Subscribe Us

নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ (ভট্টাচার্য) বিদ্যাবিনোদ

বাংলা সাহিত্যে ক্ষীরোদপ্রসাদ || বাংলা নাট্য সাহিত্যে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ || ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ || Kshirode Prasad Vidyavinode ||



নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ (ভট্টাচার্য) বিদ্যাবিনোদ:


জন্ম – ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই এপ্রিল নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) ২৪ পরগণা জেলার খড়দহে জন্মগ্রহণ করেন। নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় –এর সমসাময়িক।

“খড়দহ – রহড়া – অতীত ও বর্তমান” গ্রন্থের লেখক নিখিলরঞ্জন রায় নাট্যকার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন –

“ক্ষীরোদপ্রসাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় না”

পিতা – গুরুচরণ ভট্টাচার্য, ছিলেন গুরুবংশের উত্তরাধিকারী। সংস্কৃত পণ্ডিত হিসেবে তিনি ‘শিরোমণি’ উপাধি লাভ করেন।

ক্ষীরোদপ্রসাদ ভারতীয় ধর্মজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না। তাঁর সহকারী অধ্যাপক বন্ধু মন্মথমোহন বসুবাংলা নাটকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ” গ্রন্থে এই প্রসঙ্গে বলেছেন –

“আধ্যাত্মিক শক্তিতে বিশ্বাস ক্ষীরোদপ্রসাদের জন্মগত ছিল। তিনি এক তান্ত্রিক সাধকের বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার এই পূর্বপুরুষের অলৌকিক শক্তি সম্বন্ধে নানা গল্প শোনা যায় … তাঁহাদের বংশ ব্রাহ্মণের গুরুবংশ, তাঁহার সুশিক্ষিত শাস্ত্রজ্ঞ পিতা ছিলেন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বহু নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের দীক্ষাগুরু”

কৌলিক উপাধি – বন্দ্যোপাধ্যায়।

শিক্ষা জীবন – ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ বছর বয়সে নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) ব্যারাকপুর গভর্ণমেন্ট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন।

এন্ট্রান্স পাশ করার ২ বছর পর ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জেনারেল এসেমব্লীজ ইনস্টিটিউশন থেকে তিনি এফ.এ পাশ করেন।

এরপর ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রোপলিটন কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন নিয়ে বি.এ পাশ করেন।

বি.এ পাশ করার এক বছর পর ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন বিদ্যায় এম.এ পাশ করেন।

কর্মজীবন - পড়াশোনা শেষ করে ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) এসেমব্লীজ ইনস্টিটিউশনে (বর্তমান নাম স্কটিশচার্চ কলেজ) অধ্যাপক রূপে যোগদান করেন।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং অবসর গ্রহণের পর সম্পূর্ণভাবে নাট্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

উপাধি – বিদ্যাবিনোদ। “ব্রভুবাহন” (১৯০০) নাটক রচনা করে তিনি এই উপাধি লাভ করেন।

পত্রিকা সম্পাদনা – ‘অলৌকিক রহস্য’ নামক মাসিক পত্রিকা ১৩১৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস থেকে ৬ মাস অনিয়মিতভাবে তিনি পত্রিকা টি সম্পাদনা করেন।

মৃত্যু – ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ঠা জুলাই মাত্র ৬৫ বছর বয়সে বাঁকুড়া শহরের কাছে বিকনা গ্রামে নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 


আরও পড়ুন - 

ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (Suniti Kumar Chatterjee)



ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) নাটক রচনার ক্ষেত্রে গিরিশচন্দ্র ঘোষের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

 

  • ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) –এর প্রথম রচনা “রাজনৈতিক সন্ন্যাসী” (১৮৮৫)।

দুই খণ্ডে এটি প্রকাশিত হয়।

 

  • ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) গদ্য এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দ উভয় পদ্ধতি তে নাটক রচনা করেন।

 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক):

ফুলশয্যা

১৮৯৪

সপ্তম প্রতিমা

১৯০২

রঘুবীর

১৯০৩

রঞ্জাবতী

১৯০৪

রক্ষঃ ও রমণী

১৯০৭

নিয়তি

১৯১৪

জয়শ্রী

১৯২৬

 


