৃষ্ণনগর কলিজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৭৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করেন।
১৮৮০ সালে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফ এ পাশ করেন।
হুগলি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ১৮৮৩ সালে বি এ পাশ করেন।
১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি তে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
পরে ১৮৮৪ সালের এপ্রিল মাসে সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা পড়তে ইংল্যাণ্ড যান।
কর্ম জীবন – বিলেত থেকে ফিরে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেকটর পদে নিযুক্ত হন।
পত্নী – প্রতাপ চন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীর সাথে ১৮৮৭ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিবাহ হয়।
মৃত্যু – স্ত্রীর মৃত্যুর ১০ বছর পর ১৯১৩ সালের ১৭ ই মার্চ মাত্র ৫০ বছর বয়সে নিজস্ব বাস ভূমি “সূরধামে” সন্ন্যাস রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কে ‘হাসির গানে রাজা’ বলা হয়। এবং তিনি ঐতিহাসিক নাটকের শ্রেষ্ঠ শিল্পী।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর বাংলা ভাষায় প্রথম রচনা – “একঘরে” (১৮৮৯) নামক প্রহসন।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ইংল্যাণ্ডে থাকাকালীন “Lyrics of India” নামক তাঁর একমাত্র ইংরেজি কাব্য রচনা করেন এবং এটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালে।
- ইতিহাস ও মস্তত্ত্বের মেলবন্ধনে “সাজাহান” (১৯০৯) দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কে কেন্দ্র করে সজনীকান্ত দাস রচনা করেন – “নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল”।
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কর্ণেল টডের “Annal and Antiquities of Rajasthan” গ্রন্থের কাহিনী অবলম্বনে “তারাবাঈ” (১৯০৩), “দুর্গাদাস” (১৯০৬), “মেবার পতন” (১৯০৮) ঐতিহাসিক নাটক রচনা করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান :
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর রচিত নাটকগুলি কে চার টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
১। প্রহসন
২। পৌরাণিক নাটক
৩। ঐতিহাসিক নাটক
৪। সামাজিক নাটক।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত প্রহসন :
১ | এক ঘরে, ১৮৮৯ |
২ | সমাজ বিভ্রাট বা কল্কি অবতার, ১৮৯৫ |
৩ | বিরহ, ১৮৯৭ |
৪ | সুখী পরিবার বা ত্র্যহস্পর্শ, ১৯০০ |
৫ | প্রায়শ্চিত্ত, ১৯০২ |
৬ | পুনর্জন্ম, ১৯১১ |
৭ | আনন্দ বিদায়, ১৯১২ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত পৌরাণিক নাটক :
১ | পাষাণী, ১৯০০ |
২ | সীতা, ১৯০৮ |
৩ | ভীষ্ম, ১৯১৪ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ঐতিহাসিক নাটক :
১ | তারাবাঈ, ১৯০৩ |
২ | রানা প্রতাপসিংহ, ১৯০৫ |
৩ | দুর্গাদাস, ১৯০৬ |
৪ | নূরজাহান, ১৯০৮ |
৫ | মেবার পতন, ১৯০৮ |
৬ | সোবার রুস্তম, ১৯০৮ |
৭ | সাজাহান, ১৯০৯ |
৮ | চন্দ্রগুপ্ত, ১৯১১ |
৯ | সিংহল বিজয়, ১৯১৫ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত সামাজিক নাটক :
১ | পরপারে, ১৯১২ |
২ | বঙ্গনারী, ১৯১৬ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত কবিতার বই :
১ | আর্যগাথা, ১৮৮২, ১৮৯৩ |
২ | আষাড়ে, ১৯৯৮ |
৩ | হাসির গান, ১৯০০ |
৪ | মন্ত্র, ১৯০২ |
৫ | আলেখ্য, ১৯০৭ |
৬ | ত্রিবেণী, ১৯১২ |
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর উৎসর্গকৃত রচনা :
বিভিন্ন রচনা | উৎসর্গ করেছিলেন | |
১ | Lyrics of India | এডুইন আর্ণল্ড |
২ | আর্যগাথা | অনুজা মালতী দেবী |
৩ | বিরহ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
৪ | পাষাণী | লোকেন্দ্রনাথ পালিত |
৫ | ত্র্যহস্পর্শ | অতুল প্রসাদ সেন |
৬ | মন্ত্র | প্রমথনাথ রায়চৌধুরী |
