Subscribe Us

বাংলা সাহিত্যে সাময়িক পত্রিকা (দ্বিতীয় পর্ব)

সাময়িক পত্রিকা

বাংলা সাহিত্যে সাময়িক পত্রিকা   (দ্বিতীয় পর্ব) - এই ব্লগপোষ্টে ৯ টি বাংলা সাহিত্যে সাময়িক পত্রিকা   সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই ব্লগপোষ্ট টি "বাংলা সাহিত্যে সাময়িক পত্রিকা " -র দ্বিতীয় পর্ব।


  • ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদ পত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’। ১৭৮০ সালের ২৯ শে জানুয়ারি হিকি (Hicky) কতৃক প্রকাশিত হয়। বেঙ্গল গেজেট ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সংবাদ পত্র।

 

দিগদর্শন পত্রিকা  (মাসিক) –

প্রথম প্রকাশ – ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলা ভাষায় প্রথম মুদ্রিত সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’ নামক মাসিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়।

সম্পাদক – জোশুয়া মার্শম্যান –এর পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যান এই পত্রিকা টি সম্পাদিত করেন।

প্রকাশক – শ্রীরামপুর ব্যাপটিষ্ট মিশন।

দিগদর্শন পত্রিকার তিন টি বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। যথা –

বাংলা সংস্করণ – ১ থেকে ২৬ সংখ্যা,

ইংরেজি বাংলা সংস্করণ – ১ থেকে ১৬ সংখ্যা এবং

ইংরেজি সংস্করণ – ১ থেকে ১৬ সংখ্যা।

 


    আরও পড়ুন - 

    বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সময়িক পত্রিকা (প্রথম পর্ব)



    সমাচার দর্পন  (সাপ্তাহিক) –

    প্রথম প্রকাশ – ১৮১৮ সালে ২৩ শে মে ‘সমাচার দর্পন’ সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

    পত্রিকা টি প্রতি শনিবার শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হত।

    প্রথম ৩ সপ্তাহ এই পত্রিকা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।  

    সম্পাদক – জে সি মার্শম্যান।

    শ্রীরামপুর মিশন ১৮২৯ সাল থেকে সমচার দর্পন পত্রিকা কে দ্বিভাষিক (বাংলা ও ইংরেজি) করবার ব্যবস্থা করে।

    ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে পত্রিকা টি সপ্তাহে দুই বার প্রকাশ করা আবশ্যিক মনে হলে, ১৮৩২ খ্রি এর ১১ ই জানুয়ারি বুধবার অতিরিক্ত সমাচার দর্পন –এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

    তবে সমাচার দর্পন –এর অতিরিক্ত সংখ্যা টি দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়নি। ১৮৩৪ খ্রি ৮ ই নভেম্বর থেকে সমাচার দর্পন সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে  পুণরায় প্রতি শনিবার প্রকাশিত হতে শুরু করে।

    ১৮৪১ খ্রি ২৫ শে ডিসেম্বর সমচার দর্পন পত্রিকার শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

    দ্বিতীয় পর্যায় সমাচার দর্পন সম্পাদনা করতেন – ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায়। যিনি ভূত পূর্ব ‘জ্ঞানদীপিকা’ –র সম্পাদক ছিলেন।

    দ্বিতীয় পর্যায়ের সমাচার দর্পন ১৮৪৩ খ্রি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জীবিত ছিল।

    শ্রীরামপুর মিশন পুণরায় সমাচার দর্পন প্রকাশ করার সংকল্প করেন এবং ১৮৫১ খ্রি ৩ রা মে শনিবার নব পর্যায় সমাচার দর্পন (তৃতীয় বার) –এর প্রথম কলম প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়।

    নবপর্যায় সমাচার দর্পন মাত্র দেড় বছর প্রকাশিত হওয়ার পর চিরতরে লুপ্ত হয়।

    এই পত্রিকা লুপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে ১৮৫৩ খ্রি ১২ ই এপ্রিল ‘সংবাদ প্রভাকর’ –এ লেখা হয় –

