Subscribe Us

বাংলা সাহিত্যে পৌরাণিক নাটক

বাংলা সাহিত্যে পৌরাণিক নাটক || পৌরাণিক নাটক || bangla sahitye pauranik natok || BANGLASAHITTO || সুকুমার সেন || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || মনমোহন বসু ||


বাংলা সাহিত্যে পৌরাণিক নাটক

 

বাংলা নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় বিদেশীদের উদ্যোগেই। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ দেশীয় গেরাসিম লেবেদেফের 'বেঙ্গলি থিয়েটারে' "The Disguise" -এর বাংলা অনুবাদ "কাল্পনিক সংবদল" নাটক অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকের পথচলা শুরু হয়। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা নাটক রচনা বা অভিনয়ের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। ধরে নেওয়া হয় ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে আর কোন বাংলা নাটক রচিত হয়নি। তবে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে নবীনচন্দ্র বসুর বাড়ির শখের থিয়েটারে "বিদ্যাসুন্দর পালা" অভিনীত হয়। যদিও এটি নাটক নয়, গীতাভিনয়।

 

  • ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে বাংলা মৌলিক নাটক রচনার সূত্রপাত। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে জি সি গুপ্ত "কীর্তিবিলাস" নামে একটি সামাজিক নাটক রচনা করেন। সেই বছরই তারাচরণ শিকদার "ভদ্রার্জুন" নামে একটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন এবং এই পৌরাণিক নাটক রচনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা পৌরাণিক নাটকের পথ চলা। এই পৌরাণিক নাটককে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেন গিরিশ ঘোষগিরিশচন্দ্রের হাতে বাংলা পৌরাণিক নাটকের পরিপূর্ণ বিকাশ।

 


  • উনিশ শতকে বাংলা পৌরাণিক নাটকের উদ্ভব এবং স্বর্ণযুগও বলা হয়। এই সময়কালে অধিকাংশ নাট্যকার পৌরাণিক নাটক রচনা করেন। পুরাণের প্রতি বাঙালির সহজাত আকর্ষণ এর প্রধান কারণ। পুরাণের নানা কাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বংশ পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে‌ চালিত হয়েছে ছড়ায়, কথাই, সান্ধ্য অবসরে চন্ডীমন্ডপের গল্পে, আমদে, প্রমোদে, যাত্রা, গানে।

 

  • বাংলা ভাষায় প্রথম পৌরাণিক নাটক "ভদ্রার্জুন"। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে তারাশঙ্কর শিকদার এই পঞ্চাঙ্ক পৌরাণিক নাটকটি রচনা করেন। নাটকটি মহাভারতের আদি পর্বের অন্তর্গত অর্জুন কর্তৃক কৃষ্ণ ভগিনী সুভদ্রা হরণের কাহিনী নিয়ে রচিত। এই নাটক সম্পর্কে সুকুমার সেন বলেছেন -

"ইহাই ইংরেজি ও সংস্কৃতের যুক্ত আদর্শে রচিত প্রথম মৌলিক মধুরান্তিক বাঙ্গালা নাটক। ভদ্রার্জুনের কাহিনী পৌরাণিক কিন্তু পরিকল্পনায় সংস্কৃত নাটকের পুরোপুরি অনুসরণ নাই"।

 


বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক নাটক রচয়িতা রামনারায়ণ তর্করত্ন। তাঁর রচিত পৌরাণিক নাটকগুলি হল -

১. রুক্মিণী হরণ (১৮৭১)

২. কংস বধ (১৮৭৫)

৩. ধর্ম বিজয় (১৮৭৫)

"রুক্মিণী হরণে"র (১৮৭১) কাহিনী গৃহীত হয়েছে পুরান থেকে।

কৃষ্ণ কে আনয়নের জন্য কংস কর্তৃক অক্রুর কে বৃন্দাবনে প্রেরণ, কৃষ্ণ কর্তৃক কংসকে নিধন এবং উগ্রসেনের পুনরায় সিংহাসন লাভ "কংস বধ" (১৮৭৫) নাটকের বিষয়বস্তু।

"ধর্ম বিজয়" (১৮৭৫) নাটকটি রচিত হয়েছে রাজা হরিশচন্দ্রের কাহিনী নিয়ে।

 

  • বাংলা ভাষায় শেক্সপিয়ারের নাটকের প্রথম বাংলা নাট্য অনুবাদক হরচন্দ্র ঘোষ। তিনি "কৌরব বিজয়" (১৮৫৮) নামে একটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন। এই নাটকের কাহিনী গৃহীত হয়েছে মহাভারত থেকে।


"অলীক কুনাট্য রঙ্গে            মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে

