মহাশ্বেতা দেবী এবং তাঁর রচিত উপন্যাস:
জন্ম – ১৯২৬ সালের ১৪ ই জানুয়ারি (পৌষ সংক্রান্তির
দিন) ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতের বাংলাদেশের ঢাকা শহরে সেকালের প্রতিষ্ঠিত ঘটক পরিবারে
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) জন্ম গ্রহণ করেন।
পিতামহ – সুরেশ চন্দ্র ঘটক। সেযুগে কৃতিত্বের সাথে তিনি
ইংরেজি এবং ইংরেজি বিষয়ে ডবল এম.এ পাস করেন। পরবর্তীকালে তিনি বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে
এস.ডি.ও পদে নিযুক্ত হন।
পিতা – মণীশ ঘটক, তাঁর ছদ্মনাম ‘যুবনাশ্ব’। কল্লোল
সাহিত্য আন্দোলনের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
মাতা – ধরিত্রী দেবী, ছিলেন একজন লেখিকা এবং সমাজকর্মী।
কাকা – ঋত্বিক ঘটক, ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালক
এবং সাহিত্যিক।
শিক্ষা জীবন – জন্মের পর অবিভক্ত ভারতবর্ষের
ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ভর্তি হন ইডেন স্কুলের
মন্টেসরিতে।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিবার ওপার বাংলা ত্যাগ করে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে,
এবং পশ্চিমবঙ্গে তাঁর পরবর্তী শিক্ষা জীবন নতুন করে শুরু হয়।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) মেদনীপুরের মিশন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
পরের বছর ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে মেদনীপুর ছেড়ে শান্তিনিকেতনে চলে যান। রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন।
এরপর তিনি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে বেলতলা বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি
হন।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে।
এরপর ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ পড়ার জন্য মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) পুনরায় শান্তিনিকেতন যান
এবং ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি অনার্স সহ বি.এ পাস করেন।
বি.এ পাস করার পর তিনি কলকাতায় ফিরে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিয়ে এম.এ তে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এম.এ পাস করেন।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর রচিত আখ্যান কাব্য |
কর্ম জীবন – ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) পদ্মপুকুর ইনস্টিটিউটে শিক্ষিকা
হিসেবে যোগদান করেন।
পরের বছর ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ইনকাম ট্যাক্স অফিসে চাকরি পেলেও সেই পদে তাঁর যোগদান
করা হয়নি। এই বছর তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পোস্টাল অডিটে আপার ডিভিশন ক্লার্ক হিসেবে
নিযুক্ত হন।
এরপর তিনি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রমেশ মিত্র বালিকা বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
তারপর তিনি ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপিকা হিসেবে যোগদান করেন বিজয়গড়
জ্যোতিষ রায় কলেজে। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।
দাম্পত্য জীবন – কলেজে পড়াকালীন মহাশ্বেতা
দেবী (Mahasweta Devi) –র গণনাট্য আন্দোলনের
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজন ভট্টাচার্যের সাথে পরিচয় হয় এবং ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁরা বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে
তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) অসিত গুপ্তের সাথে দ্বিতীয় বিবাহ করেন কিন্তু মাত্র ১০ বছর পর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে
তাঁদের দাম্পত্য জীবনেও বিচ্ছেদ ঘটে।
সন্তান – নবারুণ ভট্টাচার্য (বাপ্পা)।
সম্পাদিত পত্রিকা – ‘কর্তিকা’ আদিবাসীদের জন্য
তিনি এই পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। প্রথমে ‘কর্তিকা পত্রিকা’ টি সম্পাদনা করতেন মহাশ্বেতা
দেবী (Mahasweta Devi) –র পিতা মণীশ
ঘটক।
পিতা মারা যাওয়ার পর মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) পত্রিকাটির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। এই পত্রিকা সম্পর্কে মৈত্রেয় ঘটক
বলেছেন –
“The Frist significant effort in alternative literature in Bengali”.