    “অগ্রহায়ন ১২৫৯। ………… সমাচার দর্পন পত্র শ্রীরামপুরে গঙ্গার জলে প্রাণ ত্যাগ করে।"

    ** (১৮১৮ খ্রি থেকে ১৮৪০ খ্রি মধ্যে ‘সমাচার দর্পন’ –এ প্রকাশিত জ্ঞাতব্য সংবাদ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কতৃক প্রকাশিত “সংবাদ পত্রে সেকালের কথা” গ্রন্থে মুদ্রিতাকারে প্রকাশিত)

     


    আরও পড়ুন - 

    বাংলা সাহিত্যে যা কিছু প্রথম



    বাঙ্গাল গেজেটি  (সাপ্তাহিক) –

    বাঙ্গাল গেজেটি বাঙালী পরিচালিত প্রথম বাংলা সংবাদ পত্র।

    প্রথম প্রকাশ – ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে।

    প্রকাশক – গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

    বাঙ্গাল গেজেটির কোন সংখ্যা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বছর খানেক প্রকাশিত হওয়ার পর বাঙ্গাল গেজেটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

     

    গস্‌পেল মাগাজীন  (মাসিক) –

    প্রথম প্রকাশ – ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে।

    খ্রীষ্টিয় তত্ত্ব বিষয়ক সর্বপ্রথম সাময়িক পত্র এটি।

    Baptist Auxiliary Missionary Society কতৃক প্রকাশিত গস্‌পেল মাগাজীন সেই সময়ের দ্বিতীয় মাসিক পত্রিকা।

    গস্‌পেল মাগাজীন সাময়িক পত্রের প্রতি পৃষ্ঠার বাম স্তম্ভে – ইংরেজি এবং দক্ষিণ স্তম্ভে – বঙ্গানুবাদ থাকত।

     


    আরও পড়ুন - 

    বাংলা সাহিত্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান


     

    ব্রাহ্মণ সেবধি  (১৮২১) –

    প্রথম প্রকাশ – কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি দূর দেশ হইতে কয়েক প্রশ্ন সম্বলিত এক খানি পত্র ১৪ ই জুলাই ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে ‘সমাচার দর্পন’ –এ প্রকাশ করেন।

    রাজা রামমোহন রায় এই পত্রখানিকে মিশনারীদের পক্ষ থেকে হিন্দু ধর্মের প্রতি অযথা আক্রমণ বোধ করা সঙ্গত মনে করেছিলেন। এই কারণেই ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ সাময়িক পত্রের প্রকাশ।

    রাজা রামমোহন রায় শিবপ্রসাদ শর্ম্মা ছদ্মনামে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টম্বর মাসে ‘ব্রাহ্মণ সেবধি ব্রাহ্মণ ও মিশনারী সম্বাদ সং ১’ নামে সাময়িক পত্র প্রকাশ করেন।

    এই সাময়িক পত্রের এক পৃষ্ঠায় বাংলা এবং অপর পৃষ্ঠায় তার ইংরেজি অনুবাদ থাকত।

    সাময়িক এই পত্রিকা টি শিবপ্রসাদ শর্ম্মা ছদ্মনামে প্রকাশিত হলেও রামমোহন রায় যে প্রকৃত ব্রাহ্মণ সেবধি –র লেখক – এই কথার উল্লেখ রামমোহন রায়ের প্রতিপক্ষ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় –এর ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ –য় পাওয়া যায়।

    ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ব্রাহ্মণ সেবধি –র প্রথম ৩ সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায়। সম্ভবত তারপর আর এর কোন সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি।

     

    সম্বাদ কৌমুদী  (সাপ্তাহিক) –

    সম্পাদক – তারাচাঁদ দত্ত ও ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়ে মিলে এই পত্রিকা প্রকাশ করেন।

