Subscribe Us

বাংলা সাহিত্যে সময়িক পত্র (প্রথম পর্ব)

বেঙ্গল গেজেট, দিগ্‌দর্শন মাসিক পত্রিকা, বাঙ্গাল গেজেটি, সংবাদ প্রভাকর, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, সোমপ্রকাশ, অবোধবন্ধু, অমৃতবাজার পত্রিকা, বঙ্গদর্শন, নবপর্যায় বঙ্গদর্শন,

  • ভারতবর্ষ –এর প্রথম মুদ্রিত সংবাদ পত্র – বেঙ্গল গেজেট

সম্পাদক – জেমস অগাস্টাস হিকি।

প্রথম প্রকাশ – ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জানুয়ারি।

 

  • বাংলা ভাষায় মুদ্রিত প্রথম সংবাদ পত্র – দিগ্‌দর্শন মাসিক পত্রিকা

সম্পাদক – জন ক্লার্ক মার্শম্যান।

প্রথম প্রকাশ – ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস।

 

  • বাঙালী পরিচালিত প্রথম বাংলা সংবাদ পত্র – বাঙ্গাল গেজেটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

সম্পাদক – গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।

প্রথম প্রকাশ – ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন।

 

  • খ্রীষ্টিয় তত্ত্ব বিষয়ক প্রথম সাময়িক পত্র - মাসিক গসপেল মাগাজীন

প্রকাশক – Baptist Auxiliary Missionary Society.

প্রথম প্রকাশ – ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর।

 

  • বাঙালীর কতৃক উর্দু ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক পত্র – সাপ্তাহিক জাম ই জাহান নূমা

সম্পাদক – হরিহর দত্ত।

প্রথম প্রকাশ – ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে মার্চ।

 

  • ফার্সী ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র – সাপ্তাহিক মীরাৎ উল্‌ আখবার

প্রথম প্রকাশ – ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই এপ্রিল।

 


  • মুসলমান সম্পাদিত প্রথম বাংলা সংবাদ পত্র – সাপ্তাহিক সমাচার সভারাজেন্দ্র

সম্পাদক – সেখ আলীমুল্লাহ।

প্রথম প্রকাশ – ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ই মার্চ।

 

  • বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক সংবাদ পত্র – সংবাদ প্রভাকর

সম্পাদকঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত

প্রথম প্রকাশ – ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ই জুন।

 

  • মফস্বল থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র – সাপ্তাহিক মুর্শিদাবাদ সম্বাদপত্রী

সম্পাদক – গুরুদয়াল চৌধুরী।

প্রথম প্রকাশ – ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ই মে।

 

  • বাঙালী কতৃক কাশী তে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাময়িক পত্র – সাপ্তাহিক বারাণসী চন্দ্রোদয়

 সম্পাদক – উমাকান্ত ভট্টাচার্য।

প্রথম প্রকাশ – ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ রা মে।

 

  • ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদ পত্র - ঢাকা প্রকাশ (১৮৬১)।

সম্পাদক – কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার।

 

  • দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার প্রথম দৈনিক সংবাদ পত্র – পয়গাম (১৯৪৭)।

সম্পাদক – ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী।


 

বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সাময়িক পত্র -


তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা :

প্রথম প্রকাশ – মাসিক পত্রিকা রূপে ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ই আগষ্ট।

সম্পাদক – অক্ষয়কুমার দত্ত।

তত্ত্ববোধিনী সভার উদ্দেশ্য ছিল ব্রহ্ম সমাজ যাতে স্থানে স্থানে স্থাপিত হয় এবং বেদান্ত ব্রহ্ম বিদ্যার প্রচার ও সাধনা। এবং এই তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র স্বরূপ ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

অক্ষয়কুমার দত্ত ১২ বছর ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকা সম্পাদনার দ্বায়িত্বে ছিলেন। তিনি মাসিক ৩০ টাকা বেতনে সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তাঁর কর্ম দক্ষতার গুণে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ টাকা ও পরে ৬০ টাকা হয়েছিল।