                   নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়"।

অগত্যা বাংলা নাটক রচনায় কলম ধরলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি "শর্মিষ্ঠা" নামে প্রথম নাটক রচনা করলেন। "শর্মিষ্ঠা" একটি পৌরাণিক নাটক। মধুসূদন দত্ত মহাভারতের শর্মিষ্ঠা – দেবযানী - যাযতি উপাখ্যান অবলম্বনে এই নাটকটি রচনা করেন। শর্মিষ্ঠার নির্বাসন থেকে নাটক শুরু হয়ে যাযাতির জোড়া মুক্তিতে নাটকের সমাপ্তি। নাটকে দেবযানী ও শর্মিষ্ঠার প্রেমের জটিলতা ঈর্ষা দ্বন্দ্ব এবং প্রেমের নিষ্ঠায় প্রাধান্য লাভ করেছে।

এই নাটকের পর মধুসূদন দত্ত গ্রিক পুরাণের "Apple of Discord" -এর কাহিনী অবলম্বনে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন "পদ্মাবতী" নাটক।

 


  • সুকুমার সেনের মতে কামিনী সুন্দরী দেবী দ্বিজ তনয়া’ নামে জনৈকা নাট্যকার

১. উর্বশী (১৮৬৬)

২. ঊষা (১৮৭১)

৩. রামের বনবাস (১৮৭৭)

- প্রভৃতি পৌরাণিক নাটক রচনা করেছিলেন।

 

  • বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় মঞ্চের প্রয়োজনে বেশ কিছু পৌরাণিক নাটক লিখেছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য -

১. রাবণ বধ (১৮৮২)

২. দ্রৌপদী স্বয়ম্বর (১৮৮৪)

৩. রাজসূর্য যজ্ঞ (১৮৮৫)

৪. প্রভাস মিলন (১৮৮৭)

৫. পরিক্ষিতের ব্রাহ্মশাপ (১৮৮৯)

৬. ধ্রুব (১৮৯৫)

 

  • বাংলা পৌরাণিক নাটকের ধারাকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছিলেন মনমোহন বসু। তিনি ছিলেন একজন গীতিকার। তাই তাঁর নাটক গীতবহুল। অজিত কুমার ঘোষ তাঁর "বাংলা নাটকের ইতিহাস" গ্রন্থে মনমোহন বসুর নাটক গুলি সম্পর্কে বলেছেন -

"মনমোহন বসুর নাটকগুলি আলোচনা করিলে মনে হয় যে খাঁটি নাটক অপেক্ষা এইগুলিকে গীতাভিনয় নাম দেওয়া অধিকতর সঙ্গত"।


মনমোহন বসুর রচিত পৌরাণিক নাটকগুলি হল -

১. রামের অধিবাস ও বনবাস (১৮৬৭)

২. সতী (১৮৭৩)

৩. হরিশচন্দ্র (১৮৭৫)

৪. পার্থ পরাজয় (১৮৮১)

৫. রাসলীলা (১৮৮৯)

৬. আনন্দময় (১৮৯০)

 


  • গিরিশ ঘোষের সিদ্ধি মূলত পৌরাণিক নাটক রচনায়। গিরিশ ঘোষের পৌরাণিক নাটকের সংখ্যা অসংখ্য। তাঁর প্রথম পৌরাণিক নাটক "রাবণ বধ"। এই নাটক রচনা করে লেখক প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন এবং এতে উৎসাহিত হয়ে তিনি রচনা করলেন পৌরাণিক নাটক "সীতার বনবাস"। বনবাসিনী সীতার অশ্রু জলের প্লাবনে বাঙালি মহিলারাও সেদিন ভেসে গিয়েছিলেন এবং তাঁর থিয়েটারে মহিলারা দর্শক হিসেবে আসতে শুরু করলেন। ইতিপূর্বে বাংলা রঙ্গালয়ে ভদ্র ঘরের মহিলারা দর্শক হিসেবে খুব বেশি আসতেন না। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে অহীন্দ্র চৌধুরী তাঁর "নাট্য বিবর্ধনে গিরিশচন্দ্র" গ্রন্থে লিখেছেন -

"সীতার বনবাসই প্রথম বাংলার মা জননীদের নাট্যশালায় অভিনয় দর্শনে আগমনের জন্য সমস্ত দ্বিধা সংকোচের দ্বারা উন্মুক্ত করে দিল"।


গিরিশ ঘোষ রচিত উল্লেখযোগ্য পৌরাণিক নাটক -

১. রাবণবধ (১৮৮১)
২. অভিমন্যু বধ (১৮৮১)
৩. সীতার বিবাহ (১৮৮২)
৪. সীতার বনবাস (১৮৮২)
৫. সীতাহরণ (১৮৮২)
৬. পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস (১৮৮৩)
৭. জনা (১৯৯৪)
৮. পাণ্ডব গৌরব (১৯০০)