৭ | প্রায়শ্চিত্ত | যোগেশচন্দ্র চৌধুরী |
৮ | তারাবাঈ | রাজেন্দ্রচন্দ্র শাস্ত্রী |
৯ | রানাপ্রতাপ সিংহ | দীনবন্ধু মিত্র |
১০ | দূর্গাদাস | কার্তিকেয়চন্দ্র রায় |
১১ | আলেখ্য | দেবকুমার রায়চৌধুরী |
১২ | মেবার পতন | মধুসূদন দত্ত |
১৩ | সীতা | পত্নী সুরবালা দেবী |
১৪ | সোবার রুস্তম | অতুলচন্দ্র কৃষ্ণ রায় |
১৫ | নূরজাহান | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
১৬ | সাজাহান | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
১৭ | পুনর্জন্ম | প্যারীচাঁদ মিত্র |
১৮ | চন্দ্রগুপ্ত | হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় |
১৯ | ত্রিবেণী | রসময় লাহা |
২০ | আনন্দ বিদায় | অমৃতলাল বসু |
২১ | পরপারে | প্রসাদ দাস গোস্বামী |
২২ | ভীষ্ম | ভূদেব মুখোপাধ্যায় |
"একঘরে" (১৮৮৯) –
তাঁর বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম রচনা।
১৮৮৭ সালে বিলাত থেকে দেশে ফেরার পর বিনা প্রায়শ্চিত্তে হিন্দু সমাজ তাঁকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। সমাজের এই অন্যায় ব্যবহারে ক্ষুব্ধ মনের প্রতিক্রিয়া কে তিনি এই প্রহসনে ফুটিয়ে তোলেন।
"কল্কি অবতার" (১৮৯৫) –
এই প্রহসনে তিনি ব্রাহ্ম, উদীয়মান হিন্দু, বিলাত ফেরত শ্রেণি, গোঁড়া রক্ষণশীল ও পণ্ডিত সম্প্রদায় কে ব্যঙ্গ করেছেন।
"ত্রহস্পর্শ" (১৯০০) –
প্রহসনটির কেন্দ্রীয় ঘটনা বিবাহ বিভ্রাট।
বৃদ্ধ বয়সে বিজয়গোপালের বিবাহ লিপ্সা কে কেন্দ্র করে ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছে।
প্রহসন টি শিল্প সৃষ্টির দিক থেকে সার্থক না হলেও সমাজের বিভিন্ন স্বরুপের পরিচায়ক।
"আনন্দ বিদায়" (১৯১২) –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে ব্যঙ্গ করে প্রহসন টি তিনি রচনা করেন।
সংক্ষিপ্ত আকারে প্রহসন টি ‘বঙ্গবাসী পত্রিকা’ –য় প্রকাশিত হয়।
১৯১২ সালের ১৬ ই নভেম্বর প্রহসন টি ‘স্টার থিয়েটারে’ অভিনীত হয়। দ্বিতীয় দৃশ্যে অভিনয়ের সময় রবীন্দ্রানুরাগী সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মঞ্চে জুতা ছুঁড়ে মারেন এবং রবীন্দ্র ভক্তরা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কে তাড়া করে নাটক টি বন্ধ করে দেন।
সুকুমার সেন –এর মতে “আনন্দ বিদায়” প্রহসন টি বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় –এর “নন্দ বিদায়” গীতি নাট্যের প্যারোডি।
"পাষাণী" (১৯০০) –
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর প্রথম পৌরাণিক নাটক।
এই নাটকে তিনি স্বর্গের অহল্যা ও দেবরাজ ইন্দ্র কে মর্ত্যভূমির ধূলি মলিন জগতের সাধারণ মানব মানবী তে পরিনত করেছেন। এখানে তিনি এক দিকে যেমন ব্যর্থ যৌবনা অহল্যা কে সহানুভূতির দৃষ্টি তে দেখেছেন অপর দিকে তেমনি অহল্যার চরিত্র ভ্রষ্টতার জন্য পুরুষ জাতি কে দায়ি করেছেন।
"সীতা" (১৯০৮) –
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক।
এই নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পৌরাণিক কাহিনির ‘নবভাষ্য’ দান করেছেন।
নাট্য কাব্য টি মিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত।
পঞ্চাঙ্ক এই নাট্য কাব্য টি প্রথ ‘নবপ্রভা পত্রিকা’ –য় প্রকাশিত হয়।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এই নাটকে রামায়নের “উত্তরকাণ্ড” ও ভবভূতির “উত্তররামচরিত” –এর কাহিনি অবলম্বন করলেও মূল কাহিনি কে গ্রহণ – বর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন -
4 Comments
বাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাট্যকৃতির পরিচয় দিন
ReplyDeleteবাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাট্যকৃতির পরিচয় দিন।(পশ্নমান ৭) এই উত্তরটা দেবেন please
ReplyDeleteআপনার পার্সোনাল মেইল আইডি আমাদের মেইল করে জানান... ধন্যবাদ 💐💐💐
DeleteWow agree with this article ! Regard : Telkom University
ReplyDelete