অক্ষয়কুমার দত্ত –এর পর নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় –এর সম্পাদনার পর যথাক্রমে এই পত্রিকার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন –

১। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর – ডিসেম্বর ১৮৫৯ থেকে মার্চ ১৯৬২,

এপ্রিল ১৯০৯ থেকে এপ্রিল ১৯১০,

এপ্রিল ১৯১৫ থেকে জানুয়ারি ১৯২৩ (ক্ষিতিন্দ্রনাথ ঠাকুর –এর সহযোগিতায়)।

২। অযোধ্যানাথ পাকড়াশী – ফেব্রুয়ারি ১৮৬৫ থেকে এপ্রিল ১৮৬৭,

এপ্রিল ১৮৬৯ থেকে ১৮৭২।

৩। হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন – এপ্রিল ১৮৬৭ থেকে এপ্রিল ১৮৬৯,

এপ্রিল ১৮৭৭ থেকে সেপ্টম্বর ১৮৮৪।

৪। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর – সেপ্টম্বর ১৮৮৪ থেকে এপ্রিল ১৮৮৮।

৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – এপ্রিল ১৯১০ থেকে এপ্রিল ১৯১৫।

৬। ক্ষীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর – এপ্রিল ১৯১৫ থেকে জানুয়ারি ১৯২৩।

 

অক্ষয়কুমার দত্ত –এর পাণ্ডিত্যে ও প্রজ্ঞা দৃষ্টির বলে এই পত্রিকা উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পত্রিকায় পরিণত হয়।

এই পত্রিকায় প্রকাশিত অক্ষয়কুমার দত্ত এবং বিদ্যাসাগর –এর রচিত গদ্যগুলি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

অক্ষয়কুমার দত্ত –এর “ভারতীয় উপাসক সম্প্রদায়” –এর জ্ঞানমূলক প্রবন্ধ “ধর্মনীতি”, “চারুপাঠ” গ্রন্থের প্রবন্ধাবলী এই পত্রিকা তে প্রথম প্রকাশিত হয়।

 


সোমপ্রকাশ :

প্রথম প্রকাশ – সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই নভেম্বর।

সম্পাদক – দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ, ছিলেন কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক।

এই পত্রিকায় প্রথম বিশুদ্ধ রূপে বাংলা সাময়িক পত্রে রাজনীতির সূত্রপাত করে।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সময় এই পত্রিকা জাতীয় কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষকতা করে।

নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই পত্রিকা সরব হয়েছিল এবং দরিদ্র কৃষকদের উদ্ভুদ করতে এই পত্রিকা নানান ধরনের রচনা প্রকাশ করত।

 

অবোধবন্ধু :

প্রথম প্রকাশ – মাসিক পত্রিকা রূপে এই পত্রিকা টি ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস।

সম্পাদক – যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কৃষ্ণকোমল ভট্টাচার্য এবং বিহারীলাল চক্রবর্তী এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন।

যোগেন্দ্রনাথ ঘোষ –এর সম্পাদনার বছর খানেক পরই বিহারীলাল চক্রবর্তী এই পত্রিকার স্বত্বাধিকার হন।

বিহারীলাল চক্রবর্তী –র বিভিন্ন রচনা – “নিসর্গ সন্দর্শন”, “বঙ্গসুন্দরী”, “সুরবালা কাব্য” এই পত্রিকা তে প্রকাশিত হয়।

বিহারীলাল চক্রবর্তী –র সম্পাদনা কালেই এই পত্রিকায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় –এর “ইন্দ্রের সুধাপান” (শ্রাবণ, ১২৭৬ বঙ্গাব্দ) এবং কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য –এর “নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবন বৃতান্ত” প্রকাশিত হয়।

 


অমৃতবাজার পত্রিকা :

প্রথম প্রকাশ – সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ই ফেব্রুয়ারি।

সম্পাদক – শিশিরকুমার ঘোষ।

নবীনচন্দ্র সেন এই পত্রিকা সম্পর্কে বলেছিলেন –

“তিনি ও তাঁহার পত্রিকায় প্রথম এই দেশে স্বদেশ ভক্তির পথপ্রদর্শক।“

পত্রিকা টি যশোহর থেকে প্রকাশিত। পরে ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে ডিসেম্বর এই পত্রিকার কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।