মৃত্যু – ২০১৬ সালের ২৮ শে জুলাই বাংলা তথা ভারতবর্ষের
মহান কথাসাহিত্যিক, সমাজকর্মী মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) –র জীবনাবসান ঘটে।
- অষ্টম শ্রেণি তে পড়াকালীন ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে খগেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘রংমশাল পত্রিকা’ -য় মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) –র প্রথম রচনা “রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা” প্রকাশিত হয়।
- ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) –র প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ “ঝাঁসির রাণী” (জীবনী) প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে এটি ‘দেশ পত্রিকা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
- মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) –র প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “নটী” ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
- মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) তাঁর রচনা প্রসঙ্গে বলেছেন –
“আমি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা বদলে আকাঙ্খিত, নিছক দলীয় রাজনীতিতে নই, স্বাধীনতার একত্রিশ বছরে আমি অন্ন, জল, জমি, ধান, বেধবেগারী কোনটি থেকে মানুষকে মুক্তি পেতে দেখলাম না। যে ব্যবস্থা এই মুক্তি দিল না তার বিরুদ্ধে নিরঞ্জন, শুভ্র ও সূর্য সমান ক্রোধই আমার লেখার প্রেরণা”।
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) রচিত উপন্যাস:
১ |
নটী |
১৯৫৭ |
২ |
মধুরে মধুর |
১৯৫৮ |
৩ |
যমুনা কী তীর |
১৯৫৮ |
৪ |
তিমির লগন |
১৯৫৯ |
৫ |
প্রেমতারা |
১৯৫৯ |
৬ |
এইটুকু আশা |
১৯৫৯ |
৭ |
বায়োস্কোপের বাক্স |
১৯৬০ |
৮ |
রূপরেখা |
১৯৬০ |
৯ |
তারার আঁধার |
১৯৬০ |
১০ |
লায়লা আসমানের আয়না |
১৯৬১ |
১১ |
পরম পিপাসা |
১৯৬১ |
১২ |
সামনে তাকাও |
১৯৬১ |
১৩ |
অমৃত সঞ্চয় |
১৯৬২ |
১৪ |
দিনের পারাবারে |
১৯৬৩ |
১৫ |
অজানা |
১৯৬৫ |
১৬ |
গোলাপের যুদ্ধ |
১৯৬৫ |
১৭ |
বাসস্টপে বর্ষা |
১৯৬৬ |
১৮ |
কবি বদ্যঘটি গাঞির জীবন ও
মৃত্যু |
১৯৬৬ |
১৯ |
আঁধার মানিক |
১৯৬৬ |
২০ |
বিপন্ন আয়না |
১৯৬৬ |
২১ |
তীর্থশেষের সন্ধ্যা |
১৯৬৬ |
২২ |
মধ্যরাতের গান |
১৯৬৭ |
২৩ |
স্বামীর ঘর |
১৯৬৮ |
২৪ |
মাস্টার সাব |
১৯৭২ |
২৫ |
হাজার চুরাশির মা |
১৯৭৫ |
২৬ |
জন্ম যদি তব |
১৯৭৬ |
২৭ |
ধানের শিষে শিশির |
১৯৭৬ |
২৮ |
স্বাহা |
১৯৭৭ |
২৯ |
অরণ্যের অধিকার |
১৯৭৭ |
৩০ |
অপারেশন বাসায় টুডু |
১৯৭৮ |
৩১ |
অগ্নিগর্ভ |
১৯৭৮ |
৩২ |
সরসতীয়া |
১৯৭৯ |
৩৩ |
সুভাগা বসন্ত |
১৯৮০ |
৩৪ |
নৈঋতে মেঘ |
১৯৮০ |
৩৫ |
জটায়ু |
১৯৮০ |
৩৬ |
চোট্টি মুণ্ডা ও তার তীর |
১৯৮০ |
৩৭ |
সিধু কানুর ডাকে |
১৯৮১ |
৩৮ |
তিতুমির |
১৯৮৬ |
৩৯ |
শ্রীশ্রী গণেশ মহিমা |
১৯৮৭ |
৪০ |
টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায়
ও পিরথা |
১৯৯০ |
৪১ |
গান্ধারীর পর্ব |
১৯৯২ |
৪২ |
মার্ডারারের মা |
১৯৯২ |
৪৩ |
ব্যাধখণ্ড |
১৯৯৭ |
৪৪ |
ঊনত্রিশ নম্বর ধারার আসামী |
১৯৯৮ |
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ |
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) রচিত ছোটগল্প গ্রন্থ:
১ |
সোনা নয় রূপো নয় |
১৯৬০ |
২ |
সপ্তপর্ণী |
১৯৬১ |
৩ |
অবিশ্বাস্য |
১৯৭২ |
৪ |
মূর্তি |
১৯৭৯ |
৫ |
স্তনদায়িনী ও অন্যান্য গল্প |
১৯৭৯ |
৬ |
পাঁকাল |
১৯৮৩ |
৭ |
দৌলতি |
১৯৮৪ |
৮ |
ইটের পর ইট |
১৯৮৭ |
৯ |
কি বসন্তে কি শরদে |
১৯৮৭ |
১০ |
প্রথম পাঠ |
১৯৮৮ |
১১ |
ঘাতক |
১৯৮৯ |
১২ |
তালাক ও অন্যান্য গল্প |
১৯৯২ |
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) রচিত গল্প সংকলন:
১ |
গল্পের গরু ন্যাদোশ |
২ |
হারে-রে-রে |
৩ |
বাঘা শিকারী |
৪ |
জাতকের গল্প |
৫ |
মুনেশ্বর |
বাংলা সাহিত্যে উৎসর্গকৃত রচনা (তৃতীয় পর্ব) |
- অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী মহাশ্বেতা দেবী
(Mahasweta Devi) সম্পর্কে বলেছেন
–
“মহাশ্বেতাই সম্ভবত সেই ঔপন্যাসিক যিনি বারবার পর্বে পর্বে নিজেকে ভেঙ্গে আবার গড়েছেন। পথ চলতে চলতে নিজেকে বদলেছেন, বদলেছেন নিজের শিল্পরূপ, কোন বাইরের চাপে নয়, কোন প্রতিষ্ঠানের চাপে নয়, সম্পূর্ণ নিজের হৃদয়ের তাপে নিজের সচেতন ইচ্ছায় এবং সমস্ত সৃষ্টির প্রবাহটিই রেখেছেন আত্মনিয়ন্ত্রণে”।
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) রচিত বিভিন্ন রচনার চলচ্চিত্রায়ন:
১ |
সংঘর্ষ |
১৯৬৮ |
২ |
রুদ্রালি |
১৯৯৩ |
৩ |
হাজার চৌরাসি কি মা |
১৯৯৮ |
৪ |
মাটি মায় |
২০০৬ |
৫ |
গাঙ্গোর |
২০১০ |
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) রচিত বিভিন্ন রচনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত
আলোচনা:
“ঝাঁসির রাণী” (১৯৫৬) –
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) –র প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত।
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে লেখা টি ‘দেশ
পত্রিকা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
“নটী” (১৯৫৭) –
প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।
সিপাহী বিদ্রোহের পটভূমিকায় লেখিকা এই উপন্যাস টি রচনা করেন।
এই উপন্যাসে লেখিকা ইংরেজ সাহেবদের সঙ্গে গরিব চাষিদের সম্পর্ক, শাসকের বিরুদ্ধে
কৃষকদের লাঙল ছেড়ে অস্ত্র তুলে নেওয়া এবং লড়ায়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
“মধুরে মধুর” (১৯৫৭) –
লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) এই উপন্যাসে ভ্রাম্যমান নৃত্যশিল্পীদের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
বিষয়ের অভিনবত্ব এবং প্রেম – প্রীতির কাহিনি হিসেবে এই উপন্যাসের সার্থকতা।
চরিত্র – রাধা, বৃন্দা, কণ্ঠমণি ঠাকুর, সাধন প্রমুখ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : অপরাজেয় কথাশিল্পী |
“প্রেমতারা” (১৯৫৯) –
এই উপন্যাসে লেখিকা চিত্রিত করেছেন সার্কাস শিল্পীদের জীবনে প্রেম, বিরহ, আশা,
নিরাশার কাহিনি।
উপন্যাসে সার্কাসে মহিলাদের উপর মালিকের নিপীড়ন ও শোষণের দিকটিকে প্রাধান্য
দিয়ে তুলে ধরেছেন সমাজে শোষক ও শোষিতের সম্পর্ক।
চরিত্র – প্রেমতারা, গোপী, টিয়া, চন্দনা, লালবাবু, শশী,
বিমল প্রমুখ।
“বায়োস্কোপের বাক্স” (১৯৬০) –
স্মৃতিচারণামূলক উপন্যাস।
নিঃসঙ্গ মহিলার স্মৃতিচারণার সূত্রে উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়েছে একটি পরিবারের
কাহিনি।
“আঁধার মানিক” (১৯৬৬) –
লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ১৮ শতকের
বর্গী আক্রমনের পটভূমিকায় উপন্যাস টি রচনা করেন।
এই উপন্যাসের মূল স্থান বর্ধমান
জেলার আধার মানিক নামক একটি গ্রাম।
তিন কন্যার (পূর্ণশশী, নির্মলা,
পরী) কুলীন আত্মহত্যার উপাখ্যান এই উপন্যাস।
বর্গী আক্রমনের পর কীভাবে
প্রথাসর্বস্ব বাঙালী জীবনে নারীদের দুঃখ, কষ্ট সইতে হত সেই দিক টি লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী
(Mahasweta Devi) এই উপন্যাসে চিত্রিত
করেছেন।
লেখিকা এই উপন্যাস সম্পর্কে বলেছেন –
“আঁধার মানিক’ মূলত লোকবৃত্তের ইতিহাস – কলকাতা কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত জীবন গড়ে ওঠার প্রাক মুহুর্তের ইতিহাস”।
“কবি বিন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু” (১৯৬৬) –
ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাস।
এই উপন্যাসের মূল রস করুণ রস।
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ষোড়শ শতকের পটভূমি তে উপন্যাস টি রচনা করেন।
লেখিকা এই উপন্যাসে চুয়ার সমাজের এক কবির মাধ্যমে সেই সমাজের আকাঙ্খার স্বরূপ
ব্যক্ত করেছেন।
স্বর্ণকুমারী দেবী : প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক |
“হাজার চুরাশির মা” (১৯৭৫) –
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাস টি রচনা করেন।
