রাধারাণী দেবী (Radharani Devi): ছদ্মনামে বই লিখে উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকেই
জন্ম – রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের
৩০ শে নভেম্বর কোচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রূপ দেখে ঠাকুমা কামিনীসুন্দরী দেবী বলেছিলেন –
“এ যে স্বয়ং রাধা গো, রাধারাণী”।
পিতা – আশুতোষ ঘোষ, ছিলেন কোচবিহারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
এবং সাথে সাথে ছিলেন গভীর শিক্ষানুরাগী, সাহিত্যপ্রিয় রবীন্দ্রভক্ত।
মাতা – নারায়ণী দেবী।
শিক্ষা জীবন - রাধারাণী দেবী
(Radharani Devi) ছবিরউন্নিসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে ছাত্রবৃত্তি ও মাইনর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হন।
দাম্পত্য জীবন – মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯১৬
খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরের ২৪ বছর বয়সী ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের
সাথে রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিবাহের কয়েক মাস
পরেই আচমকা এশিয়াটিক ফ্লু তে আক্রান্ত হয়ে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যু হয়। এরপর তিনি
দীর্ঘকাল বৈধব্য পালন করেন।
‘কাব্য – দিপালী’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতেন নরেন্দ্রনাথ দেব। সেই পত্রিকায়
সাহায্যের সূত্রেই রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) এবং নরেন্দ্রনাথ দেবের পরিচয় ঘটে।
এর ৪ বছর পর ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে মে নরেন্দ্রনাথ দেবের সাথে রাধারাণী দেবী
(Radharani Devi) –র দ্বিতীয় বিবাহ সম্পন্ন হয়।
ছদ্মনাম – অপরাজিতা দেবী। এক সন্ধ্যার আড্ডায় রাধারাণী
দেবী (Radharani Devi) –র রচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রমথ চৌধুরী
মন্তব্য করেন –
“… আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের লেখায় তার স্বকীয়তার ছাপ ফুটে উঠল না”।
প্রমথ চৌধুরীর এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমানের জন্য শিলং -এ হাওয়া বদলে গিয়ে জন্ম
হল ‘অপরাজিতা দেবী’র এবং রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) এই ছদ্মনামেই ব্যক্তিগত ছায়াপাতে
শুরু করলেন রচনা। এই ছদ্মনামে ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায়
প্রকাশিত হল তাঁর ২ টি কবিতা।
১৩৩৭ বঙ্গাব্দে ‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামে
“বুকের বীণা” কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থ
টি এই ছদ্মনামে রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামেই তিনি রচনা করেন “পুরবাসিনী”
কাব্যগ্রন্থ টি। ছদ্মনামে কাব্যগ্রন্থ টি রচনা রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) কাব্যগ্রন্থ
টি নিজেকেই উৎসর্গ করে উৎসর্গ অংশে লেখেন – ‘রাধারাণী
দেবী ও নরেন্দ্র দেবের করকমলে’।
সন্তান - রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) প্রথমে পুত্র
সন্তানের জন্ম দিলেও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মের কয়েকদিন পরেই পুত্র সন্তান
টি মারা যায়।
তারপর ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি জন্ম দেন কন্যা সন্তান নবনীতা দেবসেনের
(নবনীতা নাম টি রাখেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। শেষ শয্যায় শুয়ে বড়দা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র কন্যা সন্তানের নাম রেখেছিলেন ‘অনুরাধা’।
পত্রিকা – স্বামী নরেন্দ্র দেবের সম্পাদিত ‘মাসিক পাঠশালা’
পত্রিকায় তিনি সহায়তা করতেন। পত্রিকার শীর্ষে লেখা থাকত –
“পাঠশালার এই আটচালাতে চলবে দেশের মানুষ গড়া”।
মৃত্যু – কলতায় নিজস্ব বাসভবন ‘ভালো – বাসা’য় ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের
৩০ শে নভেম্বর রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জসীমউদ্দিন - বাংলাদেশের মানস কবি |
- ‘মাসিক বসুমতী’ পত্রিকায় রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র প্রথম গল্প “বিমাতা” প্রকাশিত হয় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে।
- রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র প্রথম প্রবন্ধ “পুরুষ” ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
- ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “লীলাকমল” প্রকাশিত হয়।
- ‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামে রচিত রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) -র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “বুকের বীণা” ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
নামে রচিত কাব্যগ্রন্থ:
১ |
লীলাকমল |
১৯২৯ |
২ |
সীঁথিমৌর |
১৯৩২ |
৩ |
বনবিহাগী |
১৯৩৭ |
৪ |
মিলনের মন্ত্রমালা (অনূদিত কাব্য) |
১৯৪৪ |
জগদীশচন্দ্র বসু - ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী |
অপরাজিতা দেবী ছদ্মনামে রচিত কাব্যগ্রন্থ:
১ |
বুকের বীণা |
১৯৩০ |
২ |
আঙিনার ফুল |
১৯৩৪ |
৩ |
পুরবাসিনী |
১৯৩৫ |
৪ |
বিচিত্ররূপিণী |
১৯৩৭ |
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
রচিত গল্পগ্রন্থ:
১ |
বোঝাপড়া |
১৯২০ |
২ |
সুহাসিনী |
১৯৩৮ |
বিজয় গুপ্ত এবং তাঁর রচিত "পদ্মাপুরাণ" |
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ:
১ |
রবীন্দ্রনাথের অন্তঃপুর |
২ |
শরৎচন্দ্র: মানুষ ও শিল্প |
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
–র ছোটদের জন্য রচিত রচনা:
১ |
গল্পের আলপনা |
২ |
নীতি ও গল্প |
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
রচিত প্রবন্ধ:
১ |
পুরুষ |
২ |
সতীত্ব মনুষ্যত্বের সঙ্কোচক না প্রসারক |
৩ |
নারীর ভালোবাসা |
- রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) রচিত “যাদুঘর” (১৯৩০) উপন্যাস টি ‘কল্লোল’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
- স্বামী নরেন্দ্র দেবের সাথে যুগ্ম সম্পাদনায় বাংলা কাব্যসংকলন “কাব্যদীপালি” ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
- রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে পদ্যে লিখে চিঠি পাঠাতেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও উত্তর দিতেন পদ্যেই। রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র “প্রহসিনী” গ্রন্থে সেই সকল পদ্য প্রকাশিত হয়েছে।
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র ছিল ‘বড়দা’র সম্পর্ক। রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অসমাপ্ত উপন্যাস “শেষের পরিচয়” সম্পূর্ণ করেন।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বড়দার জন্ম শতবর্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) “শরৎচন্দ্র বক্তৃতামালা” দিয়েছিলেন। এই বক্তৃতামালা প্রবন্ধরূপ “শরৎচন্দ্র: মানুষ ও শিল্প” নামক প্রবন্ধগ্রন্থ। এই প্রবন্ধগ্রন্থে শরৎ প্রতিভা বিশ্লেষণে বক্তৃতামালা –র গভীর অভিজ্ঞতা ও অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় মেলে।
- রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র শেষ কাব্যগ্রন্থ “বনবিহগী” (১৯৩৮) –র চিত্রাঙ্কন করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নন্দলাল বসু এবং প্রুফ সংশোধন করেছিলেন রাজশেখর বসু।
- রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র প্রথম কাব্যগ্রন্থ “লীলাকমল” (১৯২৯) সম্পর্কে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে এক পত্রে জানিয়েছেন –
“রাধু তোমার ‘লীলাকমলে’র কবিতাগুলি এতই অন্তস্পর্শী, এতই emotional যে, পড়তে পড়তে বার বার ভুল হয়ে যায়, এ তোমার সত্যকার অন্তর থেকে বাস্তবিকই উৎসারিত হয়ে আসছে বুঝি বা! কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালো করে চিনি দিদি! আর যায় হোক, এ তোমার জীবনের বাস্তব – উপলব্ধি থেকে লেখা। কবিতাগুলি অন্য যে – কোন কারুর কাছে জীবন্ত সত্য হয়ে উঠলেও, লেখিকার কাছে কিন্তু এরা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। নিছক কাল্পনিক বিষয়ে এমন গভীর সত্যিকারের মতন করে কী করে লিখতে পারলে ভেবে অবাক হচ্ছি। যে – বেদনা তোমার অকৃত্রিম উপলব্ধির বস্তু নয়, কল্পনার সাহায্যে থেকে আরও করেছো, তাকে এমন করে প্রকাশ করার মধ্যে তোমার কলমের বাহাদুরী যতই থাক, আমি বলব তোমার নিজের বাহাদুরী নেই ভাই”।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ |
রাধারাণী দেবী (Radharani Devi)
–র প্রাপ্ত পুরস্কার:
১। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে
‘ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক’ এবং ‘লীলা পুরস্কার’ লাভ করেন।
২। রাধারাণী দেবী (Radharani Devi) –র “অপরাজিতা রচনাবলীর” জন্য ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কারে’ সন্মানিত করা হয়।
আরও পড়ুন -
To join our FB Page - CLICK HERE.
0 Comments