আরও পড়ুন - 

কৃত্তিবাস ওঝা বাংলা রামায়ণের আদি কবি



ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত পৌরাণিক নাটক:

প্রেমাঞ্জলি

১৮৯৬

ব্রভুবাহন

১৯০০

সাবিত্রী

১৯০২

দুর্গা

১৯০৯

উলুপী

১৯১৩

ভীষ্ম

১৯১৩

রামানুজ

১৯১৬

মন্দাকিনী

১৯২১

বিদূরথ

১৯২৩

১০

নরনারায়ণ

১৯২৬

 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত রঙ্গনাট্য:

কবি – কাননিকা

১৮৯৬

আলিবাবা

১৮৯৭

প্রমোদরঞ্জন

১৮৯৮

কুমারী

১৮৯৯

জুলিয়া

১৯০০

কিন্নরী

১৯১৮



আরও পড়ুন - 

জগদীশচন্দ্র বসু - ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী


 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত গীতিনাট্য:

বেদৌরা

১৯০৩

বৃন্দাবন বিলাস

১৯০৪

বাসন্তী

১৯০৮

বরুণা

১৯০৮

দাদা ও দিদি

১৯০৮

ভূতের বেগার

১৯০৮

দৌলতে দুনিয়া

১৯০৯

মিডিয়া

১৯১২

রূপের ডালি

১৯১৩

১০

মিনতি

১৯১৪

১১

রত্নেশ্বরের মন্দির

১৯২২

 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক:

বঙ্গের প্রতাপাদিত্য

১৯০৩

পদ্মিনী

১৯০৬

চাঁদবিবি

১৯০৭

পলাশীর প্রায়শ্চিত

১৯০৭

নন্দকুমার

১৯০৭

অশোক

১৯০৮

বাঙ্গালার মসনদ

১৯১০

খাঁজাহান

১৯১২

আহেরিয়া

১৯১৫

১০

বঙ্গে রাঠোর

১৯১৭

১১

আলমগীর

১৯২২১

১২

গোলকুণ্ডা

১৯২৫

 


আরও পড়ুন - 

সৈয়দ আলাওল : আরাকান রাজসভার কবি



ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত গল্পগ্রন্থ এবং উপন্যাস:

নারায়ণী

১৯০৪

বিরামকুঞ্জ

১৯০৯

পুনরাগমন

১৯১২

নিবেদিতা

১৯১৯

গুহামুখে

১৯২০

পতিতার সিদ্ধি

১৯২৪

 

  • ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে “শ্রীমদ্‌ভগবদগীতা” অনুবাদ করেন।

  • ড. সুকুমার সেন নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) সম্পর্কে বলেছেন –

“ক্ষীরোদপ্রসাদের নাট্যরচনার প্রধান বিশেষত্ব হইতেছে কাহিনির মনোহারিত্ব অর্থাৎ প্লটের গল্পরস। গিরিশচন্দ্র যে ভক্তিরসোচ্ছ্বাসের বন্যা আনিয়েছিলেন ক্ষীরোদপ্রসাদ তাহা প্রতিরোধ করিলেন, নাট্যকাহিনিকে সাধারণ দর্শকের মনোরঞ্জন করিয়া”

 


আরও পড়ুন - 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ



 

  • ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবের উদার ধর্ম বোধ এবং স্বামী বিবেকানন্দের বলিষ্ঠ কর্ম যোগ তাঁর জীবনে প্রভাব বিস্তার করেছিল।

শ্রী অরবিন্দের বিপ্লবী মতবাদ ও দিব্যজীবনের ভাবধারাতেও নাট্যকার অনুপ্রাণিত হন।

 

  • নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) ফিয়োসফিক্যাল সোসাইটির একজন বিশিষ্ট সভ্য ছিলেন।

 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) রচিত নাটকগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা:

ফুলশয্যা” (১৮৯৪) –

মঞ্চাভিনয়ের জন্য তিনি এই নাটক টি রচনা করেন।

ঐতিহাসিক পটভূমিতে এটি রচিত।

নাটক টি ১৮৯৪ সালে ‘এমারেল্ড থিয়েটারে’ অভিনীত হয়।

 