গিরিশ ঘোষের পৌরাণিক নাটকের ভক্তি রসের প্রাবল্যে উনিশ শতকের আপামর বাঙালি সেদিন ভেসে গিয়েছিল।

 

  • গিরিশচন্দ্রের সময় কালে রাজকৃষ্ণ রায় পৌরাণিক নাটকের ধারাকে পরিপুষ্ট করেছেন। তাঁর রচিত পৌরাণিক নাটক গুলি হল -

১. তরণীসেন বধ

২. ভীমের শরশয্যা

৩. রামের বনবাস

৪. হরধনুর্ভঙ্গ (১৮৭৮, বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত)

৫. দ্বাদশ গোপাল (১৮৭৮)

৬. অনলে বিজলী (১৮৭৮) 

৭. যদুবংশ ধ্বংস (১৮৮৩, বেঙ্গল থিয়েটারে অভিনীত)

৮. প্রহ্লাদ চরিত্র (১৮৮৪)

৯. নরমেধ যজ্ঞ (১৮৯১)

 


  • এর পরবর্তী সময়ে অমৃতলাল বসু থিয়েটারের দাবীকে অস্বীকার করতে পারেননি। তাই তিনিও দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী পৌরাণিক নাটক রচনায় কলম ধরেছেন।

অমৃতলাল বসু রচিত পৌরাণিক নাটক -

১. হরিশ্চন্দ্র (১৮৯৯)

২. যাজ্ঞসেনী (১৯২৮)

তিনি তাঁর "হরিশ্চন্দ্র" (১৮৯৯) নাটকটি ক্ষেমীশ্বরের "চণ্ড কৌশিক" নাটক অবলম্বনে রচনা করেন। "যাজ্ঞসেনী" (১৯২৮) মহাভারতের কৌরব ও পাণ্ডবদের বিবাদ কাহিনীর মূল উপজীব্য। এই নাটকটি অমৃতলাল বসুর সার্থক পৌরাণিক নাটক।

 

গিরিশ যুগে অপ্রধান পৌরাণিক নাট্যকার -

  • গিরিশ যুগে আরও অনেক অপ্রধান নাট্যকার পৌরাণিক বিষয় নিয়ে নাটক রচনা করেছেন। নিম্নে তাদের একটি তালিকা দেওয়া হল -

১. কালিদাস সান্যাল - নলদময়ন্তী

২. দুর্গাদাস কর - স্বর্ণ কমল

৩. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় - জয়দ্রথ বধ

৪. নন্দলাল রায় - অর্জুন বধ

৫. মহেশচন্দ্র দাশগুপ্ত - অভিমুন্য বধ

৬. নিমাই চাঁদ শীল - ধ্রব চরিত্র



  • বিশ শতকে এসে উনিশ শতকের পৌরাণিক নাটকের জনপ্রিয়তার প্রাবল্য মন্থর হয়ে পড়ে। বিশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বয়কট, স্বদেশী আন্দোলন প্রভৃতি জাতীয় জীবনে যে প্রবল ভাবাবেগ সৃষ্টি করেছিল সেখানে দাঁড়িয়ে নাট্যকারেরা নাটকের মধ্য দিয়ে স্বদেশ প্রেমের উত্তেজনাকে কাজে লাগালেন। তাই বিশ শতকে ঐতিহাসিক নাটক রচনায় ঝোঁক বেশি। অবশ্য পৌরাণিক নাটক এই সময় যে রচিত হয়নি তা নয়। বিশ শতকের সূচনায় ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ কিছু পৌরাণিক নাটক রচনা করেছিলেন।

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ রচিত পৌরাণিক নাটক -

১. প্রেমাঞ্জলি (১৮৯৬)

২. বভ্রুবাহন (১৯০০)

৩. সাবিত্রী (১৯০২)

৪. দুর্গা (১৯০৯)

৫. ভীষ্ম (১৯১৩)

৬. উলুপী (১৯১৩)

৭. রামানুজ (১৯১৬)

৮. মন্দাকিনী (১৯২১)

৯. বিদূরথ (১৯২৩)

১০. নরনারায়ণ (১৯২৬)

ক্ষীরোদ প্রসাদের "ভীষ্ম" নাটকটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের "ভীষ্ম" নাটকের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। অবশ্য নাট্যগুনে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকটি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। "উলুপী" নাটকের বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছে মহাভারতের অশ্বমেধ পর্ব থেকে। ক্ষীরোদ প্রসাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক "নরনারায়ণ"। নাটকটি শুরু হয়েছে কর্ণের ব্রাহ্ম শাপ প্রাপ্তি থেকে এবং কর্ণের মৃত্যুতে নাটকের সমাপ্তি। নাটকের নামকরণে অর্জুন ও কৃষ্ণ প্রাধান্য পেলেও নাটকের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কর্ণ।

 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত পৌরাণিক নাটক -

১. পাষাণী (১৯০০)