    প্রথম প্রকাশ – ১৮২১ সালের ৪ ঠা ডিসেম্বর।

    পত্রিকা টি প্রতি মঙ্গলবার প্রকাশিত হত। কিন্তু ১৮২২ সালের ১৬ ই মার্চ থেকে মঙ্গলবারের পরিবর্তে শনিবার প্রকাশিত হতে শুরু করে।

    পৃষ্ঠা সংখ্যা – এই পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮ টি।

    হিন্দুদের কতকগুলি প্রচলিত প্রথা, বিশেষত – সহমরণের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করায় এই পত্রিকা জন সাধারণের মধ্যে বিরাগের সৃষ্টি করেছিল।

    ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ‘সম্বাদ কৌমুদী’ দ্বিসাপ্তাহিক পত্রে পরিণত হয়।

     


    আরও পড়ুন - 

    স্বর্ণকুমারী দেবী : প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক



    পশ্বাবলি  (মাসিক) –

    প্রথম প্রকাশ – ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি কতৃক ‘পশ্বাবলি’ নামে আকখানি বাংলা মাসিক পুস্তক প্রকাশিত হয়।

    এর প্রত্যেক সংখ্যায় একটি করে জন্তুর বিবরণ এবং প্রথম পৃষ্ঠায় সেই জন্তুর কাঠ খোদায় ছবি থাকত। ‘পাশ্বাবলি’ –র ৪ সংখ্যার বিষয় ছিল –

    প্রথম সংখ্যা – সিংহের বৃতান্ত, ফেব্রুয়ারি ১৮২২

    দ্বিতীয় সংখ্যা – ভালুকের বৃতান্ত, মার্চ ১৮২২

    তৃতীয় সংখ্যা – হস্তীর বৃতান্ত, এপ্রিল ১৮২২

    চতুর্থ সংখ্যা – গণ্ডার ও হিপপটমস বৃতান্ত, আগষ্ট ১৮২২

     


    আরও পড়ুন - 

    বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ কাহিনী



    সমাচার চন্দ্রিকা  (সাপ্তাহিক) –

    সম্পাদক – ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

    প্রথম প্রকাশ – ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে ৫ ই মার্চ সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে প্রথম প্রকাশিত হয়।

    ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পত্রিকা সম্পাদনার পূর্বে ‘সম্বাদ কৌমুদী’ –র সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু ত্রয়োদশ সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর অংশিগণের সাথে ধর্ম বিষয়ে (রাজা রামমোহন রায় –এর) মত পার্থক্য দেখা দিলে তিনি এই পত্রিকা টি প্রতিষ্ঠা করেন।

    এই পত্রিকা –র প্রথম সংখ্যা মঙ্গলবার প্রকাশিত হলেও দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে প্রতি সোমবার প্রকাশিত হতে শুরু করে।

    এই পত্রিকার সদস্যদের প্রতি মাসে ১ টাকা মূল্য দিতে হত।

    ১৮২৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই পত্রিকা সাপ্তাহিক দ্বিপত্রে পরিণত করা হয়। এবং প্রতি সংখ্যা প্রকাশিত হতে শুরু করে প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবার

    ১৮৪৮ সালের ২০ ই ফেব্রুয়ারি ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় পরলোকগমন করলে তাঁর পুত্র রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন এই পত্রিকা পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ঋণ জালে জড়িয়ে পড়ায় ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ –র স্বত্ত্ব বা হেড বিক্রি করে দেন ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায় –এর কাছে।

     


    আরও পড়ুন - 

    সৈয়দ মুজতবা আলী  : “দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা



    খ্রীষ্টের রাজ্যবৃদ্ধি  (মাসিক) –

    খ্রীষ্টয় তত্ত্ব সম্বন্ধে এটি দ্বিতীয় মাসিক পত্রিকা।

    পত্রিকা টি শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয়।

    পৃষ্ঠা সংখ্যা – এই পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮ টি।


    আরও  পড়ুন -

    Post a Comment

    0 Comments