আলিবাবা” (১৮৯৭) –

নাট্যকারের রচিত রঙ্গনাট্য ও গীতিনাট্যগুলির মধ্যে এই নাটক টি শ্রেষ্ঠ।

সঙ্গীতরস এই গীতিনাট্যটি কে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে।

এই নাটক টি এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে একই নামে প্রমথনাথ দাস ১ টি গীতিনাট্য রচনা করেন।

 

বঙ্গের প্রতাপাদিত্য” (১৯০৩) –

এটি নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) –এর প্রথম ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই আগস্ট এই নাটক টি ‘স্টার থিয়েটারে’ প্রথম অভিনীত হয়।

এই নাটক প্রসঙ্গে মন্মথমোহন বসু বলেছেন –

“প্রতাপাদিত্য’ নাটকখানি এক হিসেবে আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাস”।

নাটক টি বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনের দিনে সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বদেশচেতনা জাগ্রত করে।

 


আরও পড়ুন - 

বাংলা সাহিত্যে উৎসর্গকৃত রচনা (দ্বিতীয় পর্ব)



নন্দকুমার” (১৯০৭) –

“বঙ্গের প্রতাপাদিত্য” নাটকের মত জাতীয়তাবাদের প্রচার করেছেন নাট্যকার তাঁর এই নাটকে।

ওয়ারেন্ট হেস্টিংসের সঙ্গে নন্দকুমারের বিবাদের ঐতিহাসিক পটভূমিকায় তিনি এই নাটক টি রচনা করেন।

নাটক টি জনমানসে প্রচার এত বেড়েছিল যে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়ে নাতকটির প্রচার বন্ধ করে দেয়।

 

বাঙ্গালার মসনদ” (১৯১০) –

ঐতিহাসিক নাটক।

আলীবর্দীর বাংলা অধিকারের কাহিনি নিয়ে নাটক টি রচনা করেন।

নাটকের নায়ক সারফরাজ খাঁ।

আহম্মদ এই নাটকের খল চরিত্র।

 

আহেরিয়া” (১৯১৫) –

নাটক টি একটি মিলনাত্মক নাটক।

নাট্যকার তাঁর এই নাটক টি বারহালাঙ্গাইয়ের সঙ্গে ভাট্টিদের বিরোধের উপর ভিত্তি করে রচনা করেন।

 

বঙ্গে রাঠোর” (১৯১৭) –

ক্ষীয়মাণ পাঠান রাজত্বের শেষ সময় অবলম্বনে নাট্যকার এই নাটক টি রচনা করেন।

 


আরও পড়ুন - 

প্রোফেসর শঙ্কুর জীবন পঞ্জি



কিন্নরী” (১৯১৮) –

রোমান্টিক গীতিনাট্য।

স্বপ্ন ও বাস্তবের রসমধুর যুগল রুপ পরিকল্পনা তে নাটক টি সার্থক।

নাকটির মধুর সুর দর্শকের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছিল, তাই নাটক টি বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

 

আলমগীর” (১৯২১) –

এটি নাট্যকারের রচিত বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক।

ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে যুগধর্মে ও নাট্যরসে এই নাটক টি শ্রেষ্ঠ।

এই নাটকটিতে ঔরঙ্গজেবের বিচিত্র চরিত্র দ্বন্দ্বে অভিনয় করেন অভিনেতা আচার্য শিশীরকুমার ভাদুড়ী এবং তাঁর অভিনয় দক্ষতায় নাটক টি কালজয়ী হয়ে উঠেছে।

আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর “বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড)” গ্রন্থে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) –এর এই নাটক প্রসঙ্গে বলেছেন –

“ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচিত কল্পনার এক অপূর্ব রূপমহল” (পৃ – ৩৭৩)।

এই নাটক সম্পর্কে অজিতকুমার ঘোষ তাঁর “বাংলা নাটকের ইতিহাস” গ্রন্থে লিখেছেন –

“ক্ষীরোদপ্রসাদের কীর্তির বিজয় বৈজয়ন্তী” (পৃ – ২৫৭)।

 

নরনারায়ণ” (১৯২৬) –

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক।

নাট্যকার প্রথমে তাঁর এই নাটকটির নামকরণ করেন “কর্ণ”। পরে তিনি নাম টি পরিবর্তন করে করেন “নর- নারায়ণ”।