এই পত্রিকা প্রথমে সাপ্তাহিক পত্রিকা রূপে আত্মপ্রকাশ করলে ও ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পত্রিকা টি দৈনিক পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হতে শুরু করে।

পত্রিকা টি প্রথমে বাংলা এবং ইংরেজি (দ্বিভাষিক) ভাষায় প্রকাশিত হয়। পরে দ্বিভাষিক থেকে ইংরেজি ভাষায় বিবর্তিত হয়ে কলকাতা সহ এলাহাবাদ, কটক, রাঁচি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।

এই পত্রিকা ছিল ভারতীয় মালিকানায় পরিচালিত সবচেয়ে পুরানো দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা।

পত্রিকা টি প্রথম প্রকাশের ১২৩ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 


বঙ্গদর্শন :

প্রথম প্রকাশ – মাসিক পত্রিকা রূপে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই এপ্রিল।

সম্পাদকসাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকার সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পরে সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁর অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতি অলোচনার সাথে সাথে গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য সমালোচনা এই পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত।

এই পত্রিকার প্রধান লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হলেও এই পত্রিকায় রামদাস সেন, অক্ষয় সরকার, চন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ পন্ডিত নিয়মিত লেখালেখি করতেন।

এই পত্রিকার ভাষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথঠাকুর বলেছেন –

“বঙ্গভাষা সহসা বাল্যকাল হইতে যৌবনে উপনীত হইল।“

মাসিক ‘বঙ্গদর্শন’ –এ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় –এর “বিষবৃক্ষ”, “ইন্দিরা”, “চন্দ্রশেখর”, “যুগলাঙ্গুরীয়”, “রজনী”, “রাধারাণী”, “কৃষ্ণকান্তের উইল” প্রকাশিত হয়।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত “বন্দে মাতরম” এই পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশিত হয়।

এই পত্রিকায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী –র “বঙ্গীয় যুবক ও তিন কবি” ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় –এর পর পত্রিকার সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন শ্রীশচন্দ্র মজুমদার। এবং শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনা কালেই এই পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

পরে শ্রীশচন্দ্র মজুমদার –এর ভাই শৈলেশচন্দ্র মজুমদার পত্রিকা টি পুনঃপ্রকাশের চেষ্টা করেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে এই পত্রিকা সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন।

নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই পত্রিকা সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করে লেখেন –

 

“বঙ্গদর্শনের সম্পাদকীয় লইবার জন্য বন্দুকের দুই চোঙভরা অনুরোধ আমার মস্তকে বর্ষিত হয়েছে কিন্তু ধরাশায়ী হই নাই।“

১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদনার দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করে পত্রিকার নাম রাখেন – ‘নবপর্যায় বঙ্গদর্শন’। রবীন্দ্রনাথ ৩ বছর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

এই ‘নবপর্যায় বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর –এর “চোখের বালি” উপন্যাস টি প্রথম প্রকাশিত হয়।

 

আরও পড়ুন -

মুকুন্দ চক্রবর্তী : “চণ্ডীমঙ্গল” কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি

অনুবাদ ও অনুষঙ্গ : টি এস এলিয়ট

নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত বিভিন্ন রচনা

উৎপল দত্ত : "ফেরারী ফৌজ" -এর রচয়িতা

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় : “পথের পাঁচালী” -র রচয়িতা

নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ

বুদ্ধদেব বসু : “যৌবন বসন্তের কবি”

সৈয়দ মুজতবা আলী  : “দেশে-বিদেশে”-র রচয়িতা

নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র

কাজী নজরুল ইসলাম : রবীন্দ্রনাথের পর ‘প্রথম মৌলিক কবি’

বাংলা সাহিত্যে অপ্রধান মঙ্গলকাব্য ও কবি

কিছু বাংলা গ্রন্থের পূর্বনাম

Post a Comment

0 Comments