এই উপন্যাসের মধ্যে রূপকার্থে লুকিয়ে রয়েছে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) –র নিজ সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য।
এই উপন্যাস টি এমন এক মায়ের (সুজাতা) গল্প, যার ছেলেকে তার আদর্শের জন্য রাষ্ট্র
পাশবিক ভাবে হত্যা করে। লাস কাটা ঘরে ব্রতীর লাসের নম্বর ছিল ১০৮৪। এই থেকেই উপন্যাসের
নামকরণ করা হয়েছে।
এই উপন্যাসের জন্য মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’
লাভ লাভ করেন।
চরিত্র – সুজাতা (মা), ব্রতী (পুত্র), দিব্যনাথ (পিতা),
নন্দিনী, বিজিত, পার্থ, লাল্টু, সমু, হেম প্রমুখ।
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) –র এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে গোবিন্দ
নিহালনি হিন্দি ভাষায় “হাজার চৌরাশি কি মা”
নামে চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এবং এই চলচ্চিত্র টি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র বিভাগে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ লাভ করে।
“অরণ্যের অধিকার” (১৯৭৭) –
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার
পূর্বে উপন্যাস টি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বেতার জগৎ’
পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
এই উপন্যাসের ভূমিকায় লেখিকা
মহাশ্বেতা
দেবী (Mahasweta Devi) জানিয়েছেন, এই
উপন্যাস টি রচনার জন্য তিনি সুরেশ সিং –এর “Dust Strom and Hanging Mist” গ্রন্থের কাছে বিশেষভাবে
ঋণী।
১৮৯৯ – ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত অরণ্যের অধিকার কে কেন্দ্র করে মুণ্ডাদের বিদ্রোহ
উলগুলান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং এই ঐতিহাসিক সত্যের নিরিখে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) উপন্যাস টি রচনা করেন।
এই উপন্যাসের জন্য মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ লাভ করেন।
পরবর্তীকালে এই উপন্যাস টি
হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, রাজস্থানি, ওড়িয়া, অসমিয়া প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়।
কামিনী রায় : দেশের প্রথম মহিলা স্নাতক |
মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) –র প্রাপ্ত পুরস্কার ও সন্মাননা:
১। “অরণ্যের অধিকার” (১৯৭৭) উপন্যাসের জন্য মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সাহিত্য আকাডেমি’ পুরস্কার লাভ করেন।
২। সমাজ সেবামূলক কাজের জন্য ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকার দ্বারা ‘পদ্মশ্রী’ সন্মানে সন্মানিত হন।
৩। তিনি তাঁর “হাজার চুরাশির মা” (১৯৭৫)
উপন্যাসের জন্য ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় লেখিকা হিসেবে সাহিত্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ
পুরস্কার ‘জ্ঞানপীঠ’ পুরস্কার লাভ করেন।
৪। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ম্যাগসাইসাই’
পুরস্কার দ্বারা সন্মানিত হন।
৫। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয়
মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানের সাথে তিনি ‘ডি.লিট’
ডিগ্রি অর্জন করেন।
৬। ২০০৫ সালে ইতালি থেকে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta Devi) ‘নোনিনো’ পুরস্কার
লাভ করেন।
৭। ২০০৬ সালে ভারত সরকার দ্বারা ‘পদ্মবিভূষণ’
সন্মানে সন্মানিত হন।
৮। ২০০৭ সালে তিনি ‘সার্ক সাহিত্য’ পুরস্কার
লাভ করেন।
৯। ২০১০ সালে মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) ‘যশবন্তরাও চবন’ জাতীয় পুরস্কার
লাভ করেন।
১০। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ
সরকার কতৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সন্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’
–এর দ্বারা মহাশ্বেতা দেবী (Mahasweta
Devi) কে সন্মানিত করা হয়।
0 Comments