২. সীতা (১৯০৮)

৩. ভীষ্ম (১৯১৪)

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আধুনিক জীবন দৃষ্টিতে পৌরাণিক চরিত্রগুলিকে দেখেছেন এবং সেই ভাবেই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। "পাষাণী" (১৯০০) নাটকে গৌতম পত্নী অহল্যার কামনা-বাসনা প্রবৃত্তির তাড়না আধুনিক নারীর অতৃপ্ত কামনার ভাবনাকেই চিত্রিত করেছেন। “সীতা” (১৯০৮) নাটকে সীতা চরিত্রে পরলোকগতা পত্নীর এবং রাম চরিত্রে নাটকের নিজ হৃদয়ের আর্তি প্রকাশিত।

 


  • পৌরাণিক নাটক রচনায় অপরেশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তার সর্বপ্রথম মৌলিক পৌরাণিক নাটক "কর্ণাজুন" (১৯২৩)। "কর্ণাজুন" (১৯২৩) -এর পর তিনি "শ্রীকৃষ্ণ" নামে একটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন। কংস বধ থেকে আরম্ভ করে শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাগ পর্যন্ত কাহিনী নাটকটির উপজীব্য। পরবর্তীকালে তিনি "শ্রী রামচন্দ্র" নামে আরও একটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন। তার রচিত অন্যান্য পৌরাণিক নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য "শকুন্তলা", "পুষ্পাদিত্য" ইত্যাদি।

 

  • মন্মথ রায় বেশ কিছু পৌরাণিক নাটক রচনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯২৭ সালে পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত তাঁর প্রথম নাটক “চাঁদ সওদাগর” প্রকাশিত হয়। নাটকটি পৌরাণিক হলেও এতে আধুনিক জীবন-সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে।

মন্মথ রায়ের রচিত পৌরাণিক নাটক -

১. চাঁদ সওদাগর (১৯২৭)

২. দেবাসুর (১৯২৮)

৩. কারাগার (১৯৩০)

তবে মন্মথ রায়ের পৌরাণিক নাটক গুলিকে খাঁটি পৌরাণিক নাটক বলা যায় না। কারণ পুরাণের কোন বিশেষ ঘটনা বা কাহিনী ব্যতীত পৌরাণিক ভাব, আদর্শ, নীতি ফুটে ওঠেনি। তাঁর "দেবাসুর" (১৯২৮) ও "কারাগার" (১৯৩০) নাট্যকে পৌরাণিক ঘটনার সাথে সাথে রাজনৈতিক ভাবনারও প্রকাশ ঘটেছে।

 

  • পৌরাণিক নাটক রচনার মধ্যে দিয়ে নাট্যকার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরীর আবির্ভাব। তার প্রথম পৌরাণিক নাটক "সীতা"। এই নাটক রচনা ও অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। শিশির কুমার ভাদুড়ীর অনুপ্রেরণায় তিনি এই নাটকটি রচনা করেন। অবশ্য এই নাটকটির অভিনয় দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকটি মোটেই পছন্দ হয়নি। পরবর্তীকালে তিনি "রাবণ" নামে আরও একটি পৌরাণিক নাটক রচনা করেন।

 

  • মন্মথ রায়ের পর থেকে বাংলা পৌরাণিক নাটক রচনায় ভাঁটা পড়তে থাকে। এর জন্য অবশ্যই দায়ী দেশকাল সমাজ পটভূমি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত শেষ হতে না হতে আর একটা মহাযুদ্ধ সারা বিশ্বব্যাপী অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে নৈরাশ্যের চাকায় পিষ্ট হয়ে মানুষ বড় বেশি বাস্তববাদী হয়ে উঠেছিল। তখন পুরান নয়, ইতিহাস নয়, অতীত নয়, বর্তমান তার কাছে বড় হয়ে উঠেছিল। বর্তমান সমস্যা ও সমস্যা মুক্তির স্বপ্ন দেখতে দেখতে জনগণ বুঝেছিল 'পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি'।

সহায়ক গ্রন্থ:

১. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস - সুকুমার সেন।

২. আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস - তপনকুমার চট্টোপাধ্যায়।

৩. বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস - ক্ষেত্র গুপ্ত।

৪. বাংলা নাটকের ইতিসাসের - অজিত কুমার ঘোষ।

৫. নাট্যতত্ত্ব বিচার - ডঃ দুর্গাশংকর মুখোপাধ্যায়।

৬. বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস - দর্শন চৌধুরী।


আরও পড়ুন -



Thank You

For More Update Visit Our Website Regularly:

www.banglasahitto.in 

Contact Us On:

Mail: contact@banglasahitto.in

To join our FB Page - CLICK HERE.

Post a Comment

1 Comments

  1. তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টের জন্য আপনাকে/আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ....

    ReplyDelete