নাটক টি তিনি স্বামী শিবানন্দের নামে উৎসর্গ করেন।

এই নাটকে কৃষ্ণ ভক্তির চরম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।

নাটক টি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা ডিসেম্বর শিশিরকুমার ভাদুড়ীর প্রযোজনা ও অধ্যক্ষতায় নাটক টি প্রথম অভিনীত হয় ‘নাট্যমন্দির লিমিটেড’ কর্তৃক।

এই নাটকে কর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী, পদ্মাবতীর ভূমিকায় অভিনয় করেন শ্রীমতী কৃষ্ণাভামিনী দেবী এবং দ্রপোদীর ভুমিকায় অভিনয় করেন শ্রীমতী চারুশীলা, পরে শ্রীমতী কঙ্কাবতী।

ড. সুকুমার সেন এই নাটকের কর্ণ চরিত্রের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরকর্ণকুন্তী সংবাদ” –এর প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন।

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) –এর এই নাটক প্রসঙ্গে মন্মথমোহন বসু তাঁর “বাংলা নাটকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ” গ্রন্থে লিখেছেন –

“নবনারায়ণ নাতকটিকে আমাদের পৌরাণিক নাটক সমূহের মধ্যে কৌস্তভমণি সদৃশ্য বলিলেও অন্যায় হবে না। ভাষার মাধুর্য ও বৈশিষ্ট্য এবং মহাভারতীয় চরিত্র ও ঘটনা সমূহের মনোহর ও অভিনব বিশ্লেষণ ইহার নাটকীয় সৌন্দর্য অতি চমৎকারভাবে ফুটাইয়া তুলিয়াছে”

 

ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) তাঁর “ভীষ্ম” নাটক টি স্বামী সারদানন্দ এবং “নর – নারায়ণ” নাটক টি স্বামী শিবানন্দের নামে উৎসর্গ করেন।

 


আরও পড়ুন - 

বাংলা সাহিত্যে নিষিদ্ধ এবং মঞ্চায়নে আপত্তিজনক নাটক



বাংলা সাহিত্যে ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (Kshirode Prasad Vidyavinode) –এর কৃতিত্ব:

১। আশুতোষ ভট্টাচার্য ক্ষীরোদপ্রসাদের কৃতিত্ব আলোচনা প্রসঙ্গে লিখেছেন –

“ক্ষীরোদপ্রসাদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর ভাবাবেগ প্রবণতার পরিবর্তে বিংশ শতাব্দীর বুদ্ধিবাদের বিকাশ দেখা গিয়াছিল, যুক্তি দ্বারা তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করিতে চাহিয়াছেন, তিনি প্রধানতঃ ভাবমার্গ পরিহার করিয়াছেন। সেইজন্য ভাবাবেগের সংযমই তাঁহার নাটকের বৈশিষ্ট্য”

২। কাহিনিরস পরিবেশনে তিনি তাঁর সময় ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যকার।

৩। পৌরাণিক নাটক রচনা তে ক্ষীরোদপ্রসাদের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। বিশেষ করে তাঁর “নর – নারায়ণ” উচ্চাঙ্গের নাটক।

৪। যুগজীবনের আলোকে রচিত পৌরাণিক নাটকগুলি পৌরাণিক নাটকের ধারায় ব্যতিক্রম।

৫। কবিত্বময় সংলাপ ব্যবহারেও ক্ষীরোদপ্রসাদের কৃতিত্ব উল্লেখযোগ্য। যেমন “নর – নারায়ণ” নাটকে বীরধর্ম রক্ষা এবং ভাতৃ স্নেহের তীব্র দ্বন্দ্বে কর্ণের হৃদয়মথিত উক্তি – “মর্ম চায় পরাজয়, সত্য চায় জয়, মনুষ্যত্ব চায় নিষ্ঠুরতা”। কিংবা “তীব্র অভিশাপ অস্ত্রশিক্ষা পূর্ণ হল যেই দিনে লভিলাম মৃত্যু আশীর্বাদ”।


আরও পড়ুন -


To join our FB Page - CLICK HERE.

Post a Comment